Total Pageviews

Friday, October 28, 2011

ভাতের মাড় বা ফ্যানের বহু গুণ

অতি সহজলভ্য খরচবিহীন এই ভাতের মাড়কে আমরা নিম্নমানের জিনিস বিবেচনা করে ফেলে দেই। এটা ক্যালোরিসমৃদ্ধ সুষম খাবার বলে বিবেচনা করা যায়। ভাতের বাড় হলো চালের নির্যাস। এই নির্যাস ফেলে দিলে ভাতের কিছু থাকে না। তাই ভাতের মাড় ফেলে না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখা দরকার খাবারে ক্যালসিয়াম বেড়ে গেলে তা ফসফরাস শোষন ক্ষমতা-হ্রাস করে। আবার অধিক ফসফরাস সমৃদ্ধ খাদ্য ক্যালসিয়াম শোষনে বাধা দেয়। এতে ক্যালসিয়াম ঘাটতি হতে বাধ্য। তাই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভারসাম্য রক্ষা করতে ভাতের মাড় অদ্বিতীয়। ভাতের মাড় ক্যান্সার প্রতিরোধক। এতে রয়েছে প্রোটিন, আঁশ ও ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। ভাতের মাড় কোষ্টকাঠিন্য দূর করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, শুধু তা-ই নয়, যাদের উচ্চ রক্সচাপ আছে তারা মাড় না ফেলে জাউ রান্না করে খাবেন। এতে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়াম থাকায় উচ্চ রক্তচাপ কমায়। ভাতের মাড়ে অধিক পরিমাণে গ্লুকোজ আছে বিধায় রক্তে যথেষ্ট শর্করা সরবরাহ করে। ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। যাদের বিভিন্ন প্রকারের আলসার হওয়ার প্রবনতাথাকে তারা নিয়মিত ভাতের মাড়ে সামান্য লবন দিয়ে চামচে তুলে স্যুপের মতো খেলে এই প্রবণতা থাকে না।
ভিটামিন ই নিয়ে এখন উন্নত বিশ্বে যথেষ্ট গবেষনা হচ্ছে। ভাতের মাড়ে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই রয়েছে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এতে আরো রয়েছে টোকোট্রাইনোল যা অত্যন্ত কার্য়কর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ভাতের মাড়ের মধ্যে আরো একটি প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যাকে বলে Oryza Sative Linn । এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও স্টেরয়েড। প্রাকৃতিক স্টেরয়েড আমাদের দেহের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে। এখন বাজারে এই স্টেরয়েড বড়ি পাওয়া যায়। খেলোয়ার ও ক্রীড়াবিদরা তাদের মাংসপেশীকে শক্তিশালী ও অধিক কার্যক্ষম করতে এই বড়ি নিয়ে থাকেন। তবে এ বড়িতে কারো কারো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু ভাতের মাড় খেলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।
চীন ও জাপানে ভাতের মাড় নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে। ২০০৪ সালে চীনের বিজ্ঞানী মি. লিন মাড় ফেলা ও মাড় বিদ্যমান ভাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি গবেষণায় ভাতের মাড়ে জিংক, মেলেনিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও কপার এই ছয়টি উপাদান আবিস্কার করেছেন। ফেলে দেয়া ভাতের মাড়ে তিনি মেলেনিয়াম ২ গুণ, জিংক ৩, আয়রন ১০, ক্যালসিয়াম ৪, ম্যাঙ্গানিজ ১২ এবং কপার ৬ গুন পেয়েছেন। আরো কয়েকটি বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ভাতের মাড়ের অরাইজামোল মানবদেহের ক্ষতিকর LDL কোলেস্টেরল হ্রাস করে এবং HDL অপরিবর্তিত রাখে।
জাপানে মেয়েরা ভাতের মাড় রূপচর্চায় ব্যবহার করে। মুখের ত্বকে ভাতের মাড় লাগালে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় বলে তরা এটা ব্যবহার করে। একটি বিদেশী পত্রিকা বলছে, তারা এক সমীক্ষায় দেখেছে ভাতের মাড় মানবদেহের মেলানিন ছড়িয়ে পড়তে দেয় না। মেলানিনের কারণে মানুষ ফর্সা, কালো বা শ্যামলা হয়। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি দেহে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। আসুন, আমরা ভাতের মাড় ফেলা বন্ধ করে মাড় শুকানো ভাত খাই এবং সুস্থ থাকি। 

Friday, October 14, 2011

যত বেশি ঘাম, তত বেশি সুস্থতা

ঘাম সবার জন্যই একটি বিরক্তিকর বিষয়। আবার অনেক সময় ঘামের মাধ্যমে কোঝা যায় আপনি কতটা পরিশ্রম করেছেন, কতটা ক্লান্ত। এর বেশি কখনোই হয়ত ঘাম নিয়ে এতটা ভাবা হয়নি। কিন্তু ঘাম নিয়েও আছে নানান অবাক করার তথ্য। ঘামের ধরন, উপকারিতা, উৎস সহ আরো অনেক মজার তথ্য জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এক দল গবেষক।
ভিন্নতা আছে নারী-পুরুষের ঘামানোর মধ্যে
নারী-পুরুষ পুরোপুরি ভিন্ন। তাদের দেহ গড়ন ভিন্ন, তাদের মানসিকতা ভিন্ন, তাদের খাদ্যাভাস থেকে শুরু করে ঘামানোর মাত্রাটা পর্যন্ত ভিন্ন।
গবেষকরা দেখেছেন, একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং সমবয়সী একজন নারী একই পরিমাণ কাজ, একই সময় ধরে করছে এবং পরিশ্রম একই পরিমাণ করেছে। কিন্তু তাদের তাদের ঘামানোর মাত্র ছিল ভিন্ন। সেই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ তার সমবয়সী নারীর তুলনায় চারগুণ বেশি ঘাম ঝড়িয়েছে। এই ভিন্নতার পেছনে হরমোন দায়ী বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে তারা এখনো এর নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের এই গবেষণার প্রতিবেদনটি কিছুদিন আগে ‘এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিওলজি’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়।
বেশি ঘাম, মানে সুস্থতা
অনেকেরই ধারণা, বেশি ঘামানো মানে অসুস্থতার লক্ষণ লক্ষণ। কিন্তু এই ধারণাটিকে ভুল বলে উড়িয়ে দিলেন গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, ঘাম বেশি হওয়া মানে হলো আপনি পুরোপুরি ফিট আছেন। যত বেশি ঘাম, তত বেশি সুস্থতা।
এর কারণ হিসেবে গবেষকার বলেছেন, বেশি ঘামানোর মানে হলো আপনি বেশি কাজ করছেন। এর মানে হলো আপনার দেহ যারা কম ঘামায় তাদের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। আর তাই দেহের ভেতরে জমে থাকা পানি ঘামের মাধ্যমে বের হয়ে শরীরকে ঠাণ্ডা করে। এর মাধ্যমে পরিশ্রমের ফলে শরীরের তাপমাত্র বেরে গেলে, ঘাম তা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের ফিট রাখে।
পূর্বসূরিদের প্রভাবও আছে ঘামে
আপনি যদি স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি ঘামান, তাহলে এতে আপনার কোনো হাত নেই। এর জন্য দায়ী আপনার বংশ।
কারণ, গবেষকদের মতে জন্মগতভাবেই মেজর হিস্টোকম্পাটিবেলিটি নামের একটি অনু ঘামানোর মাত্রা এবং ঘাম সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই অনুটি আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পাই আমাদের মা-বাবার কাছ থেকে।
অতিরিক্ত ঘাম
আমরা সাধারণত ঘামাই যখন আবহাওয়া অনেক উত্তপ্ত থাকে, অনেক পরিশ্রমের পর, ভয় পেলে অথবা ভারি কোনো কাপড় পরলে। কিন্তু অনেকেই আছে ওপরের কারণগুলো ছাড়াও অহেতুকই ঘামায়। দেখা যায় ঠাণ্ডা কোনো কক্ষে বসে থাকার পর ঘামছে কারো হাত, পা, মুখ বা বগল।
যদি এমনটা আপনার সঙ্গেও হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটা একটা রোগ। চিকিৎসকদের ভাষায় একে বলে হাইপারহাইড্রোসিস। এই রোগে অধিকাংশ সময়েই মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই ঘামায়। বিশেষ করে হাতের তালু, পায়ের তলা, বগেএবং মুখমন্ডলে অতিরিক্ত এই ঘামের উৎপত্তি হয়। যা অনেকের জন্যই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে এবং ভবিষ্যতে বড় কোনো রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। কারণ সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা করা না হলে এক সময় এই ঘামানোর রোগ পারকিনসনস এবং ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রূপও ধারণ করতে পারে।
ঘাম দুই ধরনের
ঘামেরও আছে ধরন। আমাদের দেহে দুই ধরনের ঘামের উৎপত্তি হয়ে থাকে। একটি হলো একরিন সোয়েট গ্ল্যান্ড, অপরটি অ্যাপোক্রিন সোয়েট গ্ল্যান্ড।
একদিন সোয়েট সোয়েট গ্ল্যান্ড হলো সাধারণ ঘাম, যা শরীর থেকে জমে থাকা পানি গুলো বের করে দেয়। একটানা কাজ বা ব্যায়াম করলে এই ঘাম শরীর থেকে নিঃসরিত হয়।
অন্যদিকে অ্যাপোক্রিন সোয়েট গ্ল্যান্ড হলো, লোমকুপ থেকে যে ঘম নিঃসরিত হয় তা। অর্থাৎ অতিরিক্ত গরমে অথবা দুশ্চিন্তা আমাদের মাথার ত্বক বা বগল ঘামলে যে ঘাম বের হয় তা হলো অ্যাপোক্রিন সোয়াট গ্ল্যান্ড।
বার্তা২৪ ডটনেট

সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর পেয়ারা

ফলের দোকানগুলোতে যে হারে দামি দামি বিদেশি ফল সাজানো থাকে, তাতে দেশি ফলের কদর নেই বলেই মনে হয়। অথচ দেশি অপেক্ষাকৃত সস্তা ফল পেয়ারাই মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর। আর এ তালিকার সবচেয়ে নিচে রয়েছে আনারস। সম্প্রতি এক গবেষণা শেষে ভারতের হায়দরাবাদ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশন-এর বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভারতের বাজারে পাওয়া ১৪টি তাজা ফলে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অঙ্েিডন্টের মাত্রা জানতে বিজ্ঞানীরা এ গবেষণা চালান। এতে দেখা যায়, আপেল, কলা, আনারস, পেঁপে, আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি ফলের চেয়ে পেয়ারা বেশি পুষ্টিগুণ ও অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট সমৃদ্ধ।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, মানবদেহে বেশির ভাগ রোগের কারণ অ্যান্টি-অঙ্েিডন্টের অভাব। ক্যান্সার, বার্ধক্যজনিত দৃষ্টিহীনতাসহ মারাত্মক সব রোগের উৎপত্তি হয় এর অভাবে।
অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট দেহে কোষের সুরক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাঁরা জানান, মানবদেহে অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট ওষুধ আকারে প্রয়োগ না করে অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট সমৃদ্ধ পেয়ারা খেলে তা অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
গবেষকদলের প্রধান ডা. ডি শ্রীরামুলু জানান, যেখানে ১০০ গ্রাম আনারসে ২২ মিলিগ্রাম অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট পাওয়া যায়, সেখানে ১০০ গ্রাম পেয়ারায় অ্যান্টি-অঙ্েিডন্টের পরিমাণ ৪৯৬ মিলিগ্রাম। মানবদেহে অ্যান্টি-অঙ্েিডন্টের ঘাটতি পূরণে ফলের পুষ্টিগুণের ওপর গবেষণা চালাতে গিয়ে অনেক ফলের মধ্যে তাঁরা পেয়ারাতেই সবচেয়ে বেশি অ্যান্টি-অঙ্েিডন্ট খুঁজে পেয়েছেন। এ কারণেই রোগমুক্ত থেকে সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য নিয়মিত পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া।
কালের কন্ঠ

যকৃৎ প্রতিস্থাপন আর লাগবে না!

ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিতে স্টেম সেল যকৃতে সক্রিয় কোষ তৈরি করবে। ফলে যকৃত্ প্রতিস্থাপনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ও এর বিপুল ব্যয় কমানো সম্ভব হবে। গত বুধবার একটি জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।
স্যাংগার ইনস্টিটিউট ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ গবেষণা করেছেন। তাঁরা ত্বকের অংশ থেকে সংগৃহীত কোষকে বিশেষ পদ্ধতিতে পরিবর্তিত করে নতুন স্টেম সেল তৈরি করেছেন। এই স্টেম সেলই যকৃতে সক্রিয় কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর এ পরীক্ষা করে সফল হয়েছেন।
স্যাংগার ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যালান ব্রাডলি বলেছেন, ‘রোগীর শরীরের ত্রুটিপূর্ণ জিনকে উদ্দেশ করেই এ পদ্ধতি তৈরি করার চেষ্টা করেছি। এটা আমাদের প্রথম ধাপ। কিন্তু যদি এ কৌশল পুরোপুরি চিকিত্সার জন্য নেওয়া হয় তাহলে রোগীদের জন্য আরও ভালো কিছু করার সম্ভাবনা আছে।’
শরীরের প্রধানতম কোষ হলো স্টেম সেল। আর এই স্টেম সেলই হচ্ছে শরীরের অন্য সব কোষের মূল উত্স। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মাধ্যমে অন্ধত্ব, মেরুদণ্ডের সমস্যা ও অন্যান্য স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত কোষের চিকিত্সা সম্ভব হবে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডভান্সড সেল টেকনোলজির রবার্ট লানজারের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল চামড়া বা রক্ত থেকে প্রাপ্ত স্টেম সেল (আইপিএস) এবং ভ্রূণ থেকে প্রাপ্ত স্টেম সেলের মধ্যে তুলনামূলক গবেষণা করে বলেছে, আইপিএস সেল খুব তাড়াতাড়ি মরে যায়। আর এটার বৃদ্ধিও খুব ধীরে হয়।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লুডোভিক ভেলিয়ার বলেছেন, ‘প্রথম পদক্ষেপেই আমরা সেল থেরাপির মাধ্যমে যকৃতের সমস্যা সমাধান নিয়ে কাজ করেছি। এটাকে সফল করতে আমরা এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আছি।’
গবেষকেরা বলছেন, তাঁরা যদি এ ক্ষেত্রে সফল হন তাহলে লিভার প্রতিস্থাপন জটিলতা ও ব্যয়ভার এবং সারা বছর ওষুধ নেওয়ার ঝামেলা অনেক কমে যাবে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক দলের সদস্য ডেভিড লোমাস বলেছেন, ‘আমরা যদি যকৃতে নতুন কোষ তৈরির জন্য রোগীর নিজের চামড়া কোষ থেকেই নিতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে যকৃত্ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিরোধ করা যাবে।’ রয়টার্স। prothom-alo

'চকলেট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়'

যারা চকলেট বেশি খায় তাদের স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি কম বলে জানিয়েছে সুইজারল্যান্ডের একদল গবেষক। প্রায় ৩৩ হাজারেরও বেশি নারীর ওপর জরিপ চালিয়ে তারা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন।

জার্নাল অব দি আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজিতে এ জরিপভিত্তিক এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

হৃদপিন্ডের সুস্থতার সঙ্গে কোকোয়া গ্রহণের সম্পর্ক বিষয়ে আরো প্রমাণ জড়ো করেছে এ গবেষণাটি। তবে অধিক পরিমাণে চকলেট খাওয়ার ব্যাপারে অবাধ অনুমতি দেন নি গবেষকরা।

স্টকহোমের ক্যারোলিনস্কা ইন্সস্টিটিউটের সুজানা লারসন বলেন, চকলেট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়- এ গবেষণায় তা পুরোপুরি প্রমাণিত হয় নি। তবে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে এর কিছু উপকারিতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

অত্যাধিক চকলেট খাওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, চকলেটে চর্বি ও চিনি থাকায় এতে উচ্চ পরিমাণে ক্যালোরিও রয়েছে। তবে মিল্ক চকলেটের তুলনায় কোকোয়ার পরিমাণ বেশি এবং চিনি ও চর্বি কম থাকায়, ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী হয়।

এ গবেষণাটিতে ১৯৯৭ সালে ৪৯ থেকে ৮৩ বছর বয়সী নারীদের চকলেট খাওয়ার হার বিষয়ক উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। এর পরবর্তী দশকে ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫৪৯টি স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে। জরিপে দেখা গেছে, যারা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে চকলেট খেয়েছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি ততোই কমেছে।

এদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪৫ গ্রাম চকলেট গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে বছরে গড়ে প্রতি ১ হাজার জনের মধ্যে ২ দশমিক ৫টি স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে। যারা সপ্তাহে ৮ দশমিক ৯ গ্রাম চকলেট গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে এ হার ছিলো প্রতি বছর ১ হাজার জনের মধ্যে ৭ দশমিক ৪টি।

গবেষকরা বলছেন, চকলেটের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড নামের উপাদান, যা ফ্ল্যাভোনইস নামেও পরিচিত, স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাবই বেশি।

লারসন বলেন, রক্তচাপ, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে এবং রক্তে হৃদপিন্ডের সুস্থতার জন্য দরকারী উপাদানগুলোর সঙ্গে ফ্ল্যাভোনয়েড সম্পর্কিত। তবে এ তথ্যটি এখানো ধারণার পর্যায়ে রয়েছে, এ বাস্তবতা সম্পর্কে আরো গভীর ও বিস্তৃত গবেষণা প্রয়োজন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

বয়স্ক নারীদের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় ভিটামিন

ভিটামিনের কথা উঠলে মনে হতে পারে বেশি বেশি ভিটামিন খাওয়া হয়তো ভালো। কিন্তু গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন অন্য ব্যাপার। বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে ভিটমিনের ব্যবহার মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় বলে দাবি করছেন তারা।

যারা পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ভিটামিন শুধু তাদের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা এবং অতিরিক্তি ভিটামিন খাওয়া ক্ষতির কারণও হতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে।

সাধারণত পুষ্টিমান ঠিক থাকা সত্ত্বেও পঞ্চাশ ও ষাটের কোঠার অনেক নারীই ভিটামিন খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষত মাল্টিভিটামিন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, কপার ও আয়রন মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়।

গবেষকদের বিশ্বাস, ভিটামিন খেলে উপকার হবে এমন কোন প্রমাণ ছাড়াই ভোক্তারা ভিটামিন কিনে থাকে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ইস্টার্ন ফিনল্যান্ডের গবেষক ড. জাকো মুরসু ও তার সহকর্মীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৮ হাজার নারীর ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে যারা গত দু'দশকে ভিটামিন এবং মিনারেল গ্রহণ করেছেন।

এতে দেখা গেছে, অন্যান্য ভিটামিনের তুলনায় আয়রন ট্যাবলেট খেলে মৃত্যুঝুঁকি ২ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ে। তবে এটি নির্ভর করে ট্যাবলেটের ডোজের ওপর। বেশি ডোজের আয়রন ট্যাবলেটের ঝুঁকিও বেশি।

অন্যদিকে, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট মৃত্যুঝুঁকি কমায়। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অযথা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া উচিত না বলে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

যুক্তরাষ্ট্রে স্থুলতার হার কমছে

যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের মুটিয়ে যাওয়ার হার সামান্য হলেও কমতে শুরু করেছে। বাড়ছে স্বাভাবিক ওজনের মানুষের সংখ্যা।

মাত্রাতিরিক্ত ওজন ও স্থূলকায় মার্কিনির সংখ্যা এখনো অনেক বেশি হলেও গত বছর স্বাভাবিক ওজনের মানুষের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে- এমনটিই দেখা গেছে নতুন এক গবেষণায়।

গ্যালাপ-হেলথওয়জ ওয়েল-বিয়িং ইনডেক্স পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছর তৃতীয়ার্ধে স্বাভাবিক ওজনের মার্কিনির সংখ্যা ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আগের বছর এ হার ছিল ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

সংস্থাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে মোটা মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশেরও বেশি।

নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, এ সংখ্যা সামান্য হলেও কমতে শুরু করেছে। এক বছর আগে অতিরিক্ত ওজনধারী মার্কিনির সংখ্যা ৩৬ দশমিক শূন্য থেকে এ বছর কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮ এ। আর মোটার হার গত বছরের ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

গবেষণায় বলা হয়েছে, "বেশিরভাগ মার্কিনি এখনো অতিরিক্ত ওজনধারী কিংবা মোটা হলেও স্থূলতার হার কমে আসার এ লক্ষণ শুভ।"

গবেষণায় এর কারণ সুষ্পষ্টভাবে ব্যখ্যা করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই এই পরিবর্তন ঘটছে।

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনেকেই রেস্টুরেন্টে উচ্চমাত্রার ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার বদলে তুলনামূলক কম খরচে খাওয়া-দাওয়া করছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

অতিরিক্ত টিভি দেখা, বাড়ায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি

হাভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’র (এইচএসপিএইচ) একদল গবেষক সম্প্রতি জানালেন, অতিরিক্ত টিভি দেখলে বাড়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। এর সঙ্গে আরো বাড়ে হৃদরোগ এবং অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা।
সম্প্রতি গবেষকদের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশনে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন দুই ঘণ্টার বেশি টিভি দেখলেই বেড়ে যায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। আর যে ব্যক্তি তিন ঘণ্টার বেশি টিভি দেখে তার অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এই প্রতিবেদনের প্রধান লেখক এবং এইচএসপিএইচ’র এপিডেমিওলজির প্রফেসর ফ্র্যাঙ্ক হু বলেছেন, “অকাল মৃত্যু এবং ডায়াবেটিসের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে টিভি কম দেখা এবং কায়িক পরিশ্রম।”
ফ্র্যাঙ্ক হু এবং তার দল ১৯৭০ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টিভি এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অকাল মৃত্যু নিয়ে প্রকাশিত যত ধরনের প্রতিবেদন আছে সব পর্যবেক্ষণ করেন। তারা আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার এই সংক্রান্ত যত ধরনের রিপোর্ট আছে সবগুলো আবার নতুন করে পর্যবেক্ষণ করেন।
পর্যবেক্ষণের পর গবেষকরা দেখতে পান, অধিকাংশ রিপোর্টেই সেই সব ব্যক্তিরা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয় যারা কায়িক পরিশ্রম করে না। এবং যারা কায়িক পরিশ্রম বিমুখদের সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হচ্ছে টিভি দেখা।
বার্তা২৪ ডটনেট

Tuesday, October 11, 2011

বিশেষজ্ঞের চেম্বার থেকে

পরামর্শ দিয়েছেন মো. গোলাম রব্বানী

মো. গোলাম রব্বানী মো. গোলাম রব্বানী
পরিচালক ও অধ্যাপক, জাতীয়মানসিক স্বাস্থ্যইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
সমস্যা: আমার একমাত্র ছেলের বয়স ছয় বছর। অসম্ভব দুরন্ত। সারা দিন ছোটাছুটি করে। এক মুহূর্ত স্থির হয়ে বসে না। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে সব সময় দৌড়াদৌড়ি করে। বাসার কাজের লোক বা স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে। দুই বছর ধরে স্কুলে যায়, কিন্তু পড়ালেখায় মনোযোগ কম, রেজাল্টও খারাপ। স্কুলের শিক্ষক বলেন, ওকে মানসিক চিকিৎসক দেখাতে। কিন্তু ওর দাদা-দাদি রাজি হন না, তাঁরা বলেন, এটা স্বাভাবিক।
আসলে ওর সমস্যা কি মানসিক? বড় হয়ে গেলে কি ও ঠিক হবে? আমার কী করণীয়?
উম্মে কুলসুম, পূর্ব রাজাবাজার, ঢাকা
পরামর্শ: আপনার সন্তানের লক্ষণগুলো শুনে মনে হচ্ছে সে অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিসঅর্ডার (অতিচঞ্চল শিশু) বলে এক ধরনের সমস্যায় ভুগছে। এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা এই বয়সী শিশুদের হতে পারে। এ সমস্যার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা আছে। উপযুক্ত চিকিৎসা, কাউন্সেলিং আর সাইকোথেরাপির মাধ্যমে তাকে অনেকাংশেই সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
তবে যথার্থ চিকিৎসা না পেলে বড় হলে তার ব্যক্তিত্বের সমস্যাসহ আরও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ঘাবড়ে না গিয়ে আপনি তাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে বা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ‘শিশু বিকাশ ও চিকিৎসা কেন্দ্রে’র বহির্বিভাগে যেকোনো বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে নিয়ে আসুন।

মানসিক স্বাস্থ্যের ভালো-মন্দ

মো. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী

অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, জেরিয়াট্রিক ও অর্গানিক সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

শরীরের ছোটবড় যেকোনো সমস্যায় আমরা ব্যাকুল হয়ে পড়ি, উপস্থিত হই হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু এই রক্ত-মাংসে গড়া শরীর ছাড়াও আমাদের জীবনে যে মন বলে আরেকটি উপাদানের অস্তিত্ব আছে তা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। মনকে বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য নয়। আর মনের স্বাস্থ্যই হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য। মানসিক স্বাস্থ্য, মনের রোগ, মানসিক সমস্যা ইত্যাদি কথা আমাদের সমাজের বেশির ভাগ মানুষই সহজভাবে নিতে চায় না। আরেকটি অপব্যাখা হলো যে মানসিক সমস্যা মানেই অহেতুক উত্তেজিত হওয়া, ভাঙচুর, মারামারি করা, অপরকে আক্রমণ করা। বাস্তবে মানসিক রোগীদের খুব ক্ষুদ্র অংশই এ লক্ষণগুলো প্রকাশ করে। এর বাইরে বেশির ভাগ মানসিক রোগী রয়েছে যাদের লক্ষণগুলো লঘু হলেও তা তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পেশাগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে। অথচ তারা কিন্তু চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে চায় না। তারা মনেই করে না যে তাদের কোনো মানসিক সমস্যা আছে বা আদৌ এর জন্য চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
মূলত মানসিক সমস্যা দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা (সাইকোটিক ডিসঅর্ডার), যেখানে রোগী তার নিজের রোগলক্ষণগুলো সম্পর্কে মোটেই সচেতন থাকে না, তার যে রোগ আছে তা কখনোই স্বীকার করে না। কিন্তু অন্যরা লক্ষ করে। তাদের চিন্তা, আচরণে চরম অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, কোনো যুক্তিতেই তাদের চিন্তা বা আচরণকে সমর্থন করা যায় না। এই গুরুতর মানসিক রোগের মধ্যে আছে সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, ডিল্যুশনাল ডিসঅর্ডার, মেজর ডিপ্রেশন (বিষণ্নতা) ইত্যাদি।
আরেক ধরনের মানসিক সমস্যা রয়েছে মৃদু মানসিক সমস্যা বা নিউরোটিক ডিসঅর্ডার, যেখানে রোগী নিজেই টের পায় যে তার মধ্যে কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা আছে এবং এর থেকে তার পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। যেমন অতি উদ্বেগ (অ্যাংজাইটি), অহেতুক ভয় (ফোবিয়া), কনভার্সন ডিসঅর্ডার, সোমাটোফর্ম ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি।
মানসিক রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ হলো:

চিন্তার অস্বাভাবিকতা: যুক্তিযুক্ত চিন্তা করতে না পারা, অবাস্তব অলীক চিন্তা করা। চিন্তার খেই হারিয়ে ফেলা, এক চিন্তা থেকে দ্রুত সম্পর্কহীন বিষয়ে চিন্তা করা। মনে করা যে চিন্তা চুরি হয়ে যাচ্ছে বা রেডিও-টিভিতে চিন্তা ছড়িয়ে পড়ছে। চিন্তার মধ্যে অন্য কারও চিন্তা অনুপ্রবেশ করছে। চিন্তা ও কথার অসংলগ্নতা।

হ্যালুসিনেশন (অলীক প্রত্যক্ষণ): কোনো ধরনের উদ্দীপনার উপস্থিতি ছাড়াই তা প্রত্যক্ষণ করা। অর্থাৎ ঘরে কেউ নেই অথচ কানে কথা শোনা, সামনে কিছু নেই অথচ কিছু দেখা, গায়ে কিছুর স্পর্শ অনুভব করা।

অহেতুক সন্দেহ: কোনো কারণ ছাড়াই অন্যকে সন্দেহ করা। রোগী মনে করে অন্যরা তার ক্ষতি করতে চায়, তার খাবারে বিষ মেশাতে চায়, তাকে নিয়ে নানা বদনাম রটাতে চায় ইত্যাদি।

বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রিত হওয়া: মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করতে পারে যে তার চিন্তা, আচরণ কোনো কিছুই তার নিজের নয়, অন্য কেউ বা বাইরের কোনো শক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
নিজের সম্পর্কে অতি উঁচু ধারণা: নিজেকে অতিরিক্ত ক্ষমতাধর বলে ভাবা। নিজের ক্ষমতার অতিরিক্ত কোনো কিছু করার চেষ্টা করা। নিজেকে অসম্ভব বড় কোনো চরিত্রে কল্পনা করা।

নিজের সম্পর্কে তুচ্ছ ধারণা: সব সময় মনে করা যে সে খুবই তুচ্ছ। তাকে দিয়ে কিছু হবে না, সে জীবনের সব ক্ষেত্রেই পরাজিত। তীব্র হতাশা। নিজের সম্পর্কে সব সময় নেতিবাচক ধারণা পোষণ করা।

ঘুমের সমস্যা: প্রায় সব ধরনের মানসিক সমস্যায় ঘুমের নানা রকম সমস্যা হয়। ঘুম আসে না, আবার কখনো ঘুমিয়ে গেলে ঘুম ভেঙে যায়। আবার কখনো রোগী মনে করে যে তার ঘুমানোর কোনো দরকার নেই। একটানা কয়েক দিন না ঘুমিয়ে কাটায়। আবার অতিরিক্ত ঘুমও হতে পারে।

খাদ্য গ্রহণের সমস্যা: খিদে কমে যাওয়া, খেতে না চাওয়া, খেলেও বমি করে দেওয়া অথবা অতিরিক্ত পরিমাণে বেশি খাওয়া বা সব সময় ভালো খাবার খেতে জেদ ধরা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। আবার কখনো মিথ্যা সন্দেহের কারণে বিশেষ খাবার গ্রহণ না করা।

এলোমেলো আচরণ: স্বাভাবিক আচরণ না করা। যেমন ময়লায় গড়াগড়ি, অখাদ্য গ্রহণ, সবার সামনে কাপড় খুলে ফেলা, খারাপ কথা বলা ইত্যাদি। আবার কখনো বিনা উসকানিতে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, ভাঙচুর, মারামারি করা ইত্যাদি।

একই কাজ বারবার করা: একই কাজ বারবার করা, একই চিন্তা বারবার মনের মধ্যে আসা। যেমন বারবার হাত ধোয়া, বারবার টাকা গোনা, অনাকাঙ্ক্ষিত চিন্তা বারবার আসা।

অহেতুক ভয়: ভয় মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা, কিন্তু যখন এই ভয় অহেতুক বা অযৌক্তিক হয় তখন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। এই ভয় কোনো বিশেষ বস্তু বা বিষয়ের প্রতি হতে পারে, আবার সার্বিকভাবে সব সময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকতে পারে।

ব্যাখ্যাতীত শারীরিক লক্ষণ: অনেক সময় কিছু শারীরিক লক্ষণ দেখা যায়, যেটার কোনো ব্যাখ্যা বা কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরীক্ষায় শরীরে কোনো রোগের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও যদি শারীরিক লক্ষণ থেকে যায় তবে তা মানসিক কারণে হচ্ছে কি না তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি। যেমন কোনো কারণ ছাড়াই হাত-পা, বুক ব্যথা, মাথাব্যথা, বিনা কারণে বমি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, শরীরের একদিক বা সারা শরীর অবশ ভাব ইত্যাদি।

অসামাজিক আচরণ: সমাজবিরোধী আচরণ বারবার করা, অন্যের সঙ্গে মিশতে না পারা, নিজের ক্ষতি নিজে করা—হাত কাটা, চুল ছেঁড়া ইত্যাদি। পশুপাখিকে বিনা কারণে কষ্ট দেওয়া, হত্যা করা।

আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা: কেউ যদি আত্মহত্যার চিন্তা বা চেষ্টা করে তবে অবশ্যই তার কোনো মানসিক সমস্যা আছে কি না তা যাচাই করে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে যে এসব লক্ষণের বাইরেও অন্যান্য লক্ষণ থাকতে পারে আবার এসব লক্ষণ থাকলেই যে তার মানসিক রোগ আছে তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। একমাত্র মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞই তার রোগ সম্পর্কে চূড়ান্ত মন্তব্য করতে পারেন।

চর্বি কমায় পেঁপে

পেঁপে একটি সর্বজনীন ফল। প্রায় সব ঋতুতেই পেঁপে পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা উভয় পেঁপেই শরীরের জন্য উপকারী। কাঁচা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। এই উপাদানটি প্রোটিন হজমের জন্য সাহায্য করে। তাই প্রচুর পরিমাণে গরু, খাসি বা মুরগির মাংসের সঙ্গে কাঁচা পেঁপে বা রান্না করা পেঁপে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়, মাংসের আমিষ ভালোভাবে রক্তের সঙ্গে মেশে এবং মাংসের চর্বির ক্ষতিকর দিকটা কমিয়ে দেয়। তা ছাড়া মাংসে কাঁচা পেঁপে দিলে তা সিদ্ধ হয় দ্রুত। কাঁচা পেঁপে, শশা, গাজর, লেটুস বা ধনিয়া পাতার সালাদ ওজন কমাতে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পেঁপে যুদ্ধ করে দেহের বাড়তি মেদের বিরুদ্ধে। কাঁচা পেঁপের প্রোটিওলাইটিক এনজাইম ক্যানসার নিরাময়ে রাখে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা। আর এই উপকারের জন্য কাঁচা পেঁপে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়াটাই উত্তম। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’র বসতি পাকা পেঁপেতে। ভিটামিন ‘এ, ও ‘সি’ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যুদ্ধ করে ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে, দাঁত, চুল, ত্বকের জন্য বয়ে আনে সুফল। অ্যান্টি অ্যাজিং ফ্যাক্টর অর্থাৎ বৃদ্ধ বয়সকে দূরে ঠেলে দেওয়ার উপাদান রয়েছে পেঁপেতে। তাই ত্বকের ওপরেও কাজ করে এই ফল। এতে কোনো খারাপ কোলস্টেরল, চর্বি বা ফ্যাট নেই। মোটা মানুষেরা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিক রোগীরা মিষ্টি পেঁপে পরিহার করুন।
ডা. ফারহানা মোবি

 চনমনে হোক মন

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে

মানসিক চাপ কমাতে চাই ভালো বন্ধু, স্বজন ও পরিবার মানসিক চাপ কমাতে চাই ভালো বন্ধু, স্বজন ও পরিবার
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

মন যদি হয় মেঘলা আকাশ। শ্রাবণের মেঘ। হতাশ মন। বিষণ্ন। তখন হয়তো প্রয়োজন হতে পারে পেশাদারি পরামর্শ। কিন্তু তবু এসব উপসর্গ একটু হালকা করতে সামান্য কিছু যদি করা যায়, মন্দ কী? ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, এমনকি পোষা বিড়ালের সঙ্গে খুনসুটি মনমেজাজ হতে পারে চনমনে।
 তুলতুলে মিনিটা বড় বন্ধু। ওকে জড়িয়ে ধরে খেলু খেলু করে মেজাজকে হালকা করেন অনেকে। শুধু তা কেন, অপরের জন্য কাজ করা, একটু খেয়াল করা অন্যদের, মনকে করে হালকা।
 স্মার্ট খাওয়া। তুলে ধরে শরীর মন। মনের সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক বড়ই নিবিড়। স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার মেজাজ ভালো রাখতে বেশ কাজ দেয়। প্রচুর ফল, সবজি, মোটা শস্য উজ্জীবিত করে মনকে, শরীরকেও।
দেখা গেছে বিষণ্ন মনকে হালকা করতে ওমেগা ৩ মেদ-অম্ল ও বি১২ ভিটামিন কাজ দেয়। তৈলাক্ত মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকরিল, টুনাতে আছে সেই মেদ-অম্ল। আমাদের দেশের সামুদ্রিক মাছে। তৈলযুক্ত মাছেও। ফ্ল্যাক্সসিড, বাদাম, সয়াবিন ও গাঢ় সবুজ শাকসবজিতেও।
সিফুড ও চর্বি কম দুধজাত দ্রব্যে আছে বেশ ভিটামিন বি১২। কট্টর নিরামিষভোজী যাঁরা মাছ মাংস একেবারে খান না এঁরা ফর্টিফাইড শস্য, দুধজাত দ্রব্য ও সাপ্লিমেন্ট থেকে পান বি১২।
 মন তোলার জন্য লো-ফ্যাট শর্করা
‘সেরোটনিন’ নামে যে মগজের রাসায়নিক, মন ভালো করার জন্য এর অবদান অস্বীকার করার নয়। শর্করা খেলে মগজে সেরোটনিনের মান বাড়ে। লো-ফ্যাট শর্করা যেমন পপকর্ন, সেঁকা আলু, ক্রাকারস, প্যাস্টা। সবজি, ফল, গোটা শস্য থেকে আসে আঁশ।
 ক্যাফেইন গ্রহণ করতে হবে কম,
দুই কাপ তো হয়েছে। তৃতীয় কাপ কেন? বেশি কফি খেলে মেজাজ যায় বিগড়ে, নার্ভাসও লাগে। উদ্বিগ্ন মনে হয়। তাই সোডা, কফি, কোলা কম গ্রহণ করলে মন ভালো হয়। রাতে ঘুমও হয় ভালো।
 ব্যথা-বেদনার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে বিষণ্নতা, মন খারাপ। তাই ব্যথার চিকিৎসা করলে মনও ভালো হয়।
 চাই ব্যায়াম। ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে ব্যায়াম। সে জন্য ম্যারাথন দৌড় দিতে হবে কেন? রমনার উদ্যানে জীবনসঙ্গী বা বন্ধুর সঙ্গে হাঁটুন ৪০ মিনিট। শরীর মন ভালো হবে। রাতে হবে ভালো ঘুম।
কেবল হাঁটা কেন? দৌড়াতে পারেন। সাইকেল চালানো। গলফ স্কিপিং ব্যাডমিন্টন। টেনিস। সাঁতার। বাগানে কাজ করা। যাই ভালো লাগে উপভোগ করা যায় এমন ব্যায়াম। একসঙ্গে অন্যদের সঙ্গেও ব্যায়াম করতে পারেন। রোদের আলো যেন বেশি পান। জানেন তো গাঢ় অন্ধকার দিনে মন খারাপ লাগে বেশি। রোদ উঠলে স্ফূর্তি। রোদেলা দিনে বের হবেন অবশ্য।
 নিজের সৃজনশীল শক্তি আরও আবিষ্কার করুন। ছবি আঁকা, ছবি তোলা, গান করা, সেলাই ফোঁড়াই, লেখালেখি। মনের অনুভূতিকে নাড়া দেওয়া, অনুভূতিকে প্রকাশ করা। সৃজনশীল কর্ম করলে মন ভালো হয়। নিজের স্বপ্ন, এতে কি যে আনন্দ!
 চাপ ও দুশ্চিন্তা বিষণ্নতাকে আরও গাঢ় করে তোলে। সেরে উঠতে সময় নেয়। মনকে শিথিল করলে রিলাক্স করতে পারলে শান্তি আসে মনে। তাই ধ্যানচর্চা ও যোগ ব্যায়াম। গান শোনা একান্তে। দীর্ঘক্ষণ স্নান।
 সক্রিয়কর্মে ব্রতী হন।
কাজে জড়িয়ে পড়ার মধ্যে মনের আনন্দ। কোনো ভালো কাজে। একত্রে কয়েকজন মিলে, মন ভালো হবে।
 জীবনে থাকুক বন্ধু, স্বজন
যারা অবলম্বন দেবে দুঃসময়ে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন, স্ফূর্তি করুন। বন্ধের দিন কাটান পরিবারের অন্যদের সঙ্গে। মন ভালো হবে।
 চাই স্বাস্থ্যকর ঘুম।
সুনিদ্রা। নিটোল ঘুমে কাটে মনের মেঘ। রোদ ওঠে ঝিকমিক।
 মদ্যপান ও ধূমপান বর্জন।
দেখবেন মন ভালো হবে।
 বিষণ্নতার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন হলে তাও চালিয়ে যেতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ তো আছেই।

 বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০১১- প্রয়োজন মহৎ উদ্যোগ

মানসিক স্বাস্থ্যকে আর অবহেলা নয়, হতে হবে সচেতন মানসিক স্বাস্থ্যকে আর অবহেলা নয়, হতে হবে সচেতন
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
প্রেষণে: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৯২ সাল থেকে প্রতিবছরের ১০ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। ১৯৯৬ থেকে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ দিবসটিতে একটি করে প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করে আসছে। এ বছরের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মহৎ উদ্যোগ নিন: মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করুন’ (দি গ্রেট পুশ: ইনভেস্টিং ইন মেন্টাল হেলথ)। ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়টির সঙ্গে আমরা কমবেশি পরিচিত হলেও এটিকে এড়িয়ে চলা বা গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা আমাদের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ বা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে খানিক বেশি। অথচ বর্তমান সময়ে সমস্ত পৃথিবীতে প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে। যেকোনো আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের নাগরিক, ধর্ম-বর্ণ ও বয়সনির্বিশেষে মানসিক অসুস্থতার শিকার হতে পারে। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অভিবাসন, মাদকের অপব্যবহার এবং বৈশ্বিক ধ্যানধারণার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকি। বাংলাদেশে মানসিক রোগীর হার হচ্ছে মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ১৬.১ শতাংশ শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮.৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এই বিপুলসংখ্যক মানসিক রোগীর বিপরীতে রয়েছে অপ্রতুল জনবল আর নগণ্য বাজেট বরাদ্দ। বাংলাদেশে ১৫ লাখ মানুষের জন্য গড়ে একজনেরও কম মনোযোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এবং মনোযোগ বিশেষজ্ঞের মধ্যে অধিকাংশই রয়েছেন শহরাঞ্চলে। মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে শয্যার সংখ্যা সরকারি পর্যায়ে মাত্র ৮২৮টি। ২০০৫ সালে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল মোট বরাদ্দের মাত্র শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। অথচ সহস্রাব্দের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্য বাজেটের ৫ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের সুুপারিশ করেছে। মানসিক স্বাস্থ্য খাতে প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশের চিত্রই এক রকম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ শতাংশ রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বাজেটে মানসিক স্বাস্থ্যের কোনো স্থান নেই— ২৫ শতাংশ রাষ্ট্র তাদের স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ১ শতাংশ খরচ করে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে। চিকিৎসাসুবিধা গ্রহণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উন্নত দেশে ৩৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ এবং অনুন্নত দেশে ৭৬ শতাংশ থেকে ৮৫ শতাংশ গুরুতর মানসিক রোগী তাদের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা গ্রহণ করে না। স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে গড়ে প্রতি এক লাখ লোকের জন্য শূন্য দশমিক ০৫ জন মনোরোগবিশেষজ্ঞ ও শূন্য দশমিক ১৬ জন মনোরোগ নার্স আছেন। এ জন্যই এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয়ে বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে মহতী উদ্যোগে শামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই বিনিয়োগ কেবল আর্থিক বিনিয়োগ নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে নীতিনির্ধারক মহলের মেধা আর শ্রমের বিনিয়োগ, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বসাধারণের মনোযোগের বিনিয়োগ। সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে পারি।
১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা স্বাস্থ্যের যে সংজ্ঞা দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, ‘কেবল নিরোগ থাকাটাই স্বাস্থ্য নয়; বরং শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকার নামই স্বাস্থ্য।’ অথচ কার্যত এই সংজ্ঞার খণ্ডিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় প্রতিনিয়ত—কখনো সচেতনভাবে আবার কখনো অসচেতনতায়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটি সীমাবদ্ধ হয়ে ছিল ‘শারীরিক’ অংশটুকুর মধ্যে। তবে আশার কথা এই যে, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেরিতে হলেও বাংলাদেশে ‘মানসিক স্বাস্থ্য’ বিষয়টি ধীরলয়ে প্রবেশ করছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল আঙিনায়।
কিন্তু একুশ শতকের উপযোগী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সবার আগে দরকার বিদ্যমান অসম্পূর্ণ ও খণ্ডিত মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ রূপ প্রদান এবং সে জন্য আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের নীতিমালা প্রণয়ন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে মানসিক স্বাস্থ্যকে আনুপাতিক গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রয়োজনে আলাদা মানসিক স্বাস্থ্যনীতি তৈরি করা দরকার। এ ছাড়া বাংলাদেশে যে অপ্রতুলসংখ্যক মানসিক চিকিৎসক রয়েছেন, তার ঘাটতি মোকাবিলায় আরও দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং পাশাপাশি বিদ্যমান জনশক্তির মানোন্নয়নে প্রয়োজন উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। মাঠপর্যায়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও বেশি মানসিক রোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। সাধারণ শিক্ষার হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যশিক্ষায় মানসিক বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং চিকিৎসাশিক্ষার বিভিন্ন স্তরে মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যকে নিয়ে আসতে হবে প্রথম সারিতে। মানসিক রোগীর পরিবারের সদস্য ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে মানসিক রোগ ও এর প্রতিকার-সংক্রান্ত বিষয়ে।
জনগণের দোরগোড়ায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রয়োজন ‘কম্যুনিটি মেন্টাল হেলথ সার্ভিস’, যার অর্থ হচ্ছে কেবল হাসপাতালে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয় বরং এই সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে ন্যূনতম মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো তৈরি করা। মানসিক স্বাস্থ্য খাতে ‘অধিকতর’ বরাদ্দের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন ‘ন্যায্য’ বরাদ্দ। রোগ ও রোগীর চাহিদা অনুযায়ী যথাযথ শ্রম, মেধা, মনোযোগ আর অর্থের বরাদ্দ প্রয়োজন। নাই নাই করেও বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অর্জন নেহাত কম নয়। প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে আলাদা দুটি জরিপের মাধ্যমে মানসিক সমস্যা, অটিজম, মৃগী আর মাদকাসক্তির প্রকোপ নির্ধারণ করা হয়েছে। মৃগী রোগের ট্রিটমেন্ট গ্যাপবিষয়ক গবেষণা, আন্তদেশীয় বিষণ্নতা পরিমাপক বিষয়ে গবেষণা, গ্লোবাল অ্যালকোহল সার্ভে ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গবেষণা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জাতীয় নীতিমালা কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে, বিদ্যমান রয়েছে মাদকাসক্তি আইন। কেবল অসহায় মানসিক রোগীদের মানবাধিকার, চিকিৎসা, চাকরি ও অধিকার সংরক্ষণ বিধিমালাসংবলিত মানসিক স্বাস্থ্য আইনটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রায় সাতটি জাতীয় পর্যায়ের গাইড বই প্রণয়ন করা হয়েছে, যার আলোকে চিকিৎসক, সেবিকা, স্বাস্থ্যকর্মীসহ নানা পর্যায়ে কর্মরত জনশক্তি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারছে। কিন্তু এসব কার্যক্রম আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজন ‘মহৎ উদ্যোগ’। আর এই মহৎ উদ্যোগের ভার কেবল সরকার বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের ওপর চাপিয়ে রাখলে চলবে না, প্রত্যেক সাধারণ মানুষকে তাদের নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনে অংশ নিতে হবে। মানসিক রোগীকে অবহেলা করে নয়, সমাজ থেকে লুকিয়ে রেখে নয় বরং বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসাসেবার আওতায় যত দ্রুত সম্ভব তাকে নিয়ে এসে রাষ্ট্রের উৎপাদশীলতায় তাকে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

Monday, October 10, 2011

মাথার চুল

ল্প বয়সেই আজকাল মানুষের চুল পেকে যাচ্ছে। এতে কম বয়সী কোন তরুণ, যুবক বা তরুণী, যুবতীকে বুড়ো বা বুড়িদের মতো দেখায়। এ নিয়ে তো অনেকের চিন্তার শেষ নেই। তবে এমন ব্যক্তিদের জন্য সুখবর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা আবিষ্কার করেছেন একটি বিস্ময়কর পিল, এ পিল খেলে চুল সাদা হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য সান। এতে বলা হয়েছে, যাদের চুল এখনও কালো আছে তারা যদি ওই পিলটি সেবন করেন তাহলে চিরদিনই তাদের চুল কালো থাকবে। এমন তাক লাগানো কথা বলেছেন কসমেটিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ল’রেল-এর বিশেষজ্ঞরা। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, প্রতিদিন একবার এ পিল সেবন তেমন ব্যয়বহুল হবে না। পিলটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক। কারণ, এটি প্রস্তুত করা হয়েছে ফলের নির্যাস থেকে।
ল’রেলের চুল বিষয়ক প্রধান ব্রুনো বার্নার্ড বলেছেন, তাদের চুল সাদা হয়ে যাওয়ার আগে থেকেই এ পিলটি ব্যবহার করতে হবে। তবে ইচ্ছা হলেও আপনি এখনই এ পিলটি পাবেন না। এজন্য ল’রেল ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছে। বলেছেন, ২০১৫ সাল নাগাদ তারা পিলটি বাজারজাত করবে। তারপরও এ পিলটি সেবন করার সঙ্গে সঙ্গেই চুল কালো হয়ে যাবে না। পিলটি সেবনের ১০ বছর বা তারও বেশি সময় নেবে কাজ করতে। কারণ, পাকা চুলকে কালো করতে পিলটির এমনই সময় লাগবে। গবেষকরা বলেছেন, ওই পিলটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ফলের নির্যাস থেকে, যার রাসায়নিক নাম দেয়া হয়েছে টাইরোসিনাসে রিলেটেড প্রোটিন-২ বা টিআরপি-২।

Saturday, October 8, 2011

পায়ের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম

ছবি ১ ছবি ২
প্রিয় পাঠক, সালাম ও শুভেচ্ছা|কেমন আছেন সবাই? যেমনি থাকুন,নিজের দিকে নজর দিন|নিয়মিত ব্যায়াম করুন|নিয়মিত ব্যায়ামই আপনাকে দিবে ভালো থাকার নিশ্চয়তা| আগের পোস্ট গুলোতে কার্ডিও ব্যায়াম, হাঁটার নিয়ম, ওয়েট ট্রেইনিং, অফিসের ব্যায়াম, পেটের ব্যয়াম, স্ট্রেচিং,পুশ আপ, ইত্যাদি ব্যায়ামের কথা বলা হয়েছে|আজকে পায়ের একটি জনপ্রিয় ও অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম-স্কোয়াট(Squat) সম্পর্কে লিখছি|
স্কোয়াট কি?
স্কোয়াট পায়ের একটি অন্যতম ভালো ব্যায়াম|শুধু কার্ডিও করলে ওজন কমে, ঠিক থাকে বা বাড়ে সত্য|কিন্তু আপনি যদি পায়ের নির্দিষ্ট মাসেল গুলোকে সুন্দর সেপ দিতে চান, তবে, এই ধরনের(স্কোয়াট এর মতো)ব্যায়াম গুলো করতে হবে| এটি একটি compound exercise, যা একের বেশি মাসেলের জন্য কাজ করে| পায়ের glutes(পায়ের উপরিভাগে পেছনের দিকের মাসেল), quads(থাই এর সামনের মাসেল) , hamstrings( থাইয়ের পেছনের মাসেল)এবং calves(হাঁটুর নিচে পেছনের মাসেল), লো ব্যাক(মেরুদন্ডের নিচের দিকে ) —এই সব মাসেলে এক সাথে কাজ করে, তাই এটি এত ভালো ব্যায়াম |
এটি একটি স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং ব্যায়াম|কারণ এটি করার সময় শরীরের ওজনকে ওপরে ওঠাতে বা নামাতে শরীরের শক্তি ব্যবহার করা হয়|স্কোয়াট করতে হাঁটু ভেঙ্গে সামনের দিকে হাঁটু থেকে হিপ পর্যন্ত আনা হয়|এটি ওয়েট নিয়ে বা ওয়েট ছাড়া করা যায়|
স্কোয়াট ব্যায়ামে পায়ের মাসেলগুলোকে ব্যবহার করার পাশাপাশি কোমর, পেট, ব্যাক, ঘাড়, হাত ইত্যাদির জন্যও কিছু ব্যায়াম হয়|কারণ, এই গুলোকেও স্কোয়াট এর সময় কাজে লাগানো হয়| তাই স্কোয়াটকে বলা হয় পুরা বডির ব্যায়াম|
কি ভাবে স্কোয়াট করবেন?
  • প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান|কাঁধ,মাথা সোজা,হাত কাঁধ বরাবর সোজা রাখুন|
  • পা হিপের দুই পাশে রেখে, পা দুটো ফাঁকা করুন| খুব বেশিও না বা খুব কম না, আপনার সুবিধা মতো ফাঁক করুন(ছবি ১ এর মতো)|
  • পায়ের পাতা সোজা সামনের দিকে রাখুন| বা শরীরের বাইরের দিকে (সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রী)সামান্য বাঁকানো থাকতে পারে (ছবি ১ এর মতো)|
  • এবং মাথা সোজা সামনের দিকে, দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে|
  • পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখবেন|
  • হাঁটু পায়ের পাতা বরাবর একদম সোজা থাকবে|
  • জোরে নিঃশ্বাস নিন|
  • ধীরে ধীরে হাঁটু সামনের দিকে হিপ সহ ভাঙ্গতে থাকুন ও মেঝের দিকে নামতে থাকুন| মনে করুন আপনি পা ফাঁক করে চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন(ছবি ২ এর মতো)|
  • এই সময়ে শরীর থাকবে উপরের দিকে একদম সোজা, বিশেষ করে মেরুদন্ড(ব্যাক) একদম সোজা থাকতেই হবে|
  • হাঁটু নামার সময় পায়ের পাতার বাইরে সামনের দিকে যাবে|
  • শরীর নামবে সর্বোচ্চ ৯০ কোন পর্যন্ত| শরীরের ও পায়ের মাঝের কোন হিসাব করুন|অথবা হিপ ও থাই থাকবে মেঝের সাথে সমান্তরাল|
  • শরীরের ব্যালান্স ঠিক রাখতে হাত দুটো সামনে শরীর থেকে বাইরের দিকে কাঁধ বরাবর রাখতে পারেন|(ছবি ২ এর মতো)|
  • এখন আপনার আপার বডি খুব সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে থাকবে(ছবি ২ এর মতো)এবং হিপ পেছনের দিকে নামবে|
  • এই অবস্থায় ১২-১৬ গুনুন|
  • এখন আপনি আপনার হাঁটু থেকে হিপ পর্যন্ত স্ট্রেচ অনুভব করবেন|
  • শ্বাস থাকবে স্বাভাবিক
  • এইবার আবার উপরে উঠুন বা আগের অবস্থায় আসুন|মনে করুন আপনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছেন|
  • পুরো স্কোয়াট প্রক্রিয়াটি দেখুন ছবি ৩ এ|
    ছবি ৩
  • উঠার সময় জোরে দম ছাড়ুন|
  • উঠার সময়ও থাই এর মাসেলে চাপ অনুভব করবেন, বা থাই ব্যবহার করতে হবে, চেস্ট দিয়ে উঠবেন না|পায়ের পাতা, কাফ মাসেলেও সামান্য চাপ অনুভব হবে|পেট ভেতরের দিকে টানা থাকবে ও ব্যাক সোজা থাকবে|
  • সুবিধার জন্য পেছনে একটি চেয়ার দিয়ে নিতে পারেন,কিন্তু চেয়ারে বসবেন না|
  • হাঁটুতে বেশি চাপ দিবেন না,হাঁটু পায়ের পাতার চাইতে বাইরের দিকে যাবে না বা নিচের দিকে ঝুকবে না|
  • নামার বা উঠার সময় দুই পায়ের উপর সমান ভাবে চাপ পড়বে|
  • নামার বা উঠার সময় দুই হাঁটুই একই ভাবে থাকবে|
  • বেশি দ্রুত করতে যাবেন না, তাহলে মাসেল পুল হতে পারে|
  • স্কোয়াট শেষে hamstrings ও quadriceps মাসেল গুলোর জন্য হালকা ভাবে স্ট্রেচিং করুন |
নিচের ভিডিওটি দেখুন জানুন কিভাবে স্কোয়াট করবেন 

কিভাবে ও সপ্তাহে কতদিন স্কোয়াট করবেন?
  • এই ব্যায়াম করতে পারেন সপ্তাহে ২/৩ দিন|এক দিন পর পর|কারণ ওই মাসেল গুলোকে পরদিন রেস্ট দিলে ব্যায়াম ভালো ভাবে কাজ করে|
  • ১০-১৬ বার করবেন ১-৩ সেট বা ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ মতো ও আপনার জন্য যেমন দরকার তেমন করে|
  • সবচেয়ে ভালো ফল পেতে কমপক্ষে ৩ সেট করুন|
সাবধানতা:
  • হাঁটু পায়ের পাতা বরাবর থাকবে,হাঁটু উল্টা পাল্টা ভাবে ঘুরিয়ে করতে গেলে ইনজুরি হতে পারে|
  • স্কোয়াট অবস্থায় হিপ হাঁটুর নিচে যাবে না বা হাঁটু নিচের দিকে ঝুঁকবে না|
  • হাঁটু যেনো পায়ের পাতার পেছনে কখনই না যায়|
  • শরীর(বা মেরুদন্ড) সব সময় একদম সোজা থাকবে|
  • পায়ের পাতা মেঝের থেকে উপরে যাবে না|হিল মেঝেতে থাকবে|
  • প্রতিটি ব্যায়ামই করবেন আপনার ফিটনেস লেভেল,বয়স, শারীরিক সমস্যা(যেমন:হাঁটুর সমস্যা, ব্যাক পেইন, অতিরিক্ত ওজন)ইত্তাদির কথা বিবেচনা করে|
  • প্রথম প্রথম আপনি যতটুকু নামাতে পারেন, ততটুকু নামুন| তার বেশি করতে যাবেন না, ধীরে ধীরে বেশি নিচে নামতে চেষ্টা করুন|
  • যে কোনো নতুন ব্যায়াম শুরুর আগে ফিটনেস ট্রেইনার বা ডাক্তারের পরামর্শ মতো করবেন|
  • নিচে নামার ও উপরে উঠার সময় শরীরের ব্যালান্স যেনো ঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন|
  • আপনার ব্যায়াম যেনো সঠিক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন| সঠিক নিয়মে ব্যায়াম না করলে, মাসেল পুল হতে পারে এবং ব্যায়াম কাজ করবে না |
  • স্কোয়াট করার আগে অবশ্যই ভালো মতো শরীর ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে|
  • স্কোয়াট করার সময় ব্যায়াম ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, আপনার পশ্চার ঠিক আছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন|
স্কোয়াট কেন করবেন?
  • পায়ের শক্তি বাড়ায়:পা আমাদের শরীরের সবচাইতে শক্তিশালী অঙ্গ, তাই এই ব্যায়াম করলে পায়ের শক্তি বাড়ে|
  • এই ব্যায়ামে হাঁটু ব্যবহার করায়, হাঁটুর শক্তি বাড়ে ও হাঁটুর ব্যথা কমায়
  • এতে পুরা শরীরের ব্যায়াম হয় ও পুরা শরীরের শক্তি বাড়ে বা ফিটনেস বাড়ে
  • এটি মাসেল সেপ করে, inner ও outer thighs, quads, hamstrings, calves, abs ও buttocks– এই সব মাসেলের শেপ সুন্দর হয়
  • পায়ের মাসেলের শক্তি বাড়ায়
  • পায়ের মাসেল বিল্ড করে:স্কোয়াট মাসেল বিল্ডিং বা বডি বিল্ডিংয়ের জন্যে ও পাওয়ার লিফটিং এর জন্যে করা যায়|বডি বিল্ডিঙে মাসেল তৈরিতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে|
  • শরীরের ব্যালান্স বাড়ে
  • হাঁড়ের শক্তিও বাড়ে|
  • হাঁড়ের ঘনত্ব বাড়ে ও হাঁড়ের ঘনত্ব সঠিক ভাবে ধরে রাখে
  • ফ্যাট বার্ন করে
  • ফ্রি হ্যান্ড স্কোয়াটে কোনো যন্ত্রপাতি লাগে না, তাই মেশিন ছাড়াও স্কোয়াট করার সুবিধা পাওয়া যায়|
  • Posture ঠিক করে
  • শরীরের flexibility বাড়ায়
  • ব্যাক পেইন কমায়|
  • পায়ের মাসেলের শক্তি, ব্যালান্স ও  flexibility বাড়ে| সর্বপরি পায়ের শক্তি বাড়ে|তাই দৈনন্দিন কাজ কর্মে, যেমন: নিচু হয়ে কিছু তুলতে সহজ হয়|
  • এটি পায়ের বা লোয়ার বডির জয়েন্টের টিস্যু গুলোকে বা লিগামেন্ট শক্তিশালী করে|
স্কোয়াটের প্রকারভেদ
স্কোয়াট অনেক রকম হতে পারে, যেমন: ফ্রি হ্যান্ড স্কোয়াট, বারবেল স্কোয়াট, ডাম্বেল স্কোয়াট, ওয়েট মেশিনের সাহায্যে স্কোয়াট(স্মিথ মেশিন, পাওয়ার কেজ ইত্যাদি),জাম্প স্কোয়াট,বল স্কোয়াট, চেয়ার স্কোয়াট ইত্যাদি|জনপ্রিয় কিছু স্কোয়াট হচ্ছে: অলিম্পিক স্কোয়াট, ফ্রন্ট স্কোয়াট, ওভারহেড স্কোয়াট ইত্যাদি|
স্কোয়াটকে বলা হয়—“The ultimate exercise for the lower body” বা “King of leg exercises”.
আপনি যদি শক্তিশালী lower body চান, বা পায়ের মাসেল গুলোকে শক্তিশালী ও ভালো শেপে আনতে চান, তবে এটি অবশ্যই আপনার ব্যায়ামের রুটিনে রাখুন| এটি একটি কষ্টকর ব্যায়াম,কিন্তু আপনি যদি এটি একটু কষ্ট করে চেষ্টা করেন, তবে কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাবেন|
এই পোস্টে শুধুই সাধারণ বা ফ্রি হ্যান্ড স্কোয়াট এর সম্পর্কে বলা হয়েছে|পরবর্তী পোস্টগুলোতে আরো অনেক রকম স্কোয়াট সম্পর্কে দেয়া হবে|
স্কোয়াট সম্পর্কে আপনার আরো কোনো অভিজ্ঞতা, বা মন্তব্য থাকলে তা লিখুন|
এই পোস্টটি ভালো লাগলে, সবার সাথে শেয়ার করুন এবং পোস্টটির রেটিং দিন |
ব্যায়ামের কিছু ভুল ধারণা জানতে ক্লিক করুন |
ব্যায়ামের কিছু  সাধারণ নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন

উৎস: ফিটনেসবিডি

গর্ভকালে ফলিক এসিড খান

বাচ্চা গ্রহণে ইচ্ছুক এবং গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস পর্যন্ত মহিলাদের ফলিক এসিড খেতে হবে। এ ওষুধটি নবজাতকের শারীরিক নানা প্রকার বিকৃতি রোধ করতে সক্ষম। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মুখের তালুর বিভক্তি, ঠোঁটকাটা রোগ বা নাসিকা গহ্বরের অসম্পূর্ণতা। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা দেখেছেন, শিশুদের ঠোঁটকাটা এবং তালুর অসম্পূর্ণতাজনিত রোগের হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস পায়, যদি তাদের মায়েরা গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস নিয়মিত ফলিক এসিড বড়ি গ্রহণ করেন। এমনকি এতে প্রথম প্রসবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হলেও পরবর্তী প্রসবগুলোতে অসুস্থ বাচ্চা জন্ম নেওয়ার হার বহুলাংশে হ্রাস পায়।
স্বল্পমূল্যের এই ওষুধ পাঁচ মিলিগ্রাম মাত্রায় ফলিসন, ফোলবক, ফলিক এসিড, টেরোভিট প্রভৃতি নামে পাওয়া যায়। একমাত্র ভিটামিন বি-১২ স্বল্পতাজনিত অসুখের কথা বাদ দিলে নির্দ্বিধায় ফলিক এসিড গ্রহণ করা যায়। ওষুধটির সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা হচ্ছে তিনটি বড়ি বা ১৫ মিলিগ্রাম প্রতিদিন।
কোনো মহিলা বাচ্চা গ্রহণে ইচ্ছুক হলে তাঁর জন্য উপদেশ হলো, এখনই প্রতিদিন পাঁচ মিলিগ্রাম মাত্রার ফলিক এসিড খেতে শুরু করুন এবং গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখুন। আশা করা যায়, আপনার কোলজুড়ে নেমে আসবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ফুটফুটে এবং অনিন্দ্য সুন্দর একটি শিশু।
ডা. মো. শামীম হুসাইন
প্রভাষক, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।

টাইপ-১ ডায়াবেটিসের নতুন জিন শনাক্ত

ইনসুলিন এক ধরনের হরমোন, যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে শরীর খুবই সামান্য বা একেবারেই ইনসুলিন তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। ফলাফল হলো, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তে থাকে ও টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা দেয়। এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রতিদিন ইনসুলিন নিতে বাধ্য হন।
সম্প্রতি টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায় এমন এক ধরনের জিন গ্রুপের সন্ধান পেয়েছেন ফিলাডেলফিয়া শিশু হাসপাতালের একদল গবেষক। তাঁরা টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১০ হাজার ব্যক্তি ও ডায়াবেটিস নেই এমন ১৭ হাজার ব্যক্তির মধ্যে তুলনা করে উল্লেখযোগ্য ছয়টি বিশাল ডেটাবেইস বানিয়েছেন। ডেটাবেইসগুলোয় ডিএনএ সিকুয়েন্স পরিবর্তনকারী সিঙ্গেল-নিউক্লিওটাইড পলিমর্ফিজম (SNPs)-সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। এসএনপি রোগ তৈরির কোনো জেনেটিক মিউটেশন নয়; বরং এগুলো একেকটি সাইনপোস্টের মতো বিজ্ঞানীদের সতর্ক করে দেয়_নির্দিষ্ট স্থানের জিনদল রোগের জন্য দায়ী। এবার গবেষক দল নতুন তিনটি এসএনপির অবস্থান শনাক্ত করেছে, যা আগে পাওয়া আরো ৫০টির সঙ্গে মিলিয়ে তাঁরা ভাবছেন, এগুলোর সঙ্গেই রয়েছে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক। নতুন গবেষণায় প্রাপ্ত জিনদলের অবস্থান থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এই এসএনপিগুলো পাওয়া গেল। সম্পর্কের বিষয়টি এখনো স্পষ্ট না হলেও বিজ্ঞানীরা অগ্ন্যাশয়ের আইলেট (Islet) কোষে ওই নির্দিষ্ট জিনগুলো পেয়েছে, আর আইলেট কোষই ইনসুলিন তৈরি করে। বিভিন্ন জটিল রোগের মধ্যে টাইপ-১ ডায়াবেটিসের জিনগত গঠনতন্ত্র চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেই আমরা সবচেয়ে বেশি এগিয়েছি, জানান গবেষক স্টুরান গ্রান্ট। তিনি ফিলাডেলফিয়া শিশু হাসপাতালের সেন্টার ফর অ্যাপ্লাইড জেনোমিঙ্রে অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর। প্রাপ্ত তথ্যকে ক্লিনিক্যালি ব্যবহারের জন্য আরো কাজ করতে হবে গবেষকদের, বলেছেন গ্রান্ট।
ইন্টারনেট থেকে জুবায়দা গুলশান আরা

কম ঘুমে পুরুষত্বহীনতা

টেস্টোটেরন পুরুষের হরমোন। এ হরমোনই পুরুষের পুরুষত্বের ধারক-বাহক। পুরুষের সুঠাম দেহের জন্য দায়ী এ হরমোন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর মাত্রা শরীরে কমে যেতে থাকে। ঝুলে পড়ে চামড়া; দেখা দেয় বলিরেখা। শরীরে শক্তি কমে যেতে থাকে। কোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া কষ্টকর হয়। হাঁপিয়ে পড়ে একটুতেই। শুধু তাই নয়, এ হরমোনের মাত্রা কমে গেলে কমে যায় যৌন ক্ষমতা। সম্প্রতি জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, কম ঘুমালে পুরুষের শরীরে টেস্টোটেরনের মাত্রা কমে যায়। গবেষণার জন্য বেশ কিছু যুবককে বাছাই করা হয়। তাদের রক্তে টেস্টোটেরনের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। এক সপ্তাহ বাসায় আট ঘণ্টা করে ঘুমানোর জন্য বলা হয়। এর পর তাদের স্লিপ ল্যাবরেটরিতে প্রথম তিন দিন ১০ ঘণ্টা ও পরের আট দিন ৫ ঘণ্টা করে ঘুমাতে দেওয়া হয়। এর পর তাদের রক্তে টেস্টোটেরনের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। দেখা যায়, এদের এ হরমোন ১০-১৫ ভাগ কমে গেছে। এর মাত্রা কমার কারণে তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। গবেষকরা তাই নিয়মিত আট ঘণ্টা ঘুমানোর জন্য বলেছেন
অোজাদুল কবির আজাদ
রিসার্চ অফিসার, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা
সমকাল

Wednesday, October 5, 2011

আখের পুষ্টিকথা

আখ বা ইক্ষু এই মৌসুমে বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর আঞ্চলিক নাম বিভিন্ন। শর্করা আর চিনিতে পূর্ণ আখ। অতিরিক্ত পরিশ্রমীদের জন্য আখ ভীষণ উপকারী। যাঁরা প্রচুর পরিমাণে শক্তির কাজ করেন (যেমন—রিকশাচালক, দিনমজুর, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, খেলোয়াড়, নৃত্যশিল্পী), তাঁদের জন্য আখের রস বা শরবত যথেষ্ট উপকারী। পরীক্ষার আগে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের মস্তিষ্কের পরিশ্রম হয় বেশি। এক গ্লাস আখের রস বা শরবত মস্তিষ্কে দ্রুত গ্লুকোজ (চিনি) সরবরাহ করে। মস্তিষ্ক থেকে শক্তি তখন সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়। বাড়ন্ত শিশুদের জন্যও আখ জরুরি পথ্য। আখ শিশুদের বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশে রাখে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কারণ, এতে রয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রাকৃতিক চিনি, খনিজ লবণ ও ভিটামিন। অতিরিক্ত জ্বর হওয়ার পরে শরীরে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি হয়। এ ঘাটতি পূরণ করে আখের রস। পর্যাপ্ত আখের রস, প্রচুর বিশ্রাম, আর পানি জন্ডিসকে করে দ্রুত নিরাময়। রাতকানা, চোখ ওঠা, অতিরিক্ত পড়াশোনা করার পরে চোখে জ্বালাপোড়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আখের রস। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আখের রস নিষিদ্ধ। কারণ, এতে রয়েছে পর্যাপ্ত চিনি। বাজারের খোলা জায়গায় আখের রস বিক্রি হয়। এটা পরিহার করাই শ্রেয়।
ফারহানা মোবিন 

 পুষ্টি সমস্যা -বিশেষজ্ঞের চেম্বার থেকে

এস এন শম্পা এস এন শম্পা
পুষ্টি বিশেষজ্ঞ
শমরিতা হাসপাতাল, ঢাকা।

সমস্যা: আমার বয়স ৩৬ বছর। একটি বিদেশি ফার্মে চাকরি করি। বিয়ের আগে খুব হালকা-পাতলা ছিলাম। ইদানীং অনেক মুটিয়ে যাচ্ছি। অফিসে আমাকে প্রায় সারা দিনই বসে কাজ করতে হয়। হাঁটার সময় নেই। রাতে ও সকালে রুটি খাই, কিন্তু মোটা হওয়া রোধ করতে পারছিনা। ঠিক কীভাবে আমার খাদ্যনিয়ন্ত্রণ করা উচিত? উল্লেখ্য, আমার উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি, ওজন ৬৫ কেজি।
দিলরুবা খান, কলাবাগান, ঢাকা।
পরামর্শ: দিলরুবা, আপনার ওজন কমানোর আগ্রহটা অনেক মূল্যবান। আপনার আদর্শওজন ৫৮-৬০ কেজি।আপনাকে পাঁচ-সাত কেজি ওজন কমাতে হবে। আপনি মোট ১০০০-১২০০ ক্যালরি খাবার খাবেন। তেল, চিনি, আলু, ফাস্টফুড, ড্রিংকস কম খাবেন। প্রতিদিন অবশ্যই ৩০ মিনিট হাঁটবেন। দাওয়াতে গেলেখাবার সীমিত খাবেন।

সমস্যা: ওজন কমানোর জন্যপ্রতিদিন খাওয়ার সময়প্রচুর শসা, সালাদ ইত্যাদি খেতে চেষ্টা করি। কিন্তু মুশকিল হলো যে কাঁচা সালাদ ও সবজি খেলেপেটে গ্যাস হয়। কম ক্যালরিযুক্ত কী খাবার খেলে গ্যাস হবে না?
মারিয়া আক্তার, জিন্দাবাজার, সিলেট।
পরামর্শ: প্রচুর কথাটির নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই। তাই কোনো খাবারই প্রচুর খাওয়া যাবে না। খালি পেটে শসা, টকফলখাবেন না। সালাদ ও সবজির সঙ্গে ভাত বা রুটি খাবেন। কাঁচা পেপে, ঠান্ডা দুধ, জাউ ভাত খেলে গ্যাস কমবে। তেলজাতীয় খাবার কম খাবেন। দীর্ঘসময় ধরে না খেয়ে থাকবেন না। ওজন কমাতে নিয়ন্ত্রিত ক্যালরির সুষম খাবার গ্রহণকরুন।

উজ্জীবিত দিনের জন্য

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

দিনে মন-মেজাজ চনমনে রাখতে খাদ্যের ভূমিকা আছে, তা জানেন কজন? অনেকে জানেন। এনার্জিও উজ্জীবিত হয়। কথায় আছে, ‘দিনে একটি আপেল খেলে ডাক্তার থাকে দূরে’। আমরা যা খাই, এর সঙ্গে আমাদের মেজাজ, অনুভূতি—এসবের সম্পর্ক নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। প্রমাণ আছে, খাবারে পরিবর্তন আনলে বিপাককর্ম যায় বদলে, বদলে যায় মগজের রসায়ন; শরীরের এনার্জি মান ও মেজাজ—দুটোই হয় প্রভাবিত।
শুরু হোক: খাদ্য এনার্জির উজ্জীবন ঘটায় তিনভাবে। পর্যাপ্ত ক্যালরি জুগিয়ে, ক্যাফিনের মতো উদ্দীপক সরবরাহ করে, বিপাককর্মকে আরও বেশি জ্বালানি কার্যকরভাবে পোড়াতে সহায়তা করে। মেজাজ প্রসঙ্গে: শ্রেষ্ঠ খাবার হলো সেগুলো, যেগুলো রক্তের সুগারে সুস্থিতি আনে, নিঃসৃত করে সুখানুভূতি উদ্দীপক বস্তুর, যেমন—সেরোটনিন।
স্মার্ট শ্বেতসার: শ্বেতসার-শর্করা নিয়ে ভাবনা, তবে এনার্জি ও মেজাজ উজ্জীবনে এর ভূমিকা বড়। শরীর শ্বেতসারকে দহন করে জ্বালানি পেতে চায়। এ ছাড়া খেলে সেরোটনিন মানও বাড়ে। তাই মিষ্টিমণ্ডা না খেলে হলো, রক্তের সুগার উথাল-পাতাল হবে, তাই মেজাজেরও হবে চড়াই-উতরাই। ক্লান্তি ও বদমেজাজ; বরং গোটা শস্য, তুষ, ছাতু, আটার রুটি, লাল চাল, শস্য হলে হলো। ভালো। শরীর গোটা শস্যকে শোষণ করে ধীরে, তাই রক্তসুগার ও এনার্জি মান থাকে সুস্থিত।
কাজুবাদাম, বাদাম হেজেলনাট: এই বাদামগুলো কেবল যে প্রোটিনসমৃদ্ধ তা-ই নয়, এগুলোতে আছে ম্যাগনেশিয়াম। সুগারকে এনার্জিতে রূপান্তরে এর রয়েছে বড় ভূমিকা। দেখা গেছে, ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি হলে শক্তি নিঃশেষিত হয়। ম্যাগনেশিয়াম আরও আছে গোটা শস্য, তুষ, হ্যালিবাট মাছেও।
ব্রোজিল নাটস: ব্রোজিল নাটস খেলে পাওয়া যাবে খনিজ সেলেনিয়াম। মেজাজ করে চনমনে। সেলেনিয়াম ঘাটতি হলে মেজাজ বিগড়ে যায়। মাংসে, সমুদ্রের খাদ্যে, বিনস ও গোটা শস্যেও আছে সেলেনিয়াম।
কচি মাংস: কচি মোরগ ও অন্যান্য মাংসে আছে, যেমন—কৃষ আমিষ, তেমনি অ্যামিনো এসিড টাইরোসিন। টাইরোসিন ডোপামিন ও নবইপিনেফ্রিন মান উজ্জীবিত করে মগজের এই রাসায়নিক মনকে করে সজাগ ও তীক্ষ। মাংসে আছে ভিটামিন বি১২, অনিদ্রা ও বিষণ্নতায় উপকারী।
সামুদ্রিক মাছ: তৈলাক্ত মাছ, যেমন—স্যামন মাছে আছে ওমেগা৩ মেদ-অম্ল, বিষণ্নতায় উপযোগী। হূৎ স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। বাদাম ও পত্রবহুল সবজিতেও আছে এই মেদ-অম্ল।
পত্রবহুল সবজি
বিষণ্নতা দূর করতে আরেকটি উপকরণ হলো ভিটামিন ‘ফলেট’; আছে পত্রবহুল সবজি, যেমন—পালংশাক, লেটুস-জাতীয় শাকে। ডাল, বাদাম ও কমলাতেও আছে বেশ।
আঁশ: আঁশ এনার্জিতে আনে সুস্থিতি। ধীর করে পরিপাক ক্রিয়া, এনার্জির ধীরস্থির জোগান সহায়তা করে, সারা দিন। বিনস, বাদাম, সবজি, আটার রুটি, ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খান, আঁশ পাবেন।
পানি: নিরুদন ও ক্লান্তি চলে সঙ্গে সঙ্গে। হাত ধরে। এমনকি মৃদু নিরুদনও ধীর করে বিপাক; শুষে নেয় এনার্জি। সমাধান সহজ—প্রচুর পানি পান করুন।
তাজা ফল-সবজি: তরল ভরপুর সবজি খাবেন, খাবেন রসাল ফল। তাহলে সজল থাকা যাবে। প্যাকেট স্ন্যাকস নয়, তাজা ফল। ওটমিল। পায়েস, ফলের রস। শরবত, চিনি ছাড়া।
কফি: বেশ উদ্দীপক। ক্ষণকালের জন্য বেশ কাজের। তবে বেশি পান ঠিক নয়। সন্ধ্যা ও রাতে তো নয়, তাহলে ঘুমে বিঘ্ন হবে।
চা: ক্যাফিনের বিকল্প উৎ স হলো চা। গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে ক্যাফিনও অ্যামিনো এসিড এল থিয়ানিন মনকে সজাগ করে; স্মৃতি উন্নত করে। ব্ল্যাকটি ভালো।
গাঢ় চকলেট: খেলে মগজ হয় চনমনে। ক্যাফিন ও থিওব্রোমিন।
প্রাতরাশ: এনার্জি ও মেজাজ উজ্জীবন করতে হলে প্রাতরাশ বাদ দিলে চলবে না। দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন নিয়মিত প্রাতরাশ খান, তাঁদের সারা দিন থাকে দেহমন শক্তিতে ভরপুর ও চাঙা। গোটাশস্য, আঁশ, ভালো চর্বি, কচি আমিষ—ভালো প্রাতরাশ।
বারবার খাওয়া, কম কম করে: রক্তের সুগার সুস্থিতির জন্য, এনার্জির সুস্থিতির জন্য, মেজাজ চাঙা রাখার জন্য এটি হলো কৌশল।
তিন থেকে চার ঘণ্টা পর ছোট ছোট খাবার বা নাশতা খাবেন, দিনে তিনবেলা বড় খাবার না খেয়ে, ভূরিভোজন না করে। স্ন্যাকস হতে পারে পিনাট বাটার, গোটা শস্য ক্যাকারস, কচি গোশত ও সালাদ। গোটা শস্য দুধ।
এনার্জি ড্রিংক ও জেল তেমন ভালো নয়।
ব্যায়াম করুন এনার্জির জন্য: জোরে হাঁটা আধাঘণ্টা, সাইকেল চালানো—কত ব্যায়াম, যা সয়ে যায়।

শিশুর স্থূলতাও ভালো নয়

ছবিটি প্রতীকী। সব শিশুর জন্য চাই এমন উন্মুক্ত খেলাধুলার পরিবেশ ছবিটি প্রতীকী। সব শিশুর জন্য চাই এমন উন্মুক্ত খেলাধুলার পরিবেশ
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
বারডেম ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ।

তিথির বয়স আট বছর। দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছে। তার ওজন ৫৫ কেজি। ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ক্লাসে সে সবার চেয়ে মোটা ও লম্বা, বাড়ন্ত শরীর। মাঝেমধ্যে এর জন্য বিব্রত হতে হয়। মা-বাবাও উদ্বিগ্ন। বুঝতে পারছেন না, কী করবেন। এই যে বয়সের তুলনায় ওজন অনেক বেশি, এটাকে আমরা বলি অবেসিটি বা স্থূলতা। শিশু ও কিশোরদের মধ্যে স্থূলতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। স্থূলতা অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। অনেকেই জানতে চান, শিশু অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাচ্ছে কেন। স্থূলতার কারণগুলোকে আমরা তিন ভাগে ভাগ করি।

বংশানুক্রমিক ধারা: মা, বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা থাকলে শিশুরাও মোটা হতে পারে। মায়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে বা মা যদি মোটা হন, তাহলে নবজাতকের ওজনও বেশি হয়। শৈশবে শিশুদের ওজন বেশি থাকলে পরবর্তী সময়েও তারা মোটা হতে থাকে।
হরমোনজনিত কারণ: শরীরে কোনো কোনো হরমোনের তারতম্য হলে শিশুরা স্থূল হতে পারে।
পরিবেশগত কারণ: এর মধ্যে আছে শিশুর জীবনাচরণ; যেমন—দৈনন্দিন কাজ, খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক শ্রম।
শিশুর জীবনাচরণ ওজন বাড়ার প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আমাদের শৈশবের কথা যদি আমরা মনে করি, তাহলে বর্তমান সময়ের শিশুদের জন্য আমাদের কষ্ট হয়। আমরা স্কুলে, বাইরে অবারিত মাঠে খেলাধুলা করেছি, সাঁতার কেটেছি, হেঁটে স্কুলে গিয়েছি এবং বাসায় নিজের কাজ নিজেরাই করতে চেষ্টা করেছি।
এখনকার শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ পায় না। টেলিভিশন দেখে, ভিডিও গেম খেলে আর কম্পিউটারের বোতাম টিপে সময় কাটায়। অনেক শিশু, বিশেষ করে উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা আঁশযুক্ত খাবার, যেমন—শাকসবজি, ফলমূল খেতে চায় না। ফাস্টফুড, চকলেট, কোমল পানীয়, ফলের রস বেশি খায়। শারীরিক শ্রমে যেটুকু শক্তি ব্যয় হয়, তার চেয়ে বেশি ক্যালরি খাওয়া স্থূলতার প্রধান কারণ। তা ছাড়া একটু বড় হয়ে শিশুরা কিছু কাজ বাসায় করতে পারে; যেমন—নিজের বইখাতা, ব্যাগ, কাপড় গুছিয়ে রাখা; ঘর পরিষ্কার করা, বাসায় অন্যান্য কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করা। কিন্তু আজকের শিশুরা এসব কাজে কোনো আগ্রহ দেখায় না। এমনকি নিজের কাজেও অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে। শিশুর ওজন বেড়ে গেলে পরবর্তী সময়ে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে অনেক মা-বাবাই সচেতন নন।

স্থূলকায় শিশুদের জটিলতাগুলো হলো—
 রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া।
 উচ্চ রক্তচাপ, হূৎ পিণ্ডের সমস্যা।
 ডায়াবেটিস, হাড় ও গিঁটে ব্যথা।
 শ্বাসকষ্ট, ঘুম ঘুম ভাব, ঘুমের মধ্যে নাকডাকা, ঘুমের ভেতর শ্বাসকষ্ট হওয়া।
 পিত্তথলিতে পাথর বা প্রদাহ, চর্বি জমে লিভারের স্থায়ী সমস্যা।
 অল্প বয়সে দাড়ি-গোঁফ ওঠা বা মেয়েশিশুদের মাসিক হয়ে যাওয়া।
 ঘাড় ও ভাঁজে ভাঁজে কালো দাগ দেখা দেওয়া।
 শারীরিক ও মানসিক অবসাদ।

স্থূলতা রোধে মা-বাবার করণীয়
 শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ দেওয়া। কৌটার দুধ বা কৃত্রিম খাবার খেলে শিশু দ্রুত মোটা হয়ে যায়।
 ছয় মাস বয়স থেকে পরিবারের খাবার, যার মধ্যে অবশ্যই শাকসবজি, ফলমূল থাকবে। ভাত, আলু, মিষ্টি কম খেতে দিতে হবে যদি শিশুর ওজন বেড়ে যেতে থাকে। ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চকলেট, আইসক্রিম কম খেতে দিতে হবে।
 শিশুকে নিজের কাজ করতে উৎ সাহিত করতে হবে।
 বাইরে খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে।
মনে রাখবেন, স্থূলতা একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা। শিশুর ওজন বেড়ে গেলে তা বাড়তেই থাকে। শিশুর জীবনযাপন পরিবর্তনে মা-বাবার সচেতনতাই স্থূলতাকে প্রতিরোধ করতে যথেষ্ট। আপনার শিশু ও আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 স্থূলতা কমাতে সার্জারি!

ওজন কমাতে নিয়মিত হাঁটার বিকল্প নেই ওজন কমাতে নিয়মিত হাঁটার বিকল্প নেই
অধ্যাপক, অ্যান্ডোক্রাইনোলজি
ও মেটাবলিজম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।

বিশ্বজুড়ে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ স্থূলতা রোগে ভুগছে এবং ৬৪ শতাংশ মানুষ ভুগছে ওজনাধিক্য রোগে। হ্যাঁ, স্থূলতাকে এখন আমরা একটি রোগ হিসেবেই দেখি। শুধু তা-ই নয়, ভয়ংকর অসংক্রামক ব্যাধিগুলো, যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হূদেরাগ, ক্যানসার ইত্যাদির মূল সহযোগী রোগ হিসেবে মূল্যায়ন করি। স্থূলতা শুধু যে এই রোগগুলোরই কারণ তা নয়, এটি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মৃত্যুঝুঁকি। রোগীর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দুরবস্থার কারণ এবং স্বাস্থ্য খাতে একটি আন্তর্জাতিক বিপর্যয়। সবচেয়ে খারাপ কথা হলো, দুই থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে দ্রুত এ রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে, বিশ্বজুড়ে ১৭ শতাংশ টিনএজারই হচ্ছে স্থূলকায় এবং ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটি আরও বড় রকমের বিপর্যয় ডেকে আনতে যাচ্ছে।

স্থূলতা কেন কমাতে হবে
একজন স্বাভাবিক ওজনের অধিকারী ব্যক্তির চেয়ে অধিক ওজনের ব্যক্তির ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বির আধিক্য, হূদেরাগ ও পিত্তথলির রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক গুণ বেশি। এ ছাড়া স্থূল রোগীদের হাঁটু ব্যথা, কোমরে ব্যথা, অস্টিওআথ্রাইটিস, ভ্যারিকোস ভেইন ও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। সম্প্রতি আলোচিত ভয়ংকর রোগ স্লিপ এপনিয়া, যাতে ঘুমের মধ্যে অকস্মাৎ শ্বাসযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যু হতে পারে, তারও মূল কারণ স্থূলতা। স্তন ক্যানসার, কোলন ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার ইত্যাদির সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্থূলতা মানসিক চাপ বাড়ায়, কর্মক্ষমতা কমায়, লেখাপড়া ও চাকরিতে বিঘ্ন ঘটায়, বিষণ্নতা তৈরি করে। স্থূল শিশু-কিশোরেরা মানসিক চাপ ও টিজিংয়ের শিকার হয়। মোটকথা, স্থূলতার কোনো ভালো দিকই নেই।

কীভাবে বুঝবেন আপনার ওজন বেশি
ওজনাধিক্য যাচাই করার বেশ কয়েকটি চালু পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয় বিএমআই এবং ওয়েস্ট সারকামফেরেন্স বা পেটের মাপ পদ্ধতি। আমাদের এশীয় শরীর গঠন অনুযায়ী পেটের ভুঁড়ি বরাবর ফিতা দিয়ে মাপলে তা পুরুষের ৯০ সেন্টিমিটার ও নারীদের ৮০ সেন্টিমিটারের কম হওয়া বাঞ্ছনীয়।
উচ্চতা অনুযায়ী ওজন যা হওয়ার কথা সেই মাপটিকে বলা হয় বিএমআই। একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির বিএমআই (ওজনকে মিটারে উচ্চতার দ্বিগুণ দিয়ে ভাগ করলে যা হয়) ১৮ দশমিক ৫ থেকে ২৪ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকা উচিত। ২৫-এর ওপরে গেলে তাকে বলা হয় ওজনাধিক্য বা ওভারওয়েট, ৩০-এর ওপরে গেলে স্থূল বা ওবেস এবং ৪০-এর ওপরে গেলে ভয়াবহ রকমের স্থূল বা মরবিড ওবেস।

কেন আপনি স্থূল হলেন
আপনি অনেক কারণেই স্থূল হতে পারেন। এর পেছনে আপনার পারিবারিক ইতিহাস, বেড়ে ওঠার গল্প, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কাহিনি জানাটা খুবই জরুরি। আপনি এমন কোনো ওষুধ খাচ্ছেন কি না, যা ওজন বাড়াতে সহায়ক হতে পারে, যেমন—জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ, সেটাও জানাতে হবে চিকিৎ সককে। আপনার এমন কোনো রোগ আছে কি না, যে কারণে স্থূলতা হতে পারে, যেমন—থাইরয়েডের অসুখ, কুশিং সিনড্রোম বা বিষণ্নতা রোগ, তাও জানা দরকার। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করুন, কেন আমি অন্যদের চেয়ে মোটা। আমি কী ধরনের খাবার খাই, কতটা খাই? কবে শেষ আমি কায়িক পরিশ্রম করেছিলাম? কবে থেকে আমি খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছি? অফিসে বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কত ঘণ্টা আমি স্রেফ ডেস্কে বসে কাটাই? বাড়িতে ফিরে কত ঘণ্টা আমি টিভি বা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকি? দৈনিক কতক্ষণ হাঁটি? আশা করি, এসব প্রশ্নের মধ্যেই আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন।

আপনি স্থূল, এবার?
হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো যে আপনি স্থূলতা রোগে ভুগছেন। আর এর জন্য আপনার জীবনাচরণই মূলত দায়ী। এবার কী করবেন?
 প্রথমেই দেখে নিন স্থূলতার জন্য আপনার কী কী ক্ষতি হয়ে গেছে এবং হতে চলেছে। রক্তচাপ, রক্তের সুগার, রক্তের চর্বি ইত্যাদি মাপিয়ে নিন। এই রিপোর্টগুলোর ওপর আপনার পরবর্তী অনেক পদক্ষেপ নির্ভর করছে।
 আপনার কাঙ্ক্ষিত ওজনের টার্গেট ঠিক করে নিন। অতি উচ্চাভিলাষী হবেন না। ধরে নিন, আপনি আগামী ছয় মাসে আট থেকে ১০ কেজি ওজন কমাবেন, এর বেশি নয়।
 আপনার চিকিৎ সা-পদ্ধতি কী হবে, তা আপনার বিএমআই এবং আনুষঙ্গিক রোগবালাইয়ের ওপর নির্ভর করে। ওভারওয়েট হলে শুধু জীবনযাত্রা পরিবর্তন করলেই চলে, স্থূল হলে বা আনুষঙ্গিক মারাত্মক রোগ থাকলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎ সা করা যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে বিএমআই ৪০-এর ওপর হলে বা আনুষঙ্গিক মারাত্মক রোগ থাকলে তার কমেও ওজন কমানোর অপারেশন ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির চর্চা হচ্ছে।

ওজন কমানোর ওষুধ এবং সার্জারি
ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বাজারে পাওয়া যায়, কিন্তু দুঃখের বিষয় এর কোনোটিই স্থায়ীভাবে ওজন কমাতে সক্ষম হয়নি। তার ওপর এগুলোর নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তবে ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি ওজনকে দীর্ঘস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ ও উপশম করার ক্ষেত্রে যে কার্যকরী, তা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বেশি ওজনের সহযোগী রোগগুলো, যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, বন্ধ্যত্ব, স্লিপ এপনিয়া ইত্যাদিরও স্থায়ী উপশম লাভ করা যেতে পারে এর দ্বারা। বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি প্রচলিত, যেমন—গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ডিং, গ্যাস্ট্রোপ্লাস্টি, বিলিওপ্যানক্রিয়েটিক ডাইভারসন, অ্যাডজাস্টেবল গ্যাস্ট্রিক ব্যান্ড ইত্যাদি। সুখের বিষয় এই অতি বিশেষায়িত সার্জারিও আজকাল বাংলাদেশে সহজলভ্য হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশি শল্য চিকিৎ সকেরা সফলতার সঙ্গে এই সার্জারি সম্পাদন করেছেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও বাংলাদেশ অ্যান্ডোক্রাইনোলজি সোসাইটি আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক ওবেসিটি কনফারেন্সে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। ভারতের পুনেতে অবস্থিত লেপারো-ওবেসো ক্লিনিকের প্রখ্যাত ব্যারিয়াট্রিক সার্জন শশানক শাহ ও ব্যারিয়াট্রিক ফিজিশিয়ান পুনম শাহ এই কনফারেন্সে যোগ দেন ও বাংলাদেশি সার্জন-পুষ্টিবিদদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

ওজন কম রাখতে যা করবেন
 নিজের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত, তা হিসাব করে সেই ওজন অনুযায়ী ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে একটি খাদ্যতালিকা করে নিন। দৈনন্দিন সব খাদ্য এই তালিকায় থাকবে, কিন্তু তার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকবে।
 রন্ধনপ্রণালি ও খাদ্য উপাদান নির্বাচনে পরিবর্তন আনুন। রেড মিট, যেমন—গরু-খাসির মাংস বাজার ফর্দ থেকে বাদ দিন। ফ্রাই বা ভাজা, বেক করা খাবার, পনির, ঘি বা চকলেটসমৃদ্ধ খাবার বাদ দিন। সেদ্ধ, কম তেলে রান্না, কাঁচা সালাদ বা ফলমূল বেশি করে নির্বাচন করুন।
 প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট জোরে হাঁটা বা জগিং করা শুরু করুন। এমনভাবে হাঁটতে হবে যেন হূৎ স্পন্দন দ্বিগুণ হয়ে পড়ে, ঘাম ঝরে। ধীরে ধীরে হাঁটার পরিধি বাড়ান। নিয়মিত হাঁটুন।
 জীবনযাত্রায় কায়িক পরিশ্রম যোগ করুন। লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, সব সময় গাড়িতে না চড়ে হেঁটে বাজারে যান। বাড়ির কাজে হাত লাগান। বাগান করুন, সাঁতার কাটুন।
 দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনুন। রেস্তোরাঁয় গেলে কোক, ফান্টা খেতেই হবে—এমন কোনো কথা নেই, মিনারেল ওয়াটারও অর্ডার দেওয়া যায়। মেয়নেজ ছাড়া সালাদ বা ফলের রস চেয়ে নিতে পারেন। সুপার শপে চকলেট, আইসক্রিমের তাকগুলো বাদ দিয়ে ফলমূল ও কাঁচা সবজির তাকের দিকে চোখ দিন। নেমন্তন্নে যাবেন না তা হয় না, নিশ্চয় যাবেন। কিন্তু রিচ ফুড যথাসম্ভব পরিহার করুন। দরকার হলে বাড়ি থেকে রুটি-সবজি খেয়ে রওনা দিন, যাতে খিদে মরে যায়।

ওজন কমাতে যা করবেন না
 উচ্চাভিলাষী হবেন না। খুব দ্রুত ওজন কমাতে গেলে কিছুদিন পরই ক্লান্তি চলে আসবে এবং ধারাবাহিকতা নষ্ট হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন।
 না বুঝে, না জেনে অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করবেন না। এতে পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, ভিটামিনের অভাব ও হাড় ক্ষয় হতে পারে। খাদ্যতালিকা করতে চিকিৎ সক বা পুষ্টিবিদের সাহায্য নিন।
 প্রথমেই অতিরিক্ত হাঁটা বা জিম করতে গেলে শরীরে ব্যথা ও ক্লান্তি চলে আসতে পারে। ধীরে ধীরে ফিটনেস বাড়াতে হবে।
 বাজারে প্রচলিত টোটকা, হারবাল, মেদভুঁড়ির ওষুধ, নানা রকমের যন্ত্রপাতির বিজ্ঞাপনে কখনো ভুলবেন না। এগুলো স্বাস্থ্যহানিকর।
 লেসার বা লাইপোসেকসনের মাধ্যমে স্থূলতার চিকিৎ সা করা হয় না। এগুলো স্বীকৃত চিকিৎ সা-পদ্ধতি নয়।

Saturday, October 1, 2011

ত্বকের চিকিৎসায় লেজার রশ্মি

by লুৎফুন নাহার
লেজার কী
লেজার হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের আলোকরশ্মি, যা ত্বকে প্রবেশ করে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় পরিবর্তন ঘটায়।
কীভাবে কাজ করেঃ সূর্যের আলোকরশ্মিকে কতগুলো তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে (ওয়েভলেন্‌থ) ভাগ করা হয়। ত্বকে লেজার চিকিৎসার জন্য লক্ষ্যবস্তুর শোষণের ধরনের সঙ্গে মিলিয়ে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে নির্ণয় করা হয়। উদ্দেশ্য এমন একটি ওয়েভলেন্‌থ পাঠানো, যা একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু দ্বারা শোষিত হবে। ফলে তাপ জমা হয়ে লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করবে। এই লক্ষ্যবস্তুকে বলা হয় ক্রোমোফোর, ত্বকে যা পানি, হিমোগ্লোবিন ও মেলানিন হিসেবে উপস্থিত থাকে। আদর্শগতভাবে এই নির্দিষ্ট ওয়েভলেন্‌থে পার্শ্ববর্তী কোনো সুস্থ বস্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। দক্ষ লেজার শল্যবিদ সময় ও শক্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আশপাশের বস্তুর সামান্যতম ক্ষতিও রোধ করতে পারেন। লেজার শুধু চেহারার সৌন্দর্য বাড়ানোই নয়, বরং হ্যারপিও ও মস্তিষ্কের চিকিৎসা, জরায়ুর টিউমার, চোখ ও দাঁতের অসুখ, নাকডাকা ও টনসিল ফোলা, সর্বোপরি ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্বাসনালি, খাদ্যনালি, মূত্রনালির বিভিন্ন অসুখে এবং হাড়ের সমস্যায় লেজার এখন নিয়মিত ব্যবহৃত হচ্ছে।
লেজারের মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধিঃ মুখের বলিরেখা দূর করে হারানো সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার জন্য ফটো রেজুভেনেশন করা হচ্ছে। এভাবে ব্রণের দাগ, বসন্তের দাগ এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করা যায়। যেকোনো বয়সের লোকই এখন ত্বকের জৌলুশ বাড়াতে লেজারের সাহায্য নিতে পারেন। সাধারণত প্রতিমাসে একবার করে কয়েক মাস পর্যন্ত রোগের প্রকারভেদে সমস্যা সেরে ওঠা পর্যন্ত লেজার চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জন্মদাগ সারাতে লেজারঃ জন্মদাগ সারাতে লেজার বেশ সফলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। একদম ছোট শিশুকেও লেজার চিকিৎসা দেওয়া যায় এবং কয়েক মাসের মধ্যে ধীরে ধীরে এসব দাগ মিলিয়ে যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ লেজার খুব উন্নত ধরনের এক চিকিৎসাপদ্ধতি, কিন্তু অন্যান্য শল্যচিকিৎসার মতো এখানেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নির্ভর করে লেজার শল্যবিদের দক্ষতা, রোগীর শরীরের অংশ এবং ত্বকের ধরনের ওপর। লালচে হওয়া, ফুলে ওঠা, ত্বক কোঁচকানো কিংবা প্রদাহোত্তর দাগ দেখা দিতে পারে। কালো ত্বকের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা দেখা দেয়।
সতর্কতাঃ চোখে লেজার রশ্মি যাতে না লাগে, সে জন্য রোগীর চোখে আইশিল্ড লাগিয়ে এবং সার্জনের চোখে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে গগল্‌স পরতে হয়। চিকিৎসা শুরুর আগেই রোগীকে লেজারের ফলাফল, সুস্থতা ও স্বাভাবিক চেহারা ফিরে পেতে এবং পুনরায় কাজে ফিরে যেতে কেমন সময় লাগবে, কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে বুঝিয়ে বলা দরকার।
original post

ত্বকের সমস্যা

by সৈয়দ আফজালুল করিম
সমস্যাঃ আমার পায়ে তিন বছর আগে শ্বেতির একটি দাগ পড়ে। পরে সারা গায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আরও ছোট দু-একটা দাগ ওঠে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে দিনে ইলিডেল ক্রিম ও রাতে কোলটার অয়েন্টমেন্ট দুই শতাংশ ব্যবহার করছি। খুব আস্তে আস্তে কমছে দাগগুলো। নতুন কোনো দাগ উঠছে না। পত্রিকায় প্রায়ই দেখি ‘লেজার চেইন’-এর বিজ্ঞাপন। এটা কতটুকু ফলপ্রসূ এবং এতে কী পরিমাণ খরচ পড়বে আর কত দিন লাগতে পারে দাগটা নির্মূল করতে। প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেলে উপকৃত হব। আমি অবিবাহিত। বয়স ২২ বছর।
টিথি
সিলেট।
পরামর্শঃ শ্বেতি বা ভিটিলিগো রোগের চিকিৎসা বর্তমানে বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে শতভাগ ভালো হওয়ার নিশ্চয়তা এখনো দেওয়া সম্ভব নয়। আবার সব শ্বেতি রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থাও এক নয়।
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা রোগীর বয়স, আক্রান্ত স্থান বিবেচনা করে শ্বেতি রোগীর চিকিৎসা, যেমন ত্বকে লাগানোর বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা খাওয়ানোর ওষুধ বা ফটোথেরাপি কিংবা বিশেষ ধরনের লেজার-থেরাপির ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন। নির্দিষ্ট সময়ের পর উল্লিখিত পদ্ধতিতে কাজ না হলে পরবর্তীকালে গ্রাফট সার্জারি পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়, যার ফলও ভালো।
বর্তমানে নতুন পদ্ধতি বিশেষ কেন্দ্রে মেলানো সাইট ট্রান্সপ্লান্টের মাধ্যমেও চিকিৎসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আপনাকে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, এ ওষুধটি বিশ্বের বিভিন্ন চর্মরোগ বিভাগে শ্বেতির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ছয় মাস পর্যন্ত আক্রান্ত স্থানে ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম।
বর্তমানে বিশেষ ধরনের লেজার মেশিনের মাধ্যমেও শ্বেতির চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
যদিও এ পদ্ধতি আপনাকে শতভাগ সুস্থ হওয়ার নিশ্চয়তা দেবে না। লেজার চিকিৎসার খরচ নির্ভর করে কোন মেশিন ব্যবহার করা হবে, কতবার দেওয়া লাগবে, এর ওপর। লেজার চিকিৎসাকেন্দ্রে গেলেই যে লেজার দ্বারা চিকিৎসা করা লাগবে, এটাও ঠিক নয়। তবে জেনে রাখা ভালো, ফটোথেরাপি ও লেজারথেরাপি এক নয়।
শ্বেতি রোগের চিকিৎসার ফল ভালো, তবে সময়সাপেক্ষ।
চর্মরোগবিশেষজ্ঞ নির্ধারণ করবেন, কী ধরনের চিকিৎসা ও কত দিন চিকিৎসার প্রয়োজন। শ্বেতি কোনো সংক্রামক রোগ নয় বা এটা জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও নয়। তাই দুশ্চিন্তা করবেন না।

ত্বক সুন্দর রাখুন

by ডা. দিদারুল আহসান
ত্বককে সুন্দর তরতাজা আর উজ্জ্বল রাখতে হলে অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি অর্থাৎ অতিবেগুনি রশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। তা না হলে ত্বক বুড়িয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে একটি ছাতা বা টোকা জাতীয় চুপি ব্যবহার করা যেতে পারে। যারা এগুলোকে রুচি সম্মত মনে না করেন তারা যেকোনো একটি উৎকৃষ্ট মানের সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কোন সানস্ক্রিন আপনি ব্যবহার করবেন? এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার ত্বকের রঙ বিবেচনায় আনতে হবে। যে ত্বকের রঙ যত সাদা যে ত্বক সূর্যালোকে তত বেশি নাজুক। মনে রাখতে হবে যে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম কেবলমাত্র সূর্যের ‘বি’ অতি বেগুনি রশ্মিকেই প্রতিহত করতে সক্ষম। আর একটি কথা, বাজারে অনেক রকমের সানস্ক্রিন আছে এবং তাতে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টরও উল্লেখ করা আছে যেমন সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর আছে ১৫, ৩০, ৪৫ ও ৬০ ইত্যাদি। আমাদের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে তা ১৫ এর নিচে যেন না হয়; আবার ৩০ এরও বেশি ব্যবহারের কারণও সুস্পষ্ট নয়। ত্বকের জন্য এসপিএফ ৮ থেকে ১২ হলেই যথেষ্ট কারণ কালো ত্বকের গায়ে যে মেলানিন নামক পদার্থ থাকে সেটাই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে। এবার আসা যাক সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে। বর্ষা আর গরমকালে দিনে দু’বার সাবান ব্যবহার করাই উত্তম। তবে সাবান যেন বেশি ক্ষারযুক্ত না হয়, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত ক্ষার ত্বকের ক্ষতি করে। সেক্ষেত্রে ভাল কোনো বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনও অনেকে আছেন যারা একদমই সাবান ব্যবহার করেন না। সেটাও কিন্তু ঠিক নয় কারণ এতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে ত্বকের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাই ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। সে জন্যে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া খুবই প্রয়োজন। গরমকাল এলে ঘামাচি হয় অনেকেরই। অনেকেরই জন্য এটা একটি খুবই বিব্রতকর সমস্যা। চুলকানি ছাড়াও এতে ত্বক খসখসে হয়ে পড়ে। তাই ঠান্ডা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের মধ্যে বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। সার্বক্ষণিক একটি ফ্যানের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। যারা অর্থনৈতিকভাবে সমর্থবান তারা একটি এয়ার কুলার ব্যবহার করতে পারেন। মনে রাখবেন, এসি-এর নিচে থাকলে একদমই ঘামাচি মুক্ত থাকা সম্ভব। ঘামাচির প্রবণতা থাকলে গরমকালে কম ক্ষার যুক্ত সাবান দৈনিক ২ বার ব্যবহার করা ভাল।
ত্বকে অতিরিক্ত এন্টি সেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে ত্বক মোটা ও খসখসে হয়ে যায়। ত্বককে শুষ্ক রাখা খুবই অপরিহার্য। আমাদের দেশে গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতা এমনিতেই বেশি। ঘামও হয় বেশি। ফলে পরিধেয় বস্ত্র খুব সহজেই ভিজে গিয়ে থাকে। মনে রাখবেন, ভেজা বস্ত্র পরে থাকলে ত্বকে দাঁদ হবার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। তাই ঘামে বস্ত্র ভিজে গেলেই তা বদলে শুষ্ক ও পাতলা কাপড় পল্টে নিতে হবে। তাছাড়া গোসলের পর দেহের ভাজগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারেও সচেষ্ট হতে হবে। মনে রাখতে হবে দেহের ভাজস্থানগুলোই ছত্রাক জম্মাবার উর্বর ক্ষেত্র। আর তার উপর যদি থাকে ভেজা তাহলে তো কথাই নেই। তেল ব্যবহারের ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে।

ত্বকের রোগ সোরিয়াসিস

সোরিয়াসিসের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। যাদের সোরিয়াসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাদের যেকোনো ধরনের আঘাত এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ আঘাত থেকেই সোরিয়াসিস শুরু হতে পারে। একটা জায়গা চুলকাতে চুলকাতে সোরিয়াসিস শুরু হয়ে যেতে পারে। ঘর্ষণ বেশি লাগে এমন জায়গাতে যেমন কনুই (পড়ার টেবিলে), হাঁটু, কপাল, পায়ের গিড়ায় (শক্ত জায়গায় নামজা পড়া) সোরিয়াসিস দেখা দিতে পারে। অরিক্তি মানসিক দুশ্চিন্তা সোরিয়াসিসের তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে। যেহেতু এ রোগ কোনো ধরনের জীবাণু দ্বারা হয় না তাই এটি ছোঁয়াচে রোগ নয়।
সোরিয়াসিস নিরাময়যোগ্য ব্যাধি
চিকিৎসার মাধ্যমে বা নিজে নিজেই এ রোগ সেরে যেতে পারে। কয়েকদিন, কাস, বছর এমনকি ১০ বছর পর্যন্ত ভাল থাকা যায়। তবে আবারো হতে পারে। চিকিৎসা নিলে কমে যাবে। পরবর্তীকালে একই জায়গায় অথবা অন্য জায়গায় দেখা দিতে পারে। তবে যেকোনো জায়গাতেই অসুখটি যদি বিরক্তিকর হয় তবে চিকিৎসা নিতে হবে।
খাবারে বিধি নিষেধ
এটিকে অনেকে অ্যালার্জি মনে করে বেগুন, চিংড়ি, ডিম, মিষ্টি কুমড়া, পুঁটি, বোয়াল ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করে দেন। এ ধারণাটি ঠিক নয়। তবে রেডমিট অর্থাৎ লাল মাংস যেমন গরু, মহিষ, হাঁস খাওয়াতে সোরিয়াসিসের তীব্রতা বেড়ে যায়। খাসি, মুরগি খেতে পারবেন।
সোরিয়াসিস যাদের থাকে তাদের আর্থা্রাইটিস বা জয়েন্ট পেইন বা বাত জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে দেয়। সে ক্ষেত্রে পেইন কিলার খেলে ত্বকের সোরিয়াসিস বেড়ে যাবে। ব্যথা সাময়িক কমে থাকবে, কিন্তু ভাল হবে না। ওষুধ বন্ধ তো আবার ব্যথা- তা হলে ব্যথার ওষুধ চলবে তো গ্যাস্ট্রিক আলসার হবে এবং একটা পর্যায়ে কিডনি তার কার্যকারিতা হারাবে। তাই যখন চর্ম রোগ সোরিয়াসিস সাথে বাতের ব্যথা থাকবে তখন এমটিএক্স নামক ওষুধ প্রযোজ্য। এ ওষুধটি ক্যান্সারের অন্যান্য ওষুদের সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই অনেকে এটাকে ক্যান্সারের ওষুধ মনে করে থাকেন- ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথায় এটিই বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ এবং পাশাপাশি ত্বকের সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রেও সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। বিশেষজ্ঞের অধীনে নিতে হয় এ জাতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা।
original post

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes