Total Pageviews

Saturday, November 26, 2011

বার্ধক্য ঠেকাতে ‘ড্রাকুলা থেরাপি’

 ‘ড্রাকুলা’ বলতে আমরা এক কথায় বুঝি পিশাচ। যারা মানুষের রক্ত শুষে নেয়। কিন্তু এখন চিকিৎসকরা এই ‘ড্রাকুলা’কে নিয়ে এসেছেন তাদের ল্যাবরেটরিতে। বার্ধক্য ঠেকাতে অবিষ্কার করা নতুন পদ্ধতির নাম দেয়া হয়েছে ‘ড্রাকুলা থেরাপি’।
 
এই থেরাপির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এই থেরাপিটি ‘ড্রাকুলা’র রক্ত শুষে নেয়ার পদ্ধতি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আবিষ্কার করা হয়েছে বলে একে বলা হয় ‘ড্রাকুলা থেরাপি’।
 
এই থেরাপিতে বলিরেখা এবং বার্ধক্য ঠেকাতে নিজের দেহের রক্ত বের করে, ল্যাবরেটরিতে প্রক্রিয়াজাত করে তা আবার নিজ দেহেই ঢোকানো হয়।
 
এই থেরাপির গবেষক বৃটেনের বিএলকে স্পেশালিটি হসপিটালের প্লাসিট এবং কসমেটিক সার্জারি বিভাগের প্রধান এএস বাথ একটি সংবাদ মাধ্যমে এই ‘ড্রাকুলা থেরাপি’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। বাথ বলেন, “এই নতুন পদ্ধতিটি খুবই নির্ভরযোগ্য। আমরা বার্ধক্য ঠেকাতে এখানে রোগীর দেহের রক্ত ব্যবহার করি। রোগীর দেহ থেকে আমরা ১৫-২০ এমএল রক্ত নিই। এবং রক্তের গ্রোথ হরমোনকে প্রকিয়া করি। এরপর তা আবারো রোগীর দেহে প্রয়োগ করি। ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করা রক্ত রোগীর মুখমণ্ডলে ঢোকানো হয়।”
 
বাথ আরো জানান, রক্তের প্লেটলেট রিচ প্লাসমা (রক্তের এক ধরনের উপাদান) বের করে ফেললে রক্তের গ্রোথ হরমোনের উদ্দীপততা আরো বেড়ে যায়। এরপর তা রোগীর দেহে আবারো ঢোকানো হলে তা বার্ধ্যকের বিরুদ্ধে কাজ করে। মাইক্রো নিডেলস বা সুক্ষ্ম সুইয়ের মাধ্যমে এই ব্যথামুক্ত থেরাপিটি সম্পাদন করেন বৃটেনের চিকিৎসকরা। তিন ধাপে এই থেরাপিটি দেয়া হয়। আর প্রতিটি ধাপের জন্য রোগীকে খরচ করতে হয় ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থা এই পদ্ধতিতে বলিরেখা এবং বার্ধক্য ঠেকাতে সর্বসাকুল্যে খরচ হবে এক লক্ষ ১২ হাজার ৫০০ টাকা।
 
এই থেরাপি ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বাথ বলেন, “যেহেতু এখানে রোগীকে আমরা তার নিজের রক্তই তার দেহে প্রয়োগ করছি, তাই এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। তিন মাসে আমরা আটজন রোগীর বার্ধক্য ঠেকাতে এই ‘ড্রাকুলা থেরাপি’ করেছি।”
 
তিনি আরো বলেন, “তবে, ‘ড্রাকুলা থেরাপি’র একটি দিক নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু রক্ত খুবই স্পর্শকাতর একটি উপাদান, তাই এর প্রক্রিয়া করার সময় আমাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ল্যাবরেটরি হতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং চিকিৎসকদের হতে হবে অভিজ্ঞ।”
 
এই থেরাপি নেয়ার বয়সসীমা সম্পর্কে বাথ বলেন, “আপতত ‘ড্রাকুলা থেরাপি’র প্রতি নারীদেরই বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে ত্রিশোর্ধ্ব নারীরাই বেশি এই থেরাপি নিচ্ছেন। তবে, এই থেরাপি ১৮ বছরের পর থেকে যেকোনো ব্যক্তিই নিতে পারবেন।”
 
বার্তা২৪ ডটনেট/আর

চিকিৎসাবিজ্ঞানের সেরা ১৩ আবিষ্কার

ব্লাড গ্রুপ না জানা থাকলে চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব
: কখনো কি ভেবেছেন, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার কোনগুলো? অথবা বিজ্ঞানীদের কোন কোন উদ্ভাবন আমাদেরকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে?
হঠাৎই একদিন মনে হলো বিজ্ঞানীরা আমাদের জন্য কতকিছুই না করছেন৷ তাদের একের পর এক আবিষ্কার আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলছে৷ সেটা বিজ্ঞানের সব শাখার ক্ষেত্রেই সত্য৷ তবে আজ আমরা জানবো চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে৷ এ বিষয়ে তথ্যের জন্য সাহায্য নেই বিজ্ঞানীদের আরেক বিস্ময়কর আবিষ্কার ইন্টারনেটের৷

সেখানে অ্যামেরিকান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ‘ডিসকভারি কমিউনিকেশনস’র বিজ্ঞান বিষয়ক চ্যানেল ‘সায়েন্স’র করা একটি তালিকা খুঁজে পেলাম৷ তারা বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০০টি আবিষ্কারের একটা তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে৷ এর মধ্যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের রয়েছে ১৩টি৷

প্রথমে এসেছে অ্যানাটমি বা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাটাছেঁড়ার বিষয়টি৷ অ্যানাটমির জনক আন্দ্রেয়াস ভেসিলাস ১৫৩৮ সালে প্রথমবারের মতো মরদেহ কেটে ভিতরে কোন্ জিনিস কী অবস্থায় আছে সেটা জানার চেষ্টা করেছিলেন৷ কেননা তার মনে হয়েছিল সঠিকভাবে সার্জারি করার জন্য বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন৷

এরপর এসেছে রক্ত সঞ্চালনের বিষয়৷ অ্যানাটমি আবিষ্কারের প্রায় ৯০ বছর পর উইলিয়াম হার্ভে এ ব্যাপারটি সবার সামনে নিয়ে আসেন৷ তিনি বলেন, মানুষের হৃদপিণ্ড সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে৷

রক্তের যে বিভিন্ন গ্রুপ হতে পারে সেটা প্রথম জানান অস্ট্রিয়ার দুই জীববিজ্ঞানী, ১৯০২ সালে৷ তাদের কারণে ব্লাড ট্রান্সফিউশনের বিষয়টি এখন অনেক নিরাপদ৷

ব্লাড গ্রুপ সম্পর্কে জানার আগেই অবশ্য বিজ্ঞানীরা অ্যানেস্থেশিয়া বিষয়টি জেনে গিয়েছিলেন৷ ১৮৪২ থেকে ১৮৪৬ এই চার বছরের মধ্যেই অনেক বিজ্ঞানী বের করেন যে, কিছু কিছু কেমিক্যালের কারণে রোগীকে ব্যথা দেয়া ছাড়াই সার্জারি করা সম্ভব৷

জার্মান বিজ্ঞানী ভিল্মহেল্ম রোয়ন্টগেন ১৮৯৫ সালে এক্স-রে আবিষ্কার করেন৷ এর ফলে শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞান নয়, লাভবান হয়েছে পদার্থবিদ্যাও৷ ফলে পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম নোবেল পুরস্কারটি পেয়েছেন রোয়্যান্টগেন৷

লুই পাস্তুরের কথা আমরা অনেকেই জানি৷ তাকে বলা হয় ব্যাকটেরিওলজির জনক৷ কারণ ১৮শ’ শতকের দিকে যখন কলেরা, অ্যানথ্রাক্স এসব রোগের উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন পাস্তুরই আবিষ্কার করেন যে, কিছু কিছু মাইক্রোবের কারণে এসব রোগ হয়ে থাকে৷ এসব মাইক্রোব বা জীবাণুর নাম তিনি দেন ব্যাকটেরিয়া৷

ব্যাকটেরিয়া যেমন রোগের কারণ তেমনি পুষ্টিকর খাবারের অভাবেও রোগ হতে পারে৷ ১৯ শতকের প্রথম দিকে এই তত্ত্ব নিয়ে আসেন ফ্রেডেরিক হপকিন্স৷ পরবর্তীতে খাবারের এই সব উপাদানের নাম দেয়া হয় ভিটামিন৷

তালিকায় এরপর এসেছে পেনিসিলিনের নাম৷ আলেকজাণ্ডার ফ্লেমিং এটি আবিষ্কার করেন৷ পরে হাওয়ার্ড ফ্লোরে এবং বরিস চেইন পেনিসিলিন নিয়ে আরও গবেষণা করেন৷ এর এক পর্যায়ে তারা দেখতে পান ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত ইঁদুরকে পেনিসিলিন দিয়ে সারিয়ে তোলা যাচ্ছে৷

১৯৩০ এর দশকে গেরহার্ড ডোমাক’র আবিষ্কার ‘সালফা ড্রাগস’ও ব্যাকটিরায়জনিত রোগ নিরাময়ে কাজ করে৷

ইংরেজ চিকিৎসক এডওয়ার্ড জেনার ১৭৯৬ সালে ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেন৷ ১৭৮৮ সালে ব্রিটেনের বিভিন্ন গ্রামে মহামারি আকারে গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পড়লে সেটা থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন জেনার৷ এর ফলশ্রুতিতেই পরবর্তীতে তিনি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সমর্থ হন৷

ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন অনেকটা সহজ করে দিয়েছে ইনসুলিন৷ রক্তে সুগার বা চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে এই হরমোন৷ ১৯২০ এর দশকে ইনসুলিনের আগমনের আগে ডায়াবেটিস রোগ মানেই মনে করা হতো ধীরে ধীরে রোগীর নিশ্চিত মৃত্যু৷

হ্যারল্ড ভার্মুস এবং মাইকেল বিশপ ১৯৭৫ সালে অঙ্কোজিনের সন্ধান দেন৷ এটা এমন এক জিন, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে৷

সবশেষে এসেছে এইডস রোগের কারণ এইচআইভি ভাইরাসের আবিষ্কার৷ একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই বিজ্ঞানী  রবার্ট গেলো এবং লুক মন্টাজনিয়ের ১৯৮০’র দশকে এই ভাইরাসের সন্ধান দিয়েছিলেন৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

বার্তা২৪ ডটনেট/এসএফ

আয়নার কেরামতিতে কমবে বাতের ব্যথা

বাতের ব্যথা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া খুব সহজেই সম্ভব না। কিন্তু এই ব্যথা কামানোর খুব সহজ এবং সস্তা একটি পথ সম্প্রতি খুঁজে বের করেছেন একদল গবেষক। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক আয়না দিয়ে বাতের ব্যথা কমানোর খুব সহজ একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন।
 
ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষকরা এই পদ্ধতির নাম দিয়েছেন ‘মিরর ট্রিক’। তারা জানিয়েছেন, এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাতের ব্যথা পুরোপুরি সারানো না গেলেও কিছু সময়ের জন্য মস্তিষ্ককে ফাঁকি দিয়ে ব্যথামুক্ত থাকা যায়।
 
এই গবেষণার প্রধান গবেষক লরা কেস বলেন, “আমাদের গবেষণা থেকে যে পদ্ধতিটি বেরিয়ে আসলো তা খুবই সহজ এবং সস্তা। এর মাধ্যমে, আয়না দিয়ে বাতের ব্যথাসহ মাংসপেশীর অসাড়তা এবং আঘাতজনিত ব্যথাও দূর করা সম্ভব।”
 
এই ‘মিরর ট্রিক’র ব্যাপারে লরা জানান, এই পদ্ধতিতে রোগীর যদি বাম হাতে বাতের ব্যথা থাকে তাহলে একটি টেবিলে ওই হাতটি রাখা হয় এবং একটি বড় আয়না দিয়ে সেই হাতটি ঢেকে দেয়া হয়। এরপর রোগীর ডান হাত টেবিলের ওপর তোলা হয়। হাতটি এমনভাবে রাখতে হবে যেন ডান হাতের প্রতিবিম্বটি গিয়ে ঠিক বাম হাতের জায়গায় পড়ে। প্রতিবিম্বটি দেখলে যেন দেখলে মনে হয় এটা রোগীর বাম হাতই। এরপর রোগীর সামনে দাঁড়াবেন একজন চিকিৎসক যিনি রোগীকে বামদিকের আয়নার দিকে তাকিয়ে ডান হাত নাড়াতে বলবেন। এভাবেই কিছুক্ষণ রোগী তার ডান হাত বিভিন্ন ভাবে নাড়াবেন এবং আয়নার দিকে তাকিয়ে তা দেখবেন। এতে কিছুক্ষণ পর রোগী তার বাম হাতের ব্যথা কম অনুভব করবে।
 
লরা বলেন, “শুনতে অদ্ভূত মনে হলেও, আমরা এই ‘মিরর ট্রিক’ খেবে ইতিবাচক ফল পেয়েছি। আমাদের দেয়া ‘মিরর ট্রিক’-এ গড়ে প্রতি ১০ জন রোগীর একজন ইতিবাচক ফলাফল পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এই পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ নির্ভর করে রোগীর মানসিক অবস্থার ওপর এবং তার সদিচ্ছার ওপর।”
 
বার্তা২৪ ডটনেট/আর

প্লেট বলে দেবে খাবার পরিমাণ

 বৃটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস) এমন একটি খাবার প্লেট আবিষ্কার করেছে, যা বলে দেবে কে, কতটুকু খাবে, কিভাবে খাবে?
 
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই প্লেট স্থূল ব্যক্তিদের জন্য অনেক উপকারী একটি যন্ত্র। কারণ, কোনো স্থূল ব্যক্তি যখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার প্লেটে তুলবে তখনই সতর্কবাণী বেজে উঠবে, বেশি দ্রুত খাওয়া শুরু করলে কথা বলে উঠবে প্লেটটি।
 
অদ্ভূত এই যন্ত্রটির নাম হলো ‘ম্যান্ডোমিটার’। বৃটেনের বাজারে এটা ১৫০০ পাউন্ডের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে।
 
‘ম্যানন্ডেমিটার’ তৈরি হয়েছে সুইডেনে। এরপর এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। এই গবেষণার প্রধান প্রফেসর জুলিয়ান হ্যামিলটন শিল্ড বলেন, “আমরা প্রায় ৬০০ বৃটিশ পরিবারকে ম্যান্ডোমিটার দিই। এই ৬০০ পরিবারে অন্তত দুই সদস্য স্থূলতার সমস্যায় ভুগছে। তাদের ম্যান্ডোমিটার দেয়ার পর এক বছর পর্যবেক্ষণ করি। এবং দেখতে পাই ছয় মাস ম্যান্ডেমিটার তাদের খাবার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। এরপরের ছয় মাস আর তাদের ম্যান্ডোমিটারের প্রয়োজন হয়নি। এমনিতেই তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসছে।”
 
এই যন্ত্রটির আছে তিনটি অংশ। একটি প্লেট, প্লেটের নিচে একটি ছোট্ট মিটার এবং একটি স্ক্রিন। ওই স্ক্রিনে আগে থেকেই দিয়ে দেয়া হয় স্থূল ব্যক্তির বয়স, ওজন এবং উচ্চতা। এরপর বয়স, ওজন এবং উচ্চতার তুলনায় প্লেটে বেশি খাবার তুলে নিলে সংকেত দেয় মনিটর। এরপর যদি খাবার বেশি দ্রুত বা প্লেট থেকে প্রয়োজনের তুলনা বেশি তুলে ফেলে তাহলে কথা বলে উঠে প্লেটটি। সতর্ক করে বলে, “প্লিজ ইট মোর স্লোলি”। আর খাবার শেষে প্লেটটি প্রশ্নও করে, “আর উই ফিলিং ফুল ইয়েট?”
 
ম্যান্ডোমিটার নিয়ে গবেষণা শেষে এর ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিকেল রিসার্চ ইউনিট থেকে বলা হয়েছে, ম্যান্ডোমিটার থেকে স্থূলতার সমস্যা নিরসনে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তাই এখন এটা বাজারে ছাড়া হয়েছে এবং এর জন্য যথেষ্ট সাড়াও পাওয়া গেছে।
 
বার্তা২৪ ডটনেট/আর

ডায়রিয়া চিকিৎসায় আমিষের ভূমিকা অপরিহার্য

ডায়রিয়া ও কলেরা চিকিৎসায় আমিষের ভূমিকা অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির ‘কলেরা ও ডায়রিয়া চিকিৎসায় আমিষের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনায় এই অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবি’র সাবেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. শাহাদত হোসেন। আরো আলেচনা করেন, অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব, ড. নিতাই কান্তি দাসসহ বিশেষজ্ঞরা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন পিএসটিসির কো অর্ডিনেটর শশাঙ্ক বরণ রায়।

আলোচকরা জানান, ডায়রিয়া ও কলেরা প্রতিরোধে ঔষধ ও পথ্যের পাশাপাশি আমিষ জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপুর্ণ। এ ব্যপারে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। মহাখালীর কলেরা হাসপাতালের রুগিদের খাবার তালিকা থেকে মাংস ও ডিম সরবরাহ বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে এটি আবার চালু করার কথা বলা হয়।

বার্তা২৪ ডটনেট/এসপি/জাই

ফুড আর মুডের সম্পর্ক

 আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস শুধু আমাদের শরীরেই প্রভাব ফেলে না, খাদ্যের ধরনের ওপর নির্ভর করে আমাদের মুডও।
 
সম্প্রতি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিয়ানস এমন কিছু খাবার এবং খাদ্য উপাদানের কথা জানালো যা আমাদের মেজাজকে ভালো এবং চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
 
·      ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড। এই এসিড আমাদের গরম মেজাজ বা অশান্ত মনকে কাবু করতে সাহায্য করে। ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায় সামুদ্রিক মাছ এবং আখরোটে।
·      মুরগি ও গরুর গোশত, সয়া এবং দুগ্ধজাত খাদ্যে থাকে ট্রাইপটোফান নামের এক ধরনের উপদান। যার নিয়মিত গ্রহণের ফলে উত্তেজিত এবং অস্থির মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ।
·      সবুজ শাক-সবজি এবং বাদামে থাকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। সুস্থ, শান্ত এবং স্থির মানসিক স্বাস্থের জন্য এই উপদানটিও অনেক উপকারী।
·      সবুজ শাক-সবাজতে আরো এক ধরনের উপকারী উপাদান আছে, যার নাম ফলিক এসিড। এই উপাদানটি তাজা রঙিন ফলেও পাওয়া যায়। এই উপাদানটি মস্তিষ্কে এক ধরনের স্থির অবস্থার সৃষ্টি করে এবং চাঞ্চল্য কমায়। এর ফলে আপনার মুড বা মেজাজ থাকে ফুরফুরে।
·      খাদ্যের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত মেজাজ-মর্জিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আরেকটি উপকারী উপাদান হলো ভিটামিন বি-১২। দুগ্ধজাত খাবার, গোশত এবং মাছে এই উপাদানটি থাকে প্রচুর পরিমাণে। এর মাধ্যমে মস্তিষ্ক সুশৃঙ্খলভাবে তার কাজগুলো সম্পাদন করে, যার ফলে মেজাজও ঘন ঘন বিগড়ে যায় না।
 
মেজাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এই দিকনির্দেশনার পাশাপাশি আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিয়ানস আরো জানিয়েছে, এই সব খাদ্য নিয়মিত গ্রহণের ফলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকলে মেজাজ মর্জি থাকবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, আমেরিকার অধিকাংশ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডিপ্রেশন এবং শর্ট টেম্পারড রোগীদের এই খাবারগুলো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
 
বার্তা২৪ ডটনেট/আর/এসএফ

Saturday, November 19, 2011

 প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট ব্যায়াম, কী আশ্চর্য ফল!

পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট-এ। দেখা গেছে, নিষ্ক্রিয় লোক, ঘরে বসে থাকা যাঁদের অভ্যেস, তাঁরা যদি প্রতিদিন ১৫ মিনিট মাত্র ব্যায়াম করেন, তাহলে মৃত্যুঝুঁকি কমে ১৪% এবং প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়ে যায় তিন বছর। নিষ্ক্রিয় লোক এবং সক্রিয় লোক যাঁরা নানা কাজে, নানা শরীরচর্চায় বা শ্রমের কাজে নিয়োজিত—এই দুই দলের মধ্যে তুলনা করে এমন ফল এসেছে।
অনেক স্বাস্থ্য সংস্থা, যেমন—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শরীরচর্চার হিতকরী ফলকে স্বীকার করেছেন এবং হপ্তায় ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়ামের পরামর্শও দিয়েছেন। তবে এই পরামর্শের চেয়ে কম সময় ব্যায়াম করলে গড় আয়ুর ওপর কী প্রভাব পড়ে, তা অস্পষ্ট।
তাইওয়ান ও চীন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ন্যাশনাল হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডা. চিপাংওয়েন এবং ন্যাশনাল তাইওয়ান স্পোর্ট ইউনিভার্সিটির ড. জ্যাকসন পুই মানউই ও সহকর্মীরা নানা মানের শরীরচর্চার স্বাস্থ্য হিতকরী ফল যাচাই করে দেখেছেন।
এরই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন চার লাখের বেশি মানুষ, যাঁরা তাইওয়ানে ১৯৯৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মেডিকেল স্ক্রিনিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের ফলোআপ করা হলো গড়ে আট বছর। এঁরা প্রতি হপ্তায় যা শরীরচর্চা করেন বলে নিজেরা বললেন, এই তথ্যসূত্র ধরে তাঁদের ব্যায়ামের মানের পাঁচটি ধাপে ভাগ করা হলো: নিষ্ক্রিয়, কম শরীরচর্চা, মাঝারি শরীরচর্চা, উঁচু মান ও অতি উঁচু মানের শরীরচর্চা। নিষ্ক্রিয় গ্রুপের সঙ্গে প্রতিটি গ্রুপের তুলনা করে বিপর্যয় অনুপাত গণনা করা হলো, প্রতি দলের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও গণনা করা হলো।

কম মান শরীরচর্চাতেও বেশ ফল
নিষ্ক্রিয় যাঁরা, একেবারেই ব্যায়াম করেন না, এঁদের সঙ্গে যাঁরা কম শরীরচর্চা করেন তুলনা করলে, অর্থাৎ যাঁরা হপ্তায় মাত্র ৯২ মিনিট ব্যায়াম করেছেন (দিনে মাত্র ১৫ মিনিট) এদের মৃত্যুঝুঁকি কমে ১৪%, ক্যানসারে মৃত্যুঝুঁকি কমে ১০%, প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়ে তিন বছর। প্রতিদিন ন্যূনতম ১৫ মিনিট শরীরচর্চাকালের চেয়ে বাড়তি আরও ১৫ মিনিট বেশি শরীরচর্চা করলে মৃত্যুঝুঁকি আরও ৪% কমে, ক্যানসারে মৃত্যুঝুঁকি কমে আরও ১%। সব বয়স ও জেন্ডারে এটি প্রযোজ্য। যাঁদের হূদেরাগের ঝুঁকি, তাঁদের জন্যও।
তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয় লোকদের মৃত্যুঝুঁকি কম শরীরচর্চা লোকদের চেয়ে ১৭% বেশি। গবেষকদের মন্তব্য: ‘সামান্য যে পরিমাণ ব্যায়ামের পরামর্শ আমরা দিচ্ছি, তা মেনে চললেও হূদেরাগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে মৃত্যুহার তাৎপর্যপূর্ণভাবে হ্রাস করা সম্ভব। ‘কম মাত্রা শরীরচর্চা’ ও অসংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে, কেন্দ্রীয় ভূমিকা গ্রহণ করবে, কমে যাবে চিকিৎসাগত ব্যয় ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বৈষম্য।’
মন্ট্রিয়াল হার্ট ইনস্টিটিউটের ও কুইবেক, কানাডার ইউনিভার্সিটি দ্য মন্ট্রিয়ালের ডা. অনিল নিগাম ও মার্টিন জুনাউ বললেন, ‘সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিন মাত্র ১৫ মিনিট শরীরচর্চা করলে যে মৃত্যুঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব, এই তথ্যটি অনেককে তাঁদের ব্যস্ত জীবনে সামান্য সময়ের শরীরচর্চাকে অন্তর্ভুক্ত করতে উৎসাহিত করবে।’ সরকার ও স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের দায়িত্ব হলো এই সংবাদ জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সামান্য হলেও শরীরচর্চা করা, সক্রিয় জীবন যাপন করতে জনগণকে বোঝানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রয়েছে এঁদের। এই গবেষণা থেকে স্পষ্ট, সামান্য পরিমাণ শরীরচর্চাও ভালো, বেশি করলে আরও ভালো।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করুন, এখনই

ডায়াবেটিসের রোগীকে ইনসুলিন প্রয়োগে শিক্ষা দিচ্ছেন বারডেম হাসপাতালের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের ডায়াবেটিসের রোগীকে ইনসুলিন প্রয়োগে শিক্ষা দিচ্ছেন বারডেম হাসপাতালের স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের কর্মী
ছবি: সৈকত ভদ্র
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
এন্ডোক্রাইন ও মেটাবলিজম বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল

১৪ নভেম্বর স্যার ফ্রেডেরিক গ্রান্ট বেনটিং নামের এক অসাধারণ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর জন্মদিন, ১৯২২ সালে যাঁর ইনসুলিন আবিষ্কার দুনিয়ার লক্ষ-কোটি ডায়াবেটিসের রোগীকে দেখিয়েছিল জীবনের আলো। তাই এই ১৪ নভেম্বর দিনটিকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) বেছে নেয় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে। আজকের ৭০০ কোটি মানুষের এই বিশ্বে ২৮৫ মিলিয়ন মানুষ নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ২০৩০ সালে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। এই বিশালসংখ্যক ডায়াবেটিসের রোগীর ৭০ শতাংশেরই বসবাস দরিদ্র ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে স্বাস্থ্য তথা ডায়াবেটিস খাতে বার্ষিক বরাদ্দ সবচেয়ে কম। আর বিজ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ২০৩০ সালে বাংলাদেশ হতে যাচ্ছে বিশ্বে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে অষ্টম দেশ। তাই ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর ধরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের বক্তব্য একটাই—ডায়াবেটিস সম্পর্কে শিক্ষা নিতে হবে এবং একে প্রতিরোধ করতে হবে। একটি নীল বৃত্তের মধ্যে জড়ো হতে হবে বিশ্বের সবাইকে, যেখানে স্লোগান থাকবে—ডায়াবেটিসকে নিয়ে কাজ করুন, এখনই।

চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে এই অঞ্চলে মানুষের গড় আয়ু ছিল অনেক কম। কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত ইত্যাদি সংক্রামক রোগের আক্রমণে উজাড় হতো গ্রামের পর গ্রাম। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতি ও নিরাপদ পানি বা খাদ্যের সরবরাহ এসব সংক্রামক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে অনেক। আর তাই বয়সজনিত জটিলতা, যেমন—ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হূদেরাগ ইত্যাদি এখন হয়ে উঠেছে বড় ঘাতক। সত্তর দশকের শুরুতে প্রথম যখন আমরা ডায়াবেটিস নিয়ে এ দেশে কাজ করতে শুরু করি, তখন ডায়াবেটিসের প্রকোপ ছিল মোট জনসাধারণের মাত্র ১ শতাংশের মতো। আজ ৪০ বছর পর মোট জনগণের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ডায়াবেটিসের রোগী। বর্তমানে ২০ থেকে ৭৯ বছর বয়সী প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বাংলাদেশে এই ভয়ংকর ব্যাধিতে আক্রান্ত। আর আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ডায়াবেটিস-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর অষ্টম দেশ। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তাই আজ এক মারাত্মক ঝুঁকির সম্মুখীন। ডায়াবেটিসের কারণে আমরা হারাব কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় এক তরুণ যুবা প্রজন্মকে, যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মন্দ প্রভাব গোটা জাতিকে স্থবির করে দেবে। ডায়াবেটিসের কারণে অন্ধত্ব, কিডনি ও হূদ্যন্ত্র বিকল হওয়া, পা কাটা যাওয়া হাজার হাজার রোগী নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে, পরিবারের ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তাই এখনই সময় এই ব্যাধিকে প্রতিহত করার, প্রতিরোধ গড়ে তোলার। আর এই প্রতিরোধ কেবল চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবকদের কাজ নয়, এটি হবে একটি সামাজিক প্রতিরোধ।

চিকিৎসার আগে প্রতিরোধ, কেন?
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এক অভাবনীয় দ্রুততার সঙ্গে আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম হয়ে যাচ্ছে শহর, শহর হয়ে যাচ্ছে বস্তি, জীবনযাত্রা পরিবর্তিত হচ্ছে দ্রুত, বাজার সংস্কৃতি ও প্রতিযোগিতা জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন স্ট্রেস বা চাপের। খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচরণ, মানসিক গঠন, চাল-চরিত্র ও সংস্কৃতি পরিবর্তনের ধাক্কাগুলো এখানেই এসে লাগে বেশি। গবেষণাগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগের জন্য পারিবারিক ও জেনেটিক ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ হলেও তৃতীয় বিশ্বে পারিপার্শ্বিক কারণগুলোই হয়ে উঠছে মুখ্য। স্থূলতা, মন্দ খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ, উত্তেজনা—এ সবই হচ্ছে ডায়াবেটিসের পারিপার্শ্বিক কারণ। অধিক ক্যালরিসমৃদ্ধ ও অধিক চর্বি-শর্করাজাতীয় খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতা বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খেলার মাঠের অভাব, বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা-স্পোর্টস-খেলাধুলার সংস্কৃতির বিলোপ, টেলিভিশন-কম্পিউটার গেম-ফেসবুককেন্দ্রিক শহুরে অলস জীবন, গাড়ি-লিফট-চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহারের প্রবণতা, ছেলেবেলা থেকেই অত্যধিক প্রতিযোগিতা ও মানসিক চাপ। গ্রামের শিশুদের ছেলেবেলার অপুষ্টি এবং বড় হয়ে শহরে অভিবাসনের পর অধিক পুষ্টির মন্দ চক্রও এখানে ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। এই শিশু-কিশোরেরা তরুণ হতে না-হতেই পড়ছে ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও হূদেরাগের ঝুঁকিতে। চল্লিশ না পেরোতেই আক্রান্ত হচ্ছে মারাত্মক সব রোগে। যে রোগগুলো আগে ৫০ বা ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে দেখা যেত, সেগুলো এখন ৩০-৪০ বছরের তরুণ যুবাদের আক্রমণ করছে। নষ্ট করে দিচ্ছে তাদের কর্মক্ষমতা ও সম্ভাবনাগুলো। গবেষকেরা বলেন, শতকরা ৫০ ভাগ ডায়াবেটিস ধরা পড়ার আগেই শরীরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন—চোখ, কিডনি, হার্ট, স্নায়ু ইত্যাদিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। তাই ডায়াবেটিস হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করতে হবে। ডায়াবেটিসজনিত অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্বকে প্রতিরোধ করতে হলে গোড়ায় ঠেকানো ছাড়া বিকল্প নেই। আর শুধু জীবনযাত্রার একটুখানি পরিবর্তন, একটু সচেতনতা ও সদিচ্ছা শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করতে পারে।

প্রতিরোধ, কীভাবে?
ডায়াবেটিস রোগে প্রতিরোধ বলতে সুস্পষ্টভাবে তিন ধরনের বা তিনটি ধাপে প্রতিরোধ করার কথা বলা হয়। প্রথমটি হচ্ছে প্রাথমিক প্রতিরোধ বা প্রাইমারি প্রিভেনশন। অর্থাৎ রোগ হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করা। রোগটি আদতে না হতে দেওয়া। এ জন্য চাই সামাজিক সচেতনতা। ছোটবেলা থেকেই সবুজ শাকসবজি, মাছ ও কম চর্বি-শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে সবাইকে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে যেমন গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে, তেমনিভাবে মন্দ খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। শিশু, কিশোর ও বয়স্ক—সবার মধ্যেই কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলার মাঠ ছাড়া কোনো স্কুল-কলেজ থাকতে পারবে না। পাড়ায় পাড়ায় চাই পার্ক বা খোলা জায়গা, চাই হাঁটার উপযোগী ফুটপাত, সর্বোপরি নিরাপদে হাঁটার পরিবেশ। এই সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্তি, মিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষক-ধর্মীয় নেতা-সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ, সমাজকর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতিরোধের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা প্রদান। রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে অবগতি, কখন কেন রক্তের চিনি পরীক্ষা করা জরুরি, শনাক্তকরণ পরীক্ষার সহজলভ্যতা ও ব্যয় সংকোচন—এই বিষয়গুলো সেকেন্ডারি প্রিভেনশনের আওতায় পড়ে।
চল্লিশ-পরবর্তী সব নাগরিকের অন্তত তিন বছর পরপর ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা জরুরি। স্থূলতা, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি ঝুঁকি থেকে থাকলে বছরে একবার। গর্ভবতী হওয়ার পর অবশ্যই প্রতিবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে হবে। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা শুরু করলে অনেক জটিলতাই এড়ানো সম্ভব। তৃতীয় ধাপে আছে যাদের ইতিমধ্যে জটিলতা দেখা দিয়েছে তাদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া ও আরও জটিলতা এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। ডায়াবেটিস নীরবে রোগীর চোখ, রক্তনালি, হার্ট, কিডনি, স্নায়ুতন্ত্র ও পদযুগলের ভয়ানক ক্ষতি করে থাকে। জটিল রোগীদের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা ও পুনর্বাসন করাও ডায়াবেটিস চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আসুন, সবাই মিলে কাজ করি
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একটি সমন্বিত, সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিৎসক, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনো এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতি স্তরে, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত—সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে একে প্রতিরোধ করার জন্য। আসুন, একটি সুস্থ, কর্মোদ্যম ও প্রাণবন্ত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে সবাই মিলে এই নীরব ঘাতকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি।

শ্বাসনালীতে কফ ও কাশির কারণ


সর্দি-জ্বর কমন কোল্ড বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিচিত রোগ। আমাদের দেশে সম্ভবত এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যার বছরে অন্তত দু’একবার সর্দি জ্বর হয়নি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসপাড়ায় প্রায়ই হাঁচি দিতে থাকা অথবা নাকের পানি মুছতে থাকা লোকজন নজরে পড়ে। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চিকিৎসক-প্রকৌশলী আমরা কেউ এ রোগ থেকে মুক্ত নই। ফ্লু ভাইরাস প্রধানত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়। অর্থাৎ ফ্লু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি উন্মুক্ত স্থানে হাঁচি দেয় তাহলে এক মিটার বা এক হাতের মধ্যে থাকা সুস্থ ব্যক্তিটিও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বাতাসে হাঁচি-কাশি না দেয় তাহলে তার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এ ভাইরাস সুস্থ মানুষের নাক দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালীর উপরের অংশে অবস্থান করে এবং এক-পাঁচ দিন কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই এখানে অবস্থান করে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি শ্বাসতন্ত্রের নিচের অংশে গিয়ে মারাত্মক লক্ষণ যেমন মিউমোনিয়া প্রকাশ করে।
সাধারণত সর্দিজ্বর বা ঠাণ্ডা লাগলে সবারই কমবেশি কিছুটা কাশি হয়। কখনো শুকনো, কখনো সামান্য কফও বের হয়। ফ্লু-জনিত বা গলায় সামান্য প্রদাহের কারণে কাশি তেমন অসুবিধার সৃষ্টি করে না, দু-চার দিন পর উপশম হয় এবং কাশির জন্য খুব বেশি ওষুধের দরকারও হয় না। কিন্তু কিছু রোগে কাশি একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেয় এবং বেশ কয়েক দিন কাশি থাকে। কাশি রোগ নয়, কিন্তু রোগের উপসর্গ। এ জন্য সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ খেলে দীর্ঘমেয়াদী ভালো হয়ে যায়। শ্বাসনালীতে কফ ও কাশির কারণ সম্পর্কে সাপ্তাহিক-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত আলোচনা করছেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট ডা. মকছুদ আহমদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুর রহমান
সাপ্তাহিক : কফ কী?
ডা. মকছুদ আহমদ : কফ মানে Sputum। এটা শ্বাস নালীতে তৈরি এবং সেখান থেকে নিঃসৃত রস যা কাশির মাধ্যমে শ্বাসনালী থেকে বের হয়ে আসে তাকেই কফ বলা হয়।
কাশি হচ্ছে যে কোনো বাইরের জিনিস শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে শরীরের Protective mechanism এর ফলে শ্বাসনালী তা কফের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়- এই প্রক্রিয়াকে কাশি বলা হয়।
সাপ্তাহিক : কফ সাধারণত কেন হয়?
ডা. মকছুদ আহমদ : যে কোনো কারণে শ্বাসনালীতে ইনফেকশন বা Stimulation হলে কফের সৃষ্টি হয়। যেমন- Viral Infection, Bacterial infection ইত্যাদি।
সাপ্তহিক : কফ কত প্রকারের হতে পারে?
ডা. মকছুদ আহমদ : কফ সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে। যেমন ১. Dry Cough বা শ্লেষাহীন কফ  ২. Productive Cough বা শ্লেষযুক্ত কফ।
সাপ্তাহিক : বিভিন্ন প্রকারের কাশির লক্ষণগুলো কী কী?
ডা. মকছুদ আহমদ : ১. হাঁপানি বা  অ্যাজমার কাশির লক্ষণসমূহ হচ্ছে শেষ রাতে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বাড়ে।
সাধারণত শুকনা কাশি বা Dry Cough হয়।
মাঝে মাঝে জমাট বাঁধা শ্লেষ বের হয়ে আসে।
২. COPD বা শ্বাসনালীর স্থায়ী বাধাজনিত কাশিÑ
Pulmonary Emphysema- সাধারণত : শুকনা কাশি বা Dry Cough- শ্বাসকষ্ট-
ব্রংকার্স্টিস Productive বা শ্লেষযুক্ত কফ কাশি হতে পারে।
তাছাড়া এই প্রকারের কাশি সকাল বেলায় বেশি হয় ।
ব্রক্লিএকটেটিস এর ক্ষেত্রে হলুদ হলুদ- পরিমাণে অনেক বেশি দুর্গন্ধ কাশি বের হয়ে আসে
সাপ্তাহিক : কফ ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে কি কি জটিলতা তৈরি করতে পারে?
ডা. মকছুদ আহমদ : কফ ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. নিউমোনিয়া
২. ব্রক্লিএকটেটিস
৩. টিবি
ইত্যাদি শ্বাসনালীর রোগ হতে পারে ।
সাপ্তাহিক : Respiratory Tract infection কি কাশি তৈরি করে।
ডা. মকছুদ আহমদ : Respiratory Tract infection দুই ধরনের-
Upper respiratory tract infection & Lower respiratory tract infection
উভয় ধরনের ওহভবপঃরড়হ ই-কাশি তৈরি করে তবে নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা খজঞও বেশি কাশি ও কফ তৈরি করে।
সাপ্তাহিক : বিভিন্ন ধরনের কফের চিকিৎসাগুলো কী কী?
ডা. মকছুদ আহমদ : ১. বেশি বেশি কাশি কিন্তু কফ কম এই ক্ষেত্রে Cough suppressant বা Cough নিবারণ ওষুধ কার্যকরী।
২. কম কম কাশি কিন্তু বেশি বেশি কফ হলে Cough expectorant বা কফ উত্তেজনক ওষুধ কার্যকরী-
সাপ্তাহিক : নির্দিষ্ট ধরনের কফের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের কফ সিরাপ সেবন করা কতটা জরুরি।
ডা. মকছুদ আহমদ : কফের চিকিৎসায় কফ সিরাপ জরুরি নয়- কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করাই শ্রেয়।
সাপ্তাহিক : কাশি বা কফ কি ছোয়াছে রোগ?
ডা. মকছুদ আহমদ : হ্যাঁ, কিছু কিছু কফ কাশি ছোয়াছে যেমন- Emphysema, Tuberculosis.
কিছু কিছু কাশি ছোয়াছে নয় যেমন-Asthma, COPD-র কাশি।
সাপ্তাহিক : কফের মাধ্যমে যাতে Infection ছড়াতে না পারে সে জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ডা. মকছুদ আহমদ : কাশির সময় মুখে রুমাল, মাকস্ বা হাত ব্যবহার করুন।
* যেখানে সেখানে থুথু ফেলবেন না
* ব্যবহারের পর রুমাল কাপড় ও হাত পরিষ্কার করুন।
ছবি : কাজী তাইফুর
ডা. মকছুদ আহমদ
এমবিবিএস ডিটিসিডি (ডিইউ)
এফসিপিপি (ইউএসএ)
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী ঢাকা।
(হৃদরোগে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত-এনআইসিভিডি, ঢাকা)
চেম্বার :
বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা.) লি.
চ-১০৭/২, উত্তর বাড্ডা (প্রগতি সরণী)
ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮৫৭৮২৮-৩০
মোবাইল : ০১৭৩১-৩৯৮৯৯২
রোগি দেখার সময় :
বিকেল ৫টা-৮টা

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes