Total Pageviews

Thursday, July 14, 2011

ক্যানসারের ঝুঁকি ও জীবনযাপন


জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমানো যায়, জেনেছেন বিজ্ঞানীরা। বংশগতি ক্যানসারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিলেও সত্যিকারের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে ক্যানসার হওয়া ঠেকানো যায় অনেকাংশেই।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে ক্যানসারের এক-তৃতীয়াংশ জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
ধূমপান করে থাকলে ছাড়ুন, সিগারেটের, বিড়ির ধোঁয়া থেকে দূরে যান, তামাক-জর্দা চিবাবেন না আমেরিকার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমেরিকায় ফুসফুসের ক্যানসারে যত লোক মারা যায় স্ত্রী ও পুরুষ, তা অন্যান্য ক্যানসারে হত লোকের চেয়ে বেশি, সব ক্যানসারে মৃত্যুর ২৮ শতাংশ, প্রতিবছর ১৬০,০০০ জন লোক। তা কেবল ফুসফুসের ক্যানসার। ধূমপান আরও এক ডজন ক্যানসারের সঙ্গে জড়িত, সবগুলো ক্যানসারে মৃত্যুর ৩০ শতাংশ।
ক্যানসারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো ধূমপান বন্ধ করা বা একেবারেই শুরু না করা একেবারে বন্ধ করতে না পারলেও কমাতে পারলে লাভ আছে। তবে একেবারে বন্ধ করাই ঠিক। তামাক-জর্দা-গুল চিবানোও ক্ষতিকর। এটিও ক্যানসারজনক, মুখগহ্বরের ক্যানসারের বড় ঝুঁকি। ওজন বেশি হলে কমান। শরীরের মধ্যে ওজন বেশি হলে অনেকেই জানেন হূদ্যন্ত্রের ক্ষতি হয়।
প্লেটে বেশি থাকুক উদ্ভিজ্জখাদ্য
নানা ধরনের খাদ্য আছে যা নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার ঠেকায়। যেমন টমেটো, তরমুজ ও অন্যান্য খাদ্যে আছে ‘লাইকোপেন’ যা প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। প্রমাণ আছে। খাবার প্লেটে তাই থাকুক উদ্ভিজ্জ খাদ্য, শ্বেতসারহীন শাকসবজি ও ফল বেশি করে।
তাই AICR-এর পরামর্শ হলো, খাবেন বেশি উদ্ভিজ্জখাদ্য প্রতিদিন—অন্তত ১৪ আউন্স। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ডায়েট, সেন্ট ট্রপেজ ডায়েট, ুিগ্রন ডায়েট—সবই ফল ও সবজির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। ক্যানসার প্রতিরোধক খাদ্য উদ্ভিদখাদ্যবহুল বটে। AICR-এর নতুন প্লেট প্ল্যান হলো: খাবার প্লেটের দুই তৃতীয়াংশজুড়ে থাকবে ফল, সবজি, বিনস ও গোটা শস্য। অন্য এক-তৃতীয়াংশে কচি গোশত, মাছ ও কম চর্বি দুধজাত দ্রব্য।
মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করুন
স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে বললে মদ্য হলো দুই ফলা তলোয়ারের মতো। ক্যানসারের জন্য মদ্যপানের কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। যত পান করবেন, ঝুঁকি তত বেশি। মুখ, গলা ও খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকি। আর সেই সঙ্গে ধূমপান ও কবলে ঝুঁকি হয় ভয়ানক।
অনেকে তাই বলেন, দিনে একবার মাত্র। তবে আমরা বলি, মদ্যপান বর্জনই শ্রেয়।
ঝেড়ে ফেলুন চাপ শরীর ও মন থেকে
চাপ হয়তো সরাসরি ক্যানসার ঘটায় না, তবে এর পরোক্ষ প্রভাব আছে। চাপ বেশি হলে মানুষ অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ে চাপকে সামাল দেওয়ার জন্য।
অতিভোজন হয়, মদে বুঁদ হয় মানুষ, নিজে নিজে নানা ওষুধ খায়, বাড়ে ক্যানসারের ঝুঁকি। তাই চাপ মোকাবিলায় ব্যায়াম, ধ্যানচর্চা, প্রাণায়াম, যোগব্যায়াম, কত উপায় আছে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে, শরীরও থাকে ভালো।
করুন স্ক্রিনিং টেস্ট
বিভিন্ন ক্যানসারের স্ক্রিনিং টেস্ট যেমন ম্যামোগ্রাম, পিএসএ স্ক্রিনিং ক্যানসার রোধ করে না, তবে আগাম শনাক্ত হতে সহায়তা করে, চিকিৎসাযোগ্য পর্যায়ে।
অন্যান্য টেস্ট যেমন প্যাপ স্মিয়ার ও করোনোস্কোপি ক্যানসারপূর্ব পরিবর্তন চিহ্নিত করে, তা এখন চিকিৎসা না হলে জরায়ু ক্যানসার ও কলোন ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। কি কি স্ক্রিপিং টেস্ট কখন করা দরকার সে ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
জেনে নিন শিকড়ের কথা
নিজের পরিবারের ইতিহাসের কথা, রোগ, বৃত্তান্ত, সমস্যার কথা জানা উচিত। তা জানলে নিজের ক্যানসারের ঝুঁকি নিরূপণেও প্রতিরোধে কৌশল টানা সম্ভব।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস,
বারডেম হাসপাতাল,
সাম্মানিক অধ্যাপক,
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes