Total Pageviews

Wednesday, October 5, 2011

উজ্জীবিত দিনের জন্য

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

দিনে মন-মেজাজ চনমনে রাখতে খাদ্যের ভূমিকা আছে, তা জানেন কজন? অনেকে জানেন। এনার্জিও উজ্জীবিত হয়। কথায় আছে, ‘দিনে একটি আপেল খেলে ডাক্তার থাকে দূরে’। আমরা যা খাই, এর সঙ্গে আমাদের মেজাজ, অনুভূতি—এসবের সম্পর্ক নিয়ে ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। প্রমাণ আছে, খাবারে পরিবর্তন আনলে বিপাককর্ম যায় বদলে, বদলে যায় মগজের রসায়ন; শরীরের এনার্জি মান ও মেজাজ—দুটোই হয় প্রভাবিত।
শুরু হোক: খাদ্য এনার্জির উজ্জীবন ঘটায় তিনভাবে। পর্যাপ্ত ক্যালরি জুগিয়ে, ক্যাফিনের মতো উদ্দীপক সরবরাহ করে, বিপাককর্মকে আরও বেশি জ্বালানি কার্যকরভাবে পোড়াতে সহায়তা করে। মেজাজ প্রসঙ্গে: শ্রেষ্ঠ খাবার হলো সেগুলো, যেগুলো রক্তের সুগারে সুস্থিতি আনে, নিঃসৃত করে সুখানুভূতি উদ্দীপক বস্তুর, যেমন—সেরোটনিন।
স্মার্ট শ্বেতসার: শ্বেতসার-শর্করা নিয়ে ভাবনা, তবে এনার্জি ও মেজাজ উজ্জীবনে এর ভূমিকা বড়। শরীর শ্বেতসারকে দহন করে জ্বালানি পেতে চায়। এ ছাড়া খেলে সেরোটনিন মানও বাড়ে। তাই মিষ্টিমণ্ডা না খেলে হলো, রক্তের সুগার উথাল-পাতাল হবে, তাই মেজাজেরও হবে চড়াই-উতরাই। ক্লান্তি ও বদমেজাজ; বরং গোটা শস্য, তুষ, ছাতু, আটার রুটি, লাল চাল, শস্য হলে হলো। ভালো। শরীর গোটা শস্যকে শোষণ করে ধীরে, তাই রক্তসুগার ও এনার্জি মান থাকে সুস্থিত।
কাজুবাদাম, বাদাম হেজেলনাট: এই বাদামগুলো কেবল যে প্রোটিনসমৃদ্ধ তা-ই নয়, এগুলোতে আছে ম্যাগনেশিয়াম। সুগারকে এনার্জিতে রূপান্তরে এর রয়েছে বড় ভূমিকা। দেখা গেছে, ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি হলে শক্তি নিঃশেষিত হয়। ম্যাগনেশিয়াম আরও আছে গোটা শস্য, তুষ, হ্যালিবাট মাছেও।
ব্রোজিল নাটস: ব্রোজিল নাটস খেলে পাওয়া যাবে খনিজ সেলেনিয়াম। মেজাজ করে চনমনে। সেলেনিয়াম ঘাটতি হলে মেজাজ বিগড়ে যায়। মাংসে, সমুদ্রের খাদ্যে, বিনস ও গোটা শস্যেও আছে সেলেনিয়াম।
কচি মাংস: কচি মোরগ ও অন্যান্য মাংসে আছে, যেমন—কৃষ আমিষ, তেমনি অ্যামিনো এসিড টাইরোসিন। টাইরোসিন ডোপামিন ও নবইপিনেফ্রিন মান উজ্জীবিত করে মগজের এই রাসায়নিক মনকে করে সজাগ ও তীক্ষ। মাংসে আছে ভিটামিন বি১২, অনিদ্রা ও বিষণ্নতায় উপকারী।
সামুদ্রিক মাছ: তৈলাক্ত মাছ, যেমন—স্যামন মাছে আছে ওমেগা৩ মেদ-অম্ল, বিষণ্নতায় উপযোগী। হূৎ স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। বাদাম ও পত্রবহুল সবজিতেও আছে এই মেদ-অম্ল।
পত্রবহুল সবজি
বিষণ্নতা দূর করতে আরেকটি উপকরণ হলো ভিটামিন ‘ফলেট’; আছে পত্রবহুল সবজি, যেমন—পালংশাক, লেটুস-জাতীয় শাকে। ডাল, বাদাম ও কমলাতেও আছে বেশ।
আঁশ: আঁশ এনার্জিতে আনে সুস্থিতি। ধীর করে পরিপাক ক্রিয়া, এনার্জির ধীরস্থির জোগান সহায়তা করে, সারা দিন। বিনস, বাদাম, সবজি, আটার রুটি, ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খান, আঁশ পাবেন।
পানি: নিরুদন ও ক্লান্তি চলে সঙ্গে সঙ্গে। হাত ধরে। এমনকি মৃদু নিরুদনও ধীর করে বিপাক; শুষে নেয় এনার্জি। সমাধান সহজ—প্রচুর পানি পান করুন।
তাজা ফল-সবজি: তরল ভরপুর সবজি খাবেন, খাবেন রসাল ফল। তাহলে সজল থাকা যাবে। প্যাকেট স্ন্যাকস নয়, তাজা ফল। ওটমিল। পায়েস, ফলের রস। শরবত, চিনি ছাড়া।
কফি: বেশ উদ্দীপক। ক্ষণকালের জন্য বেশ কাজের। তবে বেশি পান ঠিক নয়। সন্ধ্যা ও রাতে তো নয়, তাহলে ঘুমে বিঘ্ন হবে।
চা: ক্যাফিনের বিকল্প উৎ স হলো চা। গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে ক্যাফিনও অ্যামিনো এসিড এল থিয়ানিন মনকে সজাগ করে; স্মৃতি উন্নত করে। ব্ল্যাকটি ভালো।
গাঢ় চকলেট: খেলে মগজ হয় চনমনে। ক্যাফিন ও থিওব্রোমিন।
প্রাতরাশ: এনার্জি ও মেজাজ উজ্জীবন করতে হলে প্রাতরাশ বাদ দিলে চলবে না। দেখা গেছে, যাঁরা প্রতিদিন নিয়মিত প্রাতরাশ খান, তাঁদের সারা দিন থাকে দেহমন শক্তিতে ভরপুর ও চাঙা। গোটাশস্য, আঁশ, ভালো চর্বি, কচি আমিষ—ভালো প্রাতরাশ।
বারবার খাওয়া, কম কম করে: রক্তের সুগার সুস্থিতির জন্য, এনার্জির সুস্থিতির জন্য, মেজাজ চাঙা রাখার জন্য এটি হলো কৌশল।
তিন থেকে চার ঘণ্টা পর ছোট ছোট খাবার বা নাশতা খাবেন, দিনে তিনবেলা বড় খাবার না খেয়ে, ভূরিভোজন না করে। স্ন্যাকস হতে পারে পিনাট বাটার, গোটা শস্য ক্যাকারস, কচি গোশত ও সালাদ। গোটা শস্য দুধ।
এনার্জি ড্রিংক ও জেল তেমন ভালো নয়।
ব্যায়াম করুন এনার্জির জন্য: জোরে হাঁটা আধাঘণ্টা, সাইকেল চালানো—কত ব্যায়াম, যা সয়ে যায়।

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes