Total Pageviews

Friday, June 24, 2011

ভ্রান্ত ধারণা দূর করা জরুরি


সাদা স্রাব নিয়ে অনেক রোগিণীর অভিযোগের শেষ নেই। চিকিৎসকের কাছে গেলে অন্য সমস্যার পাশাপাশি তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বলে থাকেন এবং সে সঙ্গে এও বলেন যে এর ফলে তাঁদের স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। এ কারণে তাঁরা মানসিকভাবেও উৎকণ্ঠিত থাকেন। দেশের গ্রামগঞ্জ-হাটবাজারে এ সংক্রান্ত ছোট ছোট সাইনবোর্ড এবং বিভিন্ন ধরনের লিফলেট বিষয়টিকে আরও উসকে দেয়। সাদা স্রাবকে অনেকে ধাতু বলে থাকেন। এ বিষয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা করলে অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে।
স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় মেয়েদের যোনিপথে এক ধরনের পিচ্ছিল রস তৈরি হয়। মুখের লালা, চোখের পানি ইত্যাদি যেমন স্বাভাবিক, যোনিরসও তেমনি একটি ব্যাপার। এটি যোনিপথের কোষের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে, যৌনমিলনের সময় লুব্রিকেসনের কাজ করে, যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ রসের পরিমাণ মানুষভেদে ও বয়সভেদে কম-বেশি হতে পারে। যেমন মাসিক শুরুর আগের বয়সে এবং মেনোপজের পর যোনিরস খুব অল্প নিঃসৃত হয়। আবার সম্যক ধারণার অভাবে স্বাভাবিক পরিমাণ রসকে অনেকের কাছে অতিরিক্ত সাদা স্রাব মনে হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, যখন যোনিরস বেশি নিঃসৃত হয়ে লজ্জাস্থানে ভেজা ভেজা ভাব হয়, পরনের কাপড়ে হলদেটে দাগ পড়ে তখনই কেবল সেটাকে সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া বলে। স্বাভাবিক পরিমাণ যোনিরস লিউকোরিয়া নয়। স্বাভাবিক স্রাবের সঙ্গে স্বাস্থ্যহানির বৈজ্ঞানিক কোনো সম্পর্ক নেই।
মেয়েদের বিশেষ কতগুলো সময় আছে যখন যোনিরসের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় যেমন—যৌনমিলনের সময়, মাসিক শুরুর ঠিক আগের দিনগুলোয়, ওভ্যুলেশনের (ডিম্বস্ফোটন) সময়, গর্ভাবস্থায়, ডেলিভারির পর বেশ কিছুদিন, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহারকালে ইত্যাদি। অনেকে এমন খুঁতখুঁতে আছেন যে স্বাভাবিক জৈবিক গন্ধকে দূর করার জন্য নিয়মিত স্যাভলন-পানি বা কেউ কেউ ডিওডোরান্ট স্প্রে ব্যবহার করেন। এ অভ্যাস ক্ষতিকর। এর ফলে কেমিক্যাল রি-অ্যাকশন হয়ে অঙ্গের ক্ষতি হয়। উপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণকে উৎসাহিত করে।
কখন বোঝা যাবে যে অসুস্থতার কারণেই স্রাব বেশি হচ্ছে? যদি উপরিউক্ত সময় ছাড়াও অতিরিক্ত স্রাব নিঃসৃত হয়, চুলকানি হয়, ভীষণ দুর্গন্ধ হয়, সঙ্গে রক্ত কিংবা পুঁজ থাকে, তলপেটে ব্যথা থাকে, জ্বর থাকে। অস্বাভাবিক স্রাবের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ইনফেকশন, পলিপ, ক্যানসার ইত্যাদি।
সঠিক তথ্য জানার পর প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে পেছনে ফেলে স্বাভাবিক স্রাবকে যেমন সহজভাবে গ্রহণ করা দরকার, তেমনি অস্বাভাবিক স্রাব হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াও জরুরি।
এনামুল হক
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জন
গাইনিকেয়ার, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

নবজাতকের চোখ


নবজাতকের চোখ খোলা নিয়ে একটা উৎকণ্ঠা প্রায়ই দেখা যায় নিকটাত্মীয়দের মধ্যে। নবজাতকের চোখ না খোলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিণত নবজাতক চোখ না খুললে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। আবার চোখ খুললেও শুরু হয় চোখের নানা সমস্যা নিয়ে চিন্তা। নবজাতকের চোখের কিছু সাধারণ সমস্যা এখানে আলোচনা করা হলো।
অন্ধত্ব
চোখের দৃষ্টি প্রায় সাত বছর বয়স পর্যন্ত পরিণত হতে থাকে। প্রথম কয়েক মাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সচেতন থাকা দরকার। চোখের সামনে কোনো তৈরি প্রতিচ্ছবি না থাকলে চোখের দৃষ্টিশক্তি বিকাশ লাভ করে না। যেমন: চোখের পাতা ঝুলে পড়লে, জন্মগত ছানি, গ্লুকোমা থাকলে এগুলো জন্মের পর পরই চিকিৎসার প্রয়োজন।
ট্যারা চোখ
সুস্থ নবজাতকের দুই চোখ অনেক সময় একই লাইনে থাকে না। ছয় সপ্তাহ বয়সের পরও যদি চোখ ট্যারা মনে হয়, তাহলে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। খুব অল্প ক্ষেত্রে জন্মগত ছানি বা টিউমারের জন্য চোখ ট্যারা হতে পারে। এ জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।
চোখের মণি ওপরে-নিচে ঘুরে থাকা
জন্মের পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ চোখের মণি ওপর বা নিচের দিকে বেশি ঘোরানো থাকতে পারে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে চোখের মণির ওপরে সাদা অংশ পাতার নিচে দেখা যেতে পারে। তবে তা যদি কয়েক সপ্তাহ বয়সের পরও দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ছোট বা অনুপস্থিত অক্ষিগোলক
অনেক সময় অক্ষিগোলক স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে। এটা বড় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে অত্যধিক ছোট চোখ দেখা গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণত এর সঙ্গে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও যুক্ত থাকে।
জন্মগত ছানি
জন্মগত ছানি শুনতে যত ভয়ংকর, চিকিৎসার দিক দিয়ে ততই আশাপ্রদ। তবে খুব দ্রুত এ রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজন। জন্মের পরপরই অপারেশন ও কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করাই এর একমাত্র চিকিৎসা। কৃত্রিম লেন্স চোখের ভেতর বসানোর খুব একটা উপকারিতা পাওয়া যায়নি।
নীল চোখ
অনেক সময় চোখের সঙ্গে ত্বকের অত্যধিক সাদা রং ও আলোক সংবেদনশীলতা থাকে। দৃষ্টিশক্তি খুবই দুর্বল থাকে। চোখ কাঁপে, চোখের মণি স্বচ্ছ থাকে ও রেটিনা হয় বর্ণহীন।
চোখের পাতা ঝুলে পড়া
অনেক সময় চোখের পাতা ঝুলে পড়ে। মাংসপেশি বা স্নায়ুর দুর্বলতার কারণে এমনটি হতে পারে।
সমস্যাটি খুব তীব্র না হলে চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেতে পারে। তবে চোখের পাতার কোনো টিউমারের জন্য এমন হলে অতিদ্রুত চিকিৎসা দরকার।
অপরিণত নবজাতকের রেটিনার সমস্যা
একসময় মনে করা হতো, ভুল মাত্রায় অক্সিজেন প্রয়োগের কারণেই সমস্যাটি হয়। তবে এখন দেখা যায়, অন্যান্য কারণেও এটি হতে পারে এবং অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। অতি কম ওজন ও হ্রস্ব গর্ভকালও এ অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। অপরিণত যেসব নবজাতককে রক্ত দিতে হয়, তাদেরও রেটিনার সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রেটিনার সমস্যায় লেজার ও ক্রায়োথেরাপির কার্যকারিতা রয়েছে।
মাহবুব মোতানাব্বি
নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

১৪ জুন বিশ্ব স্বেচ্ছা রক্তদাতা দিবস – আরও রক্ত, আরও জীবন

donate-blood
গতকাল পালিত চলতি বছরের রক্তদাতা দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আরও রক্ত আরও জীবন। অর্থাৎ রক্তের পর্যাপ্ত সঞ্চয় রক্ষা করবে আরও অনেক জীবন। ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারা বিশ্বে প্রতিবছর নয় কোটি ৩০ লাখ ব্যাগ রক্ত সংগৃহীত হয় (১৭৩টি দেশে)। এর ৫০ শতাংশ সংগৃহীত হয় উন্নত দেশে, যাঁরা সারা বিশ্বের জনসংখ্যার মাত্র ১৬ শতাংশ। উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে স্বেচ্ছায় রক্ত দেয় ৪৫০ জন; অপরদিকে উন্নয়নশীল মাত্র তিনজন। অনেক দেশেই এখনো রক্তের চাহিদা ও প্রাপ্যতার মধ্যে রয়েছে বিশাল ব্যবধান। এই ব্যবধান কমিয়ে আনার একমাত্র উপায় স্বেচ্ছায় রক্তদানে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশের এক শতাংশ মানুষ যদি স্বেচ্ছায় রক্ত দেয় তাহলে রক্তের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ছয় লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। সংগৃহীত রক্তের প্রায় ৭০ শতাংশ আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া যায়, ৩০ শতাংশ পাওয়া যায় স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের কাছ থেকে। যদি বলা হয়, চাহিদা তো মিটছে, তাহলে ঘাটতি কোথায়? ঘাটতি তাদের জন্য যাদের মুমূর্ষু অবস্থায় রক্ত দেওয়ার কোনো আত্মীয়স্বজন থাকে না। অভাবটা তাদের জন্য যাদের প্রতি মাসে এক ব্যাগ রক্তের জন্য আত্মীয়স্বজনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। যেমনটি থ্যালাসিমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। ঘাটতি রয়েছে নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার মানসিকতায়। সুতরাং রক্তের অভাবের ঝুঁকিটা তার পরও থেকে যায়।
বাংলাদেশে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচির পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা গত ১০ বছের ১০ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। থাইল্যান্ডে এই হার ১০০ শতাংশ এবং ভারতে ৬৫ শতাংশ। এ জায়গায় আমরা অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি শুরু হয়। এর আওতায় এ পর্যন্ত ২০৩টি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এ সব কেন্দ্রে এইডস, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়ার স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর পাশাপাশি প্রায় ৫০টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাংক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স সংগ্রহ করে রক্ত পরিসঞ্চালন পরিচালনা করছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ১৮টি কেন্দ্র থেকে রক্তের উপাদান প্রস্তুত করে সরবরাহ করা হয়। সরকার নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করেছে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন কর্মসূচি বাস্তবায়নের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে সারা দেশে এইচআইভি/এইডস, হেপাটাইটিস বি-সি, সিফিলিস ও ম্যালেরিয়ার রোগের স্ক্রিনিং করা। এর ফলে দেশে পেশাদার রক্তদাতার সংখ্যা ৭০ থেকে কমিয়ে প্রায় শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকার প্রণীত নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২-এর নির্দেশনা এবং এসআরও ১৪৫-এর ৩৫ নম্বর অনুচ্ছেদের কয়েকটি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন বিশেষজ্ঞ কমিটির অধীনে ন্যাশনাল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার কমিটি করা হবে, যারা ভ্রাম্যমাণ রক্ত সংগ্রহ ক্যাম্প পরিচালনা ও সারা দেশের ভলান্টারি ব্লাড ডোনেশন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করবে।
যদিও আমাদের দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে রক্তদানকেন্দ্র গড়ে ওঠেনি, বিভিন্ন স্তরে সমন্বয় করে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজনে জাতীয় পর্যায়ে সবার অংশগ্রহণে একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে যার মাধ্যমে সরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে সার্বিক সমন্বয় সাধনে করা সম্ভব হবে। স্বেচ্ছা-রক্তদাতা সংগঠন আয়োজিত যেকোনো ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে অনুমোদিত নিকটস্থ রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র রক্ত সংগ্রহের জন্য সব টেকনিক্যাল সাপোর্ট প্রদান করবে এবং রক্ত সংরক্ষণ, স্ক্রিনিং ও ক্রসম্যাচিং পরীক্ষা সম্পাদন করবে। যেহেতু আমাদের দেশে প্রতিটি কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার গুণগত মান যাচাই করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, তাই ভবিষ্যতে সারা দেশে বিভাগ অনুযায়ী সাতটি রিজিওনাল সেন্টার স্থাপন করা যেতে পারে।
পাশাপাশি সম্পূর্ণ রক্তের (হোল ব্লাড) পরিবর্তে ব্লাড কম্পোনেন্টের ব্যবহার বাড়াতে হবে। হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। জাতীয় গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের উদ্যোগে রক্তদানে উদ্বুদ্ধকরণের কার্যক্রম জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণ করতে হবে। মোটিভেশনের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। রক্তই রক্তের বিকল্প, অন্য কিছু নয়। অনেক চেষ্টা করেও বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। রক্ত একটি অমূল্য সম্পদ। সময়মতো রক্ত পাওয়ায় অধিকার নিশ্চিত করলে, আমরা মনে করি, বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের যথাযথ মূল্যায়ন হবে। তাই বলা হয়, রক্তদান শুরু হোক আপনার থেকে। রক্ত মানুষের জীবন রক্ষা করে—এই মূল্যবোধ জাগ্রত থাকুক সব সময়ের জন্য।
মুরাদ সুলতান, বিশেষজ্ঞ, ব্লাড সেফটি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

Wednesday, June 22, 2011

প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পাওয়া জনিত সমস্যা

ডা. জামানুল ইসলাম ভূঁইয়া
প্রস্টেট গ্রন্থি পুরুষের দেহের একটি accessory sex orgen. জন্মের সময় এটা খুব ছোট থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এটা বড় হতে থাকে। পুরুষের বীর্যের একটি অংশ এই গ্রন্থি থেকেই নিঃসৃত হয়। তবে প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির জন্য যে প্রস্রাবের কষ্ট শুরু হয় তা সাধারণত চল্লিশোর্ধ বয়সেই হয়ে থাকে। এৰেত্রে Sir Benjamin-G-এর একটি উক্তি


“When hair becomes gray and scanty, when speaks of earthy matter begin to be deposited in the tunics of the artery and when a white zone is formed at the margin of the cornea, at the same period the prostate gland usually- I might perhaps say invariably- becomes incresed in size.
ষাট বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পুরম্নষের প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি ঘটে। এর বৃদ্ধির কারণ হিসেবে হরমোনাল ইমবেলেন্স অথবা নিউপস্নাস্টিককে দায়ী করা হয়। প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া প্রস্টেট বৃদ্ধির কারণে ঘটতে পারে অথবা মূত্রথলির মাংসের ঠিকভাবে কাজ না করতে পারাও হতে পারে। এ ছাড়াও মূত্রনালী সরু হওয়া (ঝঃৎরপঃঁৎব ঁৎবঃযৎধ), মূত্রথলীতে পাথর (ঠবংরপধষ পধষপঁষঁং), মূত্রথলী ও মূত্রনালীতে প্রদাহের (ওহভবপঃরড়হ)কারণে । কাজেই এ থেকে বোঝা যায় যে বয়স্ক মানুষের প্রস্রাবের কষ্ট হলেই প্রস্টেট বৃদ্ধি ঘটেছে এমনটি নাও হতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক।
প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি দুই রকম :
১। ভাল প্রদাহ (ইবহরমহ)
২। ক্যান্সার (গধষরমহধহঃ


প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধিকালে প্রস্রাবের যে ধরনের কষ্ট হয় তা নিম্নরূপ :
১। বার বার প্রসাব হওয়া (ওহপৎবধংব ঋৎবয়ঁবহপু)
২। রাতের বেলায় বেশি প্রস্রাব হওয়া (ঘড়পঃঁৎরধ)
৩। প্রস্রাবের বেগ হলে আটকে রাখতে না পারা (টৎমবহপু)
৪। প্রস্রাবের শুরম্নতে প্রস্রাব শুরম্ন করার জন্য দেরি হওয়া (ঐবংরঃধহপু)
৫। প্রস্রাব সরম্ন হওয়া ও গতি কমে যাওয়া (চড়ড়ৎ ভষড়)ি
৬। ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া (উৎরননষরহম)
৭। প্রস্রাব করার পরও মনে হবে প্রস্রাব রয়ে গেছে (ঝবহংধঃরড়হ ড়ভ ঢ়ড়ড়ৎ নষধফফবৎ বসঢ়ঃুরহম)
৮। প্রস্রাব আটকে যাওয়া (অপঁঃব ড়ৎ পযৎড়হরপ ৎবঃবহঃরড়হ ড়ভ ঁৎরহব)
পরীৰাসমূহ
সাধারণ পরীৰার সঙ্গে কয়েকটি বিশেষ পরীৰা প্রয়োজন। যেমন_
১।
ইউরোফ্লোমেট্রি
২। আলট্রাসনোগ্রাম (কটই ৎবমরড়হ)
৩। এঙ্-রে কিডনি, ইউরেটার ও বস্নাডার রিজিয়ন
৪। ইউরোডায়নামিক (মাঝে মাঝে)
৫। রক্তে পিএসএর পরিমাণ।
তবে এ সমসত্ম পরীৰা অবশ্যই একজন ইউরোলজিস্টকে দেখিয়ে করা উচিত।
চিকিৎসা না করলে কি হবে
ঠিকভাবে প্রস্রাব করতে না পারলে তার পুরো প্রেসারটাই পেছনের দিকে যেয়ে মূত্রনালী ও পরবতর্ীতে কিডনিতে পড়ে, যার জন্য কিডনি বড় হয়ে যায় ও আরও দেরি করলে কিডনি আংশিক এবং পরবতর্ীতে পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়।
তাছাড়া ইনফেকশন, পাথর হওয়া, রক্ত যাওয়া ও অন্য অনেক অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হলেই চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। চিকিৎসা উপসর্গের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন স্কোর করা হয়েছে।
১।
প্রাথমিক (স্কোর ০-৭)
নিরীৰণপূর্বক দেরি (ডধঃপযভঁষ ধিরঃরহম)
২। মধ্যম (স্কোর ৮-১৯)
ওষুধ যেমন_ টেমসোলসিন, আলফাজসিন ও অন্যান্য।
৩। বেশি (স্কোর ২০-৩৫)
সার্জারি
সার্জারি বিভিন্ন রকম যেমন_
১. ঞৎধহংঁৎবঃযৎধষ ৎবংবপঃরড়হ ড়ভ ঢ়ৎড়ংঃধঃব (ঞটজচ)
২. ঞৎধহংঁৎবঃযৎধষ ওহপরংরড়হ ড়ভ চৎড়ংঃধঃব (ঞটওচ)
৩. খধংবৎ
৪. ঙঢ়বহ ঙঢ়বৎধঃরড়হ.
বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা ৯৯ ভাগ অপারেশনই যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়। পেট কাটার কোন প্রয়োজন হয় না। কাজেই প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি হলে অথবা প্রস্রাবের কোন কষ্ট অনুভব করলে একজন ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন নতুবা যা সামান্য চিকিৎসায় সেরে যেত তা আপনার জন্য একদিন কিডনি বিকল হওয়ার মতো রোগ বয়ে আনতে পারে।
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইউরোলজি বিভাগ, এনআইকেডিইউ

Monday, June 20, 2011

স্পন্দনহীন হৃদযন্ত্র!

হৃদযন্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক এর কম্পন। এ কম্পন ছাড়া কোনো জীবিত মানুষের কথা কল্পনা করা যায় না। তবে শুনতে আজব ঠেকলেও সত্য, হৃদযন্ত্রে কোনো রকম কম্পন ছাড়াই পাঁচ-পাঁচটি সপ্তাহ কাটিয়ে দিয়েছেন টেঙ্াসের ক্রেইগ লুইস।
৫৫ বছর বয়েসী লুইস ছিলেন বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। তার হৃৎপিণ্ড পুরোপুরি বিকল হয়ে গেলে প্রতিস্থাপন করা হয় একটি কৃত্রিম হৃদযন্ত্র। প্রচলিত কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের চেয়ে এটি ছিল একেবারেই ভিন্ন। অনেক বছর আগে থেকেই কৃত্রিম যে হৃদযন্ত্র ব্যবহার 

করা হচ্ছে, সেটিও কাজ করে ঠিক মানুষের হৃদযন্ত্রের মতোই। স্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের মতোই সেটি রক্তকে পাম্প করে পাঠিয়ে দেয় সারা দেহে। ফলে কৃত্রিম এ যন্ত্রেও অনুভূত হয় স্পন্দন। কিন্তু ক্রেইগ লুইসের শরীরে স্থাপন করা হৃদযন্ত্রটি ছিল ভিন্ন। এটি পাম্প করার পরিবর্তে নিজের মধ্যে রক্তের ঘূর্ণি তৈরি করত। ফলে দেহে কোনো হৃদস্পন্দন অনুভূত হয় না।
ক্রেইগ লুইসের অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি হলে তাঁর স্ত্রী লিন্ডা দ্বারস্থ হন টেঙ্াস হার্ট ইনস্টিটিউটের। সেখানকার চিকিৎসক ডা. বিলি কোহন ও ডা. ও এইচ বাড তাঁদের উদ্ভাবন করা নতুন প্রযুক্তির ওই হৃদযন্ত্র লুইসের দেহে স্থাপন করেন। এ নতুন হৃদযন্ত্রের সহায়তায় ক্রেইগ লুইস বেঁচেছিলেন পাঁচ সপ্তাহ। এ সময় তাঁর শারীরিক অবস্থার অনেক উন্নতিও দেখা যায়। পরে তিনি মারা যান। তবে সেটি এ যন্ত্রের ব্যর্থতার জন্য নয়, তিনি মারা যান অন্যান্য রোগের জটিলতার কারণে। কিডনি ও লিভার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় লুইস মৃতপ্রায় অবস্থা দাঁড়ান। এ অবস্থায় তাঁর পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, লুইসকে মানবসুলভ স্বাভাবিক মৃত্যুর সুযোগ দেওয়াই তাঁর জন্য মঙ্গলজনক। পরে চিকিৎসকরা ওই কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের কাজ বন্ধ করে লুইসকে সে সুযোগ করে দেন।
চিকিৎসকরা জানান, সাধারণ যে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র প্রচলিত রয়েছে, সেটি প্রতিদিন এক লাখ বার ও বছরে সাড়ে তিন কোটি বার পাম্প করে। এতে এ যন্ত্রের ওপর যে চাপ পড়ে তাতে সেটি ক্রমশ কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে, আর এর ‘রক্ষণাবেক্ষণ’ বেশ কঠিন। কিন্তু তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির এ হৃৎপিণ্ডে এ সমস্যা নেই, যেহেতু এটি পাম্প করে না। পরিবর্তে এটি রক্তকে সারা শরীরে অনবরত ঘূর্ণির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, নতুন প্রযুক্তির এ কৃত্রিম হৃদযন্ত্র অনেক বেশি কার্যকর ও যুগোপযোগী। তাঁরা এটিকে হৃদরোগের চিকিৎসার ভবিষ্যৎ হিসেবে দেখছেন। সূত্র : দ্য ডেইলিমেইল অনলাইন।

স্মৃতিভ্রংশ থেকে রক্ষা মিলবে

মস্তিষ্কের একটি মারাত্মক ধরনের রোগ হচ্ছে ডিমেনশিয়া। এই রোগে মানুষ দ্রুত স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। এটা কখনও হয় স্বল্প সময়ের জন্য। আবার কখনও বা দীর্ঘ সময় ধরে চলে এটি। এছাড়া আরও অনেক কারণেই চলে যেতে পারে স্মৃতিশক্তি। তার মধ্যে মস্তিষ্কে আঘাতের সমস্যা তো আছেই। এই স্মৃতিভ্রংশ রোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে গবেষণা চালিয়ে বিজ্ঞানীদের একটি দল বেশ ভালো ফল পেয়েছেন। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ব-বিদ্যালয়ের ভিটেব্রি স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বায়োমেডিক্যাল দফতরের গবেষকরা চালিয়েছিলেন এই গবেষণা। প্রাথমিকভাবে তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কের দুটি অংশের নিউরনের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের যে উপায় রয়েছে তার মধ্যে এই গবেষণাটি চালান। দেখা যায়, যে ওষুধটি তারা ব্যবহার করছেন তার ফল হচ্ছে ঠিক আলো জ্বালাবার সুইচের মতো। সুইচ টিপলে বাতি জ্বলার মতো, ওষুধ দিলে ইঁদুর তার স্মৃতি ফিরে পাচ্ছে আবার না দিলে চলে যাচ্ছে সেই স্মৃতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের প্রধান থিওডর বার্গার বলেছেন, দু’ভাবে কাজ করতে পারে এই নতুন গবেষণার সাফল্য। স্বল্প সময়ের জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়া স্মৃতি তো বটেই, দীর্ঘমেয়াদে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিও ফিরিয়ে আনছে এই নতুন গবেষণা। তবে এখন পর্যন্ত তা কেবলই ইঁদুরদের মধ্যে।
ইঁদুরদের ক্ষেত্রে পাওয়া সাফল্যের পর এবার কাজ শুরু হবে বাঁদরদের নিয়ে। বাঁদররা যদি এই ওষুধে ইঁদুরদের মতোই সাড়া দেয়, তার পরের ধাপ হবে অবশ্যই মানুষ। আর মানুষের স্মৃতি ফেরাতে পারলেই আসবে চূড়ান্ত সাফল্য।

কষ্ট পুষে রাখলে হার্টের সমস্যা


হার্টের ডাক্তাররা বলেন, কেউ যদি মনে কষ্ট পুষে রাখেন এবং চিন্তায় পড়ে যান তাহলে তার হার্টের সমস্যা হতে পারে। এর জন্য অবশ্য উদ্বেগ আর অহেতুক টেনশন দূর করার চিকিত্সা করা জরুরি। কিন্তু উদ্বেগ বা চিন্তাকে দূরে রাখতে বললেই তা চলে যায় না। আমাদের চারপাশের নানা কর্মকাণ্ড এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তার উদ্ভব হয়। চিন্তা মানসিক স্বাস্থ্যকে নষ্ট করে। একদিকে চিন্তা থেকে মেন্টাল ডিসঅর্ডার বা মানসিক জটিলতা তৈরি হয়, অন্যদিকে এর মধ্য দিয়ে তৈরি হচ্ছে বুকের ব্যথা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যায়াম মানুষের চাপ বা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। তবে চিন্তা যেমন বেশি করা ভালো নয়, ব্যায়ামও তেমনি বেশি করা ভালো নয়। বেশি ব্যায়াম মনের চাপ কমালেও শরীরের ওপর আবার চাপ তৈরি করতে পারে। সকালে ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো। কারণ তা মনকে সারাদিন সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
চা, কফি বা চকোলেট জাতীয় দ্রব্য মানুষের স্নায়ুকে উত্তেজিত করে। বেশিরভাগ মানুষ এসব না খেয়ে চলতেও পারে না। এগুলো যতটা কম গ্রহণ করা যায় ততই উদ্বেগ নিরসনে কার্যকর। চিনি হচ্ছে রিফাইন বা প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট। এ ধরনের খাবার শরীরে সরাসরি বেশি গেলে তা উদ্বিগ্নতা বা উদ্বেগ বাড়াতে পারে। বেশি পরিমাণ ভিটামিন জাতীয় খাবার শরীরের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি চাপ কমায় এবং ভিটামিন বি নার্ভকে স্বাস্থ্যবান রাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের তেলে ওমেগা থ্রি আছে। অনেকের মতে, এটা অ্যান্টি-ডিপ্রেসনার বা মানসিক উদ্বিগ্নতার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
উদ্বেগ মানুষকে ভীত এবং দুর্বল করে দেয়, এ সময় কোনো কাজের মধ্যে ডুবে যাওয়া ভালো। কেউ যদি অপরাধ করে ফেলে তাহলে সে চিন্তিত হতে থাকে। তাহলে তার মনের মধ্যে অপরাধ বোধ এবং ভয় কাজ করতে থাকে। চিন্তা করা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। তবে দুশ্চিন্তা মানুষের শরীরের ও মনের ক্ষতির কারণ। দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে থাকুন। আনন্দে থাকুন, ভালো থাকুন। ইন্টারনেট

বুকে ব্যথার অন্তর্নিহিত কারণ


ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন
বুকে ব্যথা এক ধরনের জটিল সমস্যা। এ সমস্যা এত জটিল যার ফলে কোনো ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও যাওয়া লাগতে পারে। বিভিন্ন কারণে বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। প্রথমে দেখতে হবে বুকে ব্যথা আঘাতজনিত কারণে না আঘাতবিহীন কারণে। যদি আঘাতবিহীন কারণে বুকে ব্যথা হয় তাহলে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে হৃদরোগজনিত কারণে না অন্য কোনো কারণে বুকে ব্যথা হয়েছে। এ কারণ নির্ধারণের জন্য রোগীর কাছ থেকে রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে এবং এরপর শারীরিক ও ল্যাব পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করলে বেশিরভাগ বুকের ব্যথা ভালো করা সম্ভব।
বুক ব্যথার কারণ : হৃদরোগজনিত, িফুসফুসজনিত কারণ, িমাংসপেশিজনিত , িখাদ্যনালীজনিত কারণ, িমানসিক ও অন্যান্য কারণ।
বুকে ব্যথার প্রকৃতি : চাপ চাপ ব্যথা, মনে হয় বুকের মাঝখানে পাথর বসিয়ে রেখেছে এমন, দম বন্ধ হয়ে আসে এমন বা অনুভূতিহীন যেমন হৃদরোগজনিত কারণ। তীব্র ব্যথা, ছুরি দিয়ে আঘাত করলে যেমন মনে হয়, পোড়ানো ব্যথা, শ্বাস নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথা_ ফুসফুসজনিত কারণ যেমন নিমোনিয়া, পালমোনারি অ্যামবলিজম, হৃদযন্ত্রের প্রদাহ।
হঠাৎ তীব্র পীড়াদায়ক ব্যথা বুকের সামনে থেকে পেছনে চলে যায় অড়ৎঃরপ উবংবপঃরড়হ (ধমনি ছেঁড়াজনিত কারণ) বুকে ব্যথা পরিশ্রম করলে, দুশ্চিন্তা করলে, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে আসলে, দুঃস্বপ্ন দেখলে বাড়ে। কিন্তু বিশ্রাম নিলে জিহ্বার নিচে নাইট্রেটজাতীয় ওষুধ দিলে কমে তাহলে হৃদরোগ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। খাবার পর, শোবার সময়, গরম খাবার, মদ পান করলে এবং খালি পেটে যদি ব্যথা বাড়ে, অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেলে কমে যায়, তাহলে খাদ্যনালীজনিত কারণ।
বুকে ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হলে হৃদরোগ, পালমোনারি অ্যামবলিজম নিমোনিয়া নিউমোথোরাক্স হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়। পরিশ্রম করার কিছুক্ষণ পর থেকে ব্যথা শুরু হয়, বিশ্রাম নিলেও ব্যথা থাকে, ব্যথা নিরাময় জাতীয় ওষুধ (যেমন উরপষড়ভবহ) জাতীয় ওষুধ থেকে ব্যথা কমে তাহলে মাংসপেশিজনিত কারণ বলে সন্দেহ করা হয়।
জরুরি বিভাগে বুকের ব্যথাজনিত কারণে যেসব রোগী আসে তার শতকরা ১০ ভাগের বেশি আসে মানসিক বা দুশ্চিন্তাজনিত কারণে।
অনেক সময় পেটে ব্যথার সঙ্গে বুকে ব্যথা থাকতে পারে। যেমন পিত্তথলিতে পাথর অথবা চধহপৎবধঃরঃরং কারণে হয়। যে কারণেই বুকে ব্যথা হোক না কেন রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা যেমন বুকের এক্সরে, ইসিজি জাতীয় পরীক্ষা করে দ্রুত রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা করালে বেশির ভাগ রোগী ভালো হয়ে যায় এবং অনেক সময় দ্রুত হৃদরোগ নির্ণয় করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো রোগের কারণ না পাওয়া যায় সেই ক্ষেত্রে রোগীকে সঠিক উপদেশ দিয়েও বুকের ব্যথা ভালো করা সম্ভব।
লেখক : পরিচালক
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল
মহাখালী, ঢাকা। ফোন : ০১৭১১-১৭১৬৩৪

পাকা চুলের ভাবনা…আর না!


‘চুল পাকিলেই হয় না বুড়ো…’ – এ কথা কি আর সবাইকে বোঝানো যায়! বোঝানো গেলে তো আর বেরসিকের মতো ধূসর কিংবা সাদা হয়ে ওঠা চুল ঢাকতে হতো না কলপ আর টুপি দিয়ে। আবার চুলকেও তো পাকতে না করার উপায় নেই-’পাকামো’ সে করবেই। কিন্তু চুলের এ পাকামো ঠেকাতে এবার মোক্ষম উপায় বের করেছেন গবেষকরা চুল কেন পেকে যায় অর্থাৎ চুলের রং ধূসর বা সাদা হয়ে ওঠার প্রকৃত কারণটি খুঁজে বের করেছেন তাঁরা। গবেষকরা বলছেন, এবার চুলের পেকে যাওয়া তো ঠেকানো যাবেই, পেকে যাওয়া চুলের রং আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়াও খুব কঠিন হবে না।
জীববিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সেল-এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকরা চুল পেকে রং বদলে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে কয়েকটি গবেষণা পরিচালনা করেন। গবেষক অধ্যাপক মায়ুসি ইতো জানিয়েছেন, এত দিন শুধু জানা ছিল, মাথার ত্বকে ফলিকল ও মেলানোসাইটস নামের কোষ চুলের রঙের জন্য দায়ী। এর মধ্যে মেলানোসাইটসই মূলত চুলের রং উৎপাদনের কাজটি করে। তবে ঠিক কী কারণে বা কী প্রক্রিয়ায় চুল পেকে এর রং বদলে ধূসর বা সাদা হয়ে যায়, তা জানা ছিল না। গবেষণায় ‘ডবি্লউএনটি’ নামের একটি প্রোটিনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা মেলানোসাইটসকে প্রভাবিত করার মাধ্যমে চুলের রঙের তারতম্য ঘটায়।
গবেষক মিস মায়ুসি জানিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, ডবি্লউএনটি প্রোটিনের ঘাটতি হলে চুল পেকে রং ধূসর ও সাদা হতে শুরু করে। ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে চুলের রং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, চুলের রং বদলে যাওয়ার প্রকৃত কারণটি এবার জানা সম্ভব হওয়ার ফলে এর কার্যকর সমাধানও পাওয়া যাবে। এ আবিষ্কারের দরুণ চুলের রং ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ, লোশন, শ্যাম্পু ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব হবে।
সূত্র: দ্য ডেইলি মেইল ও টেলিগ্রাফ অনলাইন।

পুরুষের স্বাস্থ্য নিয়ে সত্যি মিথ্যা


অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
য় অনেক পুরুষের মাথায় হয় টাক। বিরলকেশ পুরুষ অনেকে মনে করে মাথায় টুপি পড়লে বা বেস্নাড্রায়ার ব্যবহার করলে এমন হতে পারে। সত্যি নয় কথাটা। কোন প্রমাণ নেই এর পৰে। পুরম্নষালি কেশহানির কারণ হলো : কেশবৃন্তগুলো ক্রমে ছোট হতে থাকে; ফলে হ্রস্ব, সূক্ষ্ম কেশ হতে পারে, ক্রমে ক্রমে কেশপতন।
য় শৌর্যবীর্য তো পুরুষের না থাকলে হয়? অনেকে মনে করেন যেসব পুরম্নষ ব্রিক (অনত্মর্বাস) পরেন তাদের খর্ব হয় এই পৌরুষ। দীর্ঘ সময় উত্তাপে শুক্রকণিকার সংখ্যা যায় কমে, এর পৰেও কোন প্রমাণ নেই। সবই কল্পকথা।
য় দাড়ি যত শেভ করবেন তত বেশি ঘন হবে দাড়ি। এও অনেকের ধারণা। আমাদের কেশবৃনত্মগুলোর আকার আয়তন চুলের ঘনভাব ও সংযুক্তি নির্ণয় করে লোম বা চুল মনে হতে পারে কর্কশ। তবে শেভ করলে কেশবৃনত্ম পরিবর্তন হয় না। তাই বার বার শেভ করলে ঘন হবে কেন দাড়ি?
য় মানুষের যৌন জীবনের তুঙ্গ আঠারাতে। মিথ্যে নয়। অনত্মত পুংহরমোন টেসস্টোটেরন তুঙ্গে থাকে আঠারোতে। হরমোনের সঙ্গে পারফরম্যান্সের সম্পর্ক সব সময় থাকে না। ব্যথা না হলে, আঘাত না পেলে লাভ কি ব্যায়ামে। এও ঠিক না। ব্যথা থেকে কি লাভ হয়? বরং ব্যথা পাওয়া পর্যন্ত ব্যায়াম চালাতে থাকলে আহত হবার শঙ্কা বেশি।
য় পুরম্নষ বেশি মরে প্রোস্টেট ক্যান্সারে অন্য ক্যান্সারের তুলনায়। এটিও নিহায়ত কল্পকথা। আমেরিকার কথা বললে পুরম্নষ ও নারীর মধ্যে ক্যান্সারে মৃতু্যর কারণ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার। প্রোস্টেট ক্যান্সার পুরম্নষের ঘাতক হিসেবে এসব স্থান দ্বিতীয়। ৩৬ জনের মধ্যে ১ জনের এমন ক্যান্সারের সম্ভাবনা।
য় পুরম্নষের সত্মন ক্যান্সার হয় না একথা ঠিক নয় তবে খুবই বিরল। জীবনে ঝুঁকি ১০০০ জনের মধ্যে ১ জন।
য় পুরম্নষের অস্থি ফোপরা হয় না তা ঠিক নয়। অস্টিওপরসিস পুরম্নষেরও সমস্যা হতে পারে।
য় অস্টিওপরসিস রোগে দেহ কঙ্কাল দুর্বল হয়ে যায়, হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি যায় বেড়ে, পুরম্নষের দেহ কঙ্কাল বড় হওয়ার জন্য এবং যেহেতু নারীর মতো ঋতুবন্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয় না তাই আকস্মিক হরমোন মানে পরিবর্তন ও হাড়ের ৰয় যা মহিলাদের হয়, তা ঘটে না পুরম্নষের ৰেত্রে। তবে গড় আয়ু বাড়ার জন্য পুরম্নষের ঝুঁকি তো বাড়ে কারও কারও বয়স, মদ্যপান, কমমাত্রা টেসস্টোটেরন, স্টেরয়েড ওষুধ। নিস্ফলতা এসব ঝুঁকি তো রয়েছেই।
তরল মদ বিয়ার পানে যে ‘বিয়ার বেলি’ হয় তা সত্য।
দইববৎ নবষষু্থ সত্য কথা।
যে কোন উৎস হোক, ক্যালোরি বাড়তি হলেই তলপেটে মেদ বাড়ে এবং তরল মদ বিয়ার থেকে বাড়তি ক্যালোরি কোমরের বেড় বাড়ায়। আর বিয়ার পান করে ক্যালোরি বাড়তি গ্রহণ সহজেই করা যায়।
য় গ্রিল করা মাংসে এমন পদার্থ আছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গ্রিল করা মাংসে দু’ধরনের সম্ভাব্য ক্যার্সিনোজেন থাকতে পারে। একটির ধরন হলো পলিসাইক্লিক এ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, পিএএইচ; যা ধোঁয়া ও আগুনের শিখায় থাকতে পারে। পিএএইচ এরপর মাংসের গায়ে লেগে থাকে। অন্য ধরনটি হলো হেটিবোসাইক্লিক এমাইনস এইচসিএ। এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করে মাংসের সঙ্গে গ্রিলের সরাসরি সংস্পর্শ এড়ানো যায়।
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম, ঢাকা।
হাইড্রোসিল
টেস্টিস বা অ-কোষ হচ্ছে পুরুষ প্রজনন অঙ্গ। এখানেই স্পার্ম বা শুক্রানু তৈরি হয় এবং এই স্পার্ম বা শুক্রানুর মেয়েদের ডিম্বানুর মিলনের ফলে সস্তানের জন্ম হয়। এ টেস্টিসের সংখ্যা দুটি। এর জন্ম পেটের ভেতর টেস্টিসদ্বয় শিশুর মায়ের পেটে বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নিচের দিকে নামতে থাকে এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বেই অ-কোষ (ক্রটাম) থলিতে অবস্থান নেয়।
টেস্টিসের বিভিন্ন প্রকার রোগ হয়।
হাইড্রোসিল কিঃ
টেস্টিস বা অ-কোষের দুই আবরণের মাঝে পানি জমলে তাকে হাইড্রোসিল বলে। বিভিন্ন কারণে হাইড্রোসিল হতে পারে। যেমনঃ
১। জন্মগত হাইড্রোসিল।
২। টেস্টিসের ইনফেকশনের জন্য হতে পারে।
৩। গোদরোগ বা ফাইলারিয়াসিস।
৪। টেস্টিসের টিউমার থাকলেও তার কারণে হাইড্রোসিল হতে পারে।
১। জন্মগত হাইড্রোসিল ঃ
শিশুর জন্মের সময় থেকে টেস্টিসের ফোল নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে। এ হাইড্রোসিলের সঙ্গে হারনিয়াও থাকে। ধীরে ধীরে হাইড্রোসিল বড় হতে থাকে। পেটের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে বলে শুয়ে থাকলে অদৃশ্য হয়ে যায়। এ হাইড্রোসিল চিকিৎসা করা অত্যনত্ম জরম্নরী কারণ এর সঙ্গে হার্নিয়ার সংযোগ থাকে।
২। ইনফেকশনের জন্য হাইড্রোসিল:
টেস্টিসের ইনফেকশন হলে এটাকে ইপিডিডাইমো অরকাইটিস বলে। এ ইনফেকশন সাধারণত যৌনবাহিত রোগ। এ জন্য যুবক বয়সেই এই হাইড্রোসিল দেখা যায়। টেস্টিসে প্রচ- ব্যথা ও ফুলে যায় সঙ্গে বেশ জ্্বর ও ব্যথা থাকে। টেস্টিসে এত ব্যথা হয় যে রোগী স্বাভাবিক চলা ফেরা করতে পারে না। সাধারণত প্রস্রাবে জ্বালা পোড়া থাকে। এন্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ওষুধ ও বিশ্রাম এু রোগের জন্য অত্যনত্ম জরম্নরী। সময় মতো চিকিৎসা না হলে টেস্টিসে ফোড়া হয়ে যেতে পারে।
৩। টিউমারের জন্য হাইড্রোসিল ঃ
এ ধরনের হাইড্রোসিল অত্যনত্ম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এ ধরনের হাইড্রোসিল রোগীর কোন প্রকার কষ্ট হয় না। শুধু টেস্টিসের ফোলা আর কিছু নয়।
৪। হাইড্রোসিল হলে কি জটিলতা হতে পারে:
ক) হাইড্রোসিল বড় হয়ে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।
খ) দৈহিক মিলনে প্রতিবন্ধকতার/ বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
গ) ক্যান্সারের কারণে হাইড্রোসিল হলে জীবন বিপন্ন হতে পারে।
ঘ) জন্মগত হাইড্রোসিলের হারনিয়াও থাকে। সেই ৰেত্রে হারনিয়ার জন্য মৃতু্যর ঝুঁকি হতে পারে।
ঙ) ইনফেকশনের কারণে হাইড্রোসিল হলে টেস্টিসে পুঁজ জমতে পারে এবং
চ) প্রজনন ৰমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
অতএব, এ ধরনের সমস্যা হলেই অভিজ্ঞ সার্জনকে দেখিয়ে সঠিক চিকিৎসা নিন।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes