Total Pageviews

Thursday, July 14, 2011

তেলাপোকা থেকে সাবধান!

telapoka

আমার নাতনি তেলাপোকা দেখে ভীষণ ভয় পায়। ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওঠে। ভয় পায়, যদি শরীরে বসে? বিচ্ছিরি! যদি কামড় দেয়? আমিও তেলাপোকাকে ভয় পাই। তবে শরীরে বসা বা কামড়ের ভয় নয়, ভয় অন্য কারণে। তেলাপোকা যে অনেক রোগের বাহক! নানা রকমের পেটের পীড়া, আমাশয়, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়া, টাইফয়েড, লিভারের প্রদাহ-জন্ডিস, পোলিও—কত রোগের জীবাণুরই না বাহক তেলাপোকা!
তেলাপোকা মূলত সর্বভুক। তবে খাবারের ময়লা-আবর্জনা আর বাথরুমের ময়লাই এদের প্রিয় খাবার। এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে এদের গায়ে লেগে যায় নানা জীবাণু। পেটের ভেতরেও ঢুকে যায় অজস্র। তারপর রাতের আঁধারে যখন বসে কোনো খাবারের ওপর, তখন তেলাপোকার পা-পাখা-শরীর থেকে খাবারে লেগে যায় অসংখ্য জীবাণু। তা ছাড়া, খাবারের ওপর ঘোরাফেরা করার সময় খাবার খাওয়ার পাশাপাশি খাবারের ওপর মলত্যাগ আর বমিও করে তেলাপোকা। তেলাপোকার এসব মল আর বমির মাধ্যমেও খাবারে মিশে যায় হাজারো জীবাণু। জীবাণুমিশ্রিত এসব দূষিত খাবার খেলেই হয় নানা অসুখ। এ ছাড়া তেলাপোকার শরীর থেকে খসে যাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ আর ঘরের ধুলোবালিতে মিশে থাকা তেলাপোকার শুকনো মল হতে পারে হাঁপানির কারণ। আমাদের বাড়িঘরের রান্নাঘরে লুকোনো স্থানেই এদের বসবাস বেশি। দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে রান্নাঘরের বেসিনের নিচে, ময়লার বালতিতে, খাবার রাখার আলমারিতে (মিটসেফ) রাখা জিনিসের ফাঁকে ফাঁকে, আলমারির পেছনে, ফ্রিজের পেছনে। এ ছাড়া থাকে বাথরুমের প্যানের গভীরে, বাসাবাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া মলের বা ময়লার পানির পাইপে। থাকে বইয়ের আলমারিতে বইয়ের ফাঁকে। খাটের বাক্সে। যেকোনো অন্ধকার লুকোনো স্থানে। এসব জায়গা থেকে রাতের আঁধারে বের হয়ে আসে। রাতে রান্নাঘরের মেঝে বা খাবার টেবিলে খাবারের উচ্ছিষ্ট থাকলে, বেসিনে এঁটো থালাবাসন রেখে দিলে তাতে রোগজীবাণু বংশবৃদ্ধি করে। আর এসব খাবার খেতে থাকে তেলাপোকা। বাহক হয় নানা জীবাণুর।
রাতে খাবার টেবিলে খাবারের উচ্ছিষ্ট যেন না থাকে। পরদিন সকালে ধোয়ার আশায় রাতভর বেসিনে যেন না থাকে এঁটো থালাবাসন। পরিষ্কার রাখতে হবে তেলাপোকা লুকিয়ে থাকতে পারে এমন সব জায়গা। রান্নাঘরের মেঝে ও বেসিন রাখতে হবে ঝকঝকে তকতকে। ঢেকে রাখতে হবে রান্নাঘরের ময়লার বালতি। পরিষ্কার করতে হবে প্রতিদিন। রান্নাঘরের দা, বঁটি, কাটিং বোর্ড ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার রাখতে হবে। মিটসেফ পরিষ্কার করতে হবে প্রতি সপ্তাহেই। টেবিলের ড্রয়ার, খাটের বাক্স, বুকসেলফ—প্রতি সপ্তাহেই নজরদারি করতে হবে। খাবার-দাবার রাখতে হবে ফ্রিজে। বাইরে রাখলে অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে। বাথরুম রাখতে হবে পরিষ্কার। বেশি উপদ্রব হলে তেলাপোকা মারার চক বা অন্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে মাঝে মধ্যে।
মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ,
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes