Total Pageviews

Thursday, July 28, 2011

ভালো খাবার, ভালো স্বাস্থ্য

healthy-foods
কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার আছে, যেগুলো সব পুষ্টিবিদের পরামর্শে থাকে। তবুও এমন খাবার রয়ে যায় এদের আড়ালে, যেগুলো খুব পুষ্টিকর হলেও সমাদর নেই এদের, নজরও নেই এদের প্রতি।
খাবার জন্য ভালো ভালো খাদ্য বেছে নেওয়া সহজ কাজ নয়। ছয়টি খাবারের কথা বলি, যেগুলোর সমাদর নেই, তবে খাবারে যোগ করলে খুব পুষ্টিকর হবে বেলার খাবার। ভালো খাবারের নানা সংজ্ঞা।
খাবারটি গোটা খাবার হবে, হোল ফুড। কেবল তাই? খাবার হবে প্রিয়, পরিচিত, সহজলভ্য, পুষ্টিতে ঠাসা, দামেও সস্তা, স্বাদুও হতে হবে। আমরা ব্লু বেবি, বাদাম, স্যামন মাছ—এসবকে সুপার ফুড মনে করি। কিন্তু সমাদর নেই এমন খাবার হতে পারে তারকা খাবার।
১) শিম ও ডালজাতীয় খাবার: মুদির দোকানে গেলে অনেকে এদের কেনেন, আবার কারও কাছে এদের আদর নেই। শিম হলো সুপারস্টার প্রোটিন, আঁশ, জটিল শর্করা, লৌহ, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম ও দস্তা। সপ্তাহে তিন কাপ শিম খেলে বেশ ভালো। ‘নিউট্রিশন অ্যাট ইওর ফিঙ্গারটিপস’ বইটি লিখে খ্যাত ইলিসাজায়েড বলেন, ডাল ও শুটিসমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন হ্রাস হয়, কমে হূদক্ষতিকর এলডিএল ও বাড়ে এইচডিএল। ভালো স্বাদু খাবার। সবজি সঙ্গে স্যুপ ও স্টু, সালাদে খাওয়া যায় বিনস ও ডাল।
২) তরমুজ: গ্রীষ্মের জনপ্রিয় খাদ্য হলো তরমুজ। প্রাণহরা, তৃষাহরা। মিষ্টি বলে অনেকে ‘চিনি খাবার’ মনে করে খান না। তা নয় কিন্তু। এক্সপেকট দি বেস্ট বই লিখে খ্যাত এলিজাবেথ ওয়ার্ড বলেন, সবার খাবারে থাকবে তরমুজ। খেতে মজা, মিষ্টি, রসাল। লো-ক্যালরি, ভিটামিন এ, সি, পটাশিয়াম ও লাইকোপ্যানে ভরপুর। এতে আছে প্রচুর পানি, তাই শরীরের পানির চাহিদাও পূরণ করে।
৩) মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলু মিষ্টি বলে অনেকে মনে করেন হাই-ক্যালরি ও শর্করাভর্তি, তা ঠিক নয় কিন্তু। আমেরিকান ডায়েট অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র হিথার ম্যানগিয়ারি বলেন, ‘মিষ্টি আলু হলো পুষ্টির বিচারে তারকা খাবার, সেরা সবজিগুলোর অন্যতম। এতে আছে প্রচুর বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন সি, আঁশ, পটাশিয়াম। সেঁকে, হালকা ভেজে, ভাপে সেদ্ধ করে, সবজি রান্না করে কত ভাবেই না খাওয়া যায় মিষ্টি আলু। আমার স্ত্রী চমৎকার নিরামিষ রাঁধেন এবং তাঁর প্রায় সব সবজি রেসিপিতে থাকে মিষ্টি আলু, আর এটি যোগ করলে খুব স্বাদু হয় নিরামিষ।
৪) লাল বাঁধাকপি: কসিফেরাস সবজির অন্যতম লাল বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এ, ডি, কে ও ফলেট, অনেক খনিজ এবং এক কাপ বাঁধাকপি কুচিতে রয়েছে মাত্র ২২ ক্যালরি। প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এতে, ক্যানসাররোধী গুণ। খাওয়া যায় কাঁচা, সেদ্ধ, ভাপে সেদ্ধ, রান্না স্যুপে, স্যালাতে, সবজিতে, স্যান্ডউইচে। খাবারও হবে বর্ণিল।
৫) টমেটো।
জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস ক্রিস রজেন ব্লুম বলেন, ‘অনেকে বলেন, কাঁচা এবং সেদ্ধ না করে টমেটো ভালো, কিন্তু টমেটো রান্না করলে এ থেকে বেরিয়ে যায় কিছু রোগ প্রতিরোধী লাইকোপ্যান, তাই দেহে এর শোষণ হয় ভালো।
২০০৯ সালে জার্নাল অব অনকোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে দেখা যায়, টমেটোসমৃদ্ধ খাবার খেলে রোধ করা যায় প্রোস্টেট ক্যানসার এবং শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপ্যান রোধ করে অন্যান্য ক্যানসারও। টিনজাত টমেটোও কম পুষ্টিকর নয়। তাজা টমেটো আরও ভালো।
৬) সহজ, সরল, চর্বিহীন দুধের দধি
ঘরে পাতা টক দই। সর তুলে নিয়ে চর্বিহীন দুধের দধি। কাঁচা টক দই। দধিতে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আমিষ, দস্তা, ভিটামিন বি৬, বি১২, প্রোবায়োটিক কালচার। সজীব জীবাণু। ল্যাকটোজ কম, আমিষ বেশি। কমে কোলস্টেরল, সহজ পাচ্য। স্বাস্থ্যকর।
শুভাগত চৌধুরীর
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

সেরেব্রাল পলসি

রাস্তার একপাশ দিয়ে অবনতমস্তক এক তরুণ অদ্ভুত এক আড়ষ্ট ভঙ্গিতে হেঁটে যাচ্ছে। একটা হাত ভাঁজ করে বুকের কাছে রাখা, একই দিকের পাও সে টেনে টেনে চলছে। হাঁটু ও কোমর একটু বাঁকা করে। মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়ছে—এমন দৃশ্য মাঝেমধ্যে আপনার নজরে পড়তেই পারে। এমনটি যদি হয়, তবে সম্ভবত ওই তরুণটি সেরেব্রাল পলসি রোগে ভুগছে।
কোন শিশুদের হতে পারে
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যাদের জন্ম।
জন্মের সময় যাদের ওজন খুব কম থাকে।
জন্মের পরপরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া শিশু।
সমস্যাযুক্ত প্রসব বা প্রসবে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়া।
রোগের কারণ
 গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমণজনিত বিভিন্ন রোগ, নেশাসক্তি বা কিডনিজনিত রোগ।
 জন্মের সময় কোনো কারণে যদি শিশুর মস্তিষ্কে অক্সিজেন ঘাটতি হয়।
 জন্মের পর মেনিনজাইটিস, খিঁচুনি, দুর্ঘটনা ইত্যাদি।
কেমন করে বোঝা যাবে
সাধারণত জন্মের পর পর তেমন কিছু বোঝা যায় না। তবে শিশু যখন সঠিক সময়ে বসতে, দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারে না এবং শিশুর জন্মকালীন ইতিহাস যদি ওপরের বর্ণনামতো হয়, তবে ধারণা করা যেতে পারে যে শিশুটির সেরেব্রাল পলসি থাকতে পারে।
চিকিৎসা
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর অবস্থা উন্নত করা গেলে, রোগী নিজের জীবন-জীবিকার জন্য পরনির্ভরশীল না থেকে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং পরিবার, সমাজ সর্বোপরি দেশ একজন অক্ষম মানুষের বোঝামুক্ত হয়ে সক্ষম এক মানুষের সাহায্য লাভ করতে পারে। সেরেব্রাল পলসির চিকিৎসা একটা সমন্বিত ব্যাপার এবং শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ, নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ, ফিজিওথেরাপিস্ট, সমাজকর্মী—সবাই মিলেই সমন্বিতভাবে এই চিকিৎসা করতে হয়।
চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্যই থাকে রোগীর যা অবস্থা আছে তা থেকে কিছুটা ভালো অবস্থায় নিয়ে যাওয়া অর্থাৎ যে হুইল চেয়ারেই বসতে অক্ষম, তাকে হুইল চেয়ারে বসতে সমর্থ করা, যে হাঁটতে অক্ষম তাকে হাঁটতে সক্ষম করা ইত্যাদি। চিকিৎসা শুরু হতে হয় যখন রোগটা নিরূপণ করা হয় তখন থেকেই। এবং ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা বিশেষ ধরনের জুতা ও অর্থোটিক্স এবং অর্থোপেডিক সার্জারি—এ ধরনের এক বা একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন পড়ে সেরেব্রাল পলসির চিকিৎসায়। অর্থোপেডিক সার্জারির মাধ্যমে আজকাল রোগীর চলাফেরা ও জীবন ধারণ অনেকখানিই সহজ করা যায়। বিশেষ করে যাদের দুই পা আক্রান্ত (Diplegia) অথবা এক দিকের হাত ও পা আক্রান্ত আছে, তাদের ক্ষেত্রে সার্জারির ফলাফল খুবই আশাব্যঞ্জক। সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে দিলেই এই প্রায় অক্ষম মানুষগুলো অনেকখানি কর্মক্ষম হয়ে দেশ ও সমাজ গঠনে এগিয়ে আসতে পারে। আমাদের স্বপ্নের সোনার দেশে এই ভাগ্যাহত মানুষগুলোকে যেন আমরা ভুলে না যাই।
সারওয়ার ইবনে সালাম
শিশু অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

স্কুলব্যাগ বেশি ভারী নয় তো!

school-bag
সিনান (ছদ্মনাম) কেজি স্কুলের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। ক্লাসের ফার্স্টবয়। স্কুলে পাঠ্যবই অনেক। হাতে করে সব বই স্কুলে নিয়ে যাওয়া বা নিয়ে আসা সিনানের পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া আছে স্কুলের এবং বাড়ির কাজের নানা খাতা, পেনসিল বক্স, টিফিন বক্স, পানির বোতল। তাই সাহায্য নিতে হয় স্কুলব্যাগের। বই, খাতা, পেনসিল বক্স, টিফিন বক্স, পানির বোতল, খেলার সরঞ্জাম—সব মিলিয়ে বেশ ভারী হয়ে যায় স্কুলব্যাগটা। ব্যাগের ভারে ওর হাঁটতে কষ্ট হয়। শরীর বাঁকা হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে পিঠব্যথা, ঘাড়ব্যথা, হাতব্যথার কথা বলে মায়ের কাছে।
শুধু সিনানই নয়, বাচ্চাদের স্কুলের সব ছাত্রই স্কুলব্যাগে করে বইপত্র আনা-নেওয়া করে এবং এদের অনেকেরই এ রকম শারীরিক সমস্যা হয়।
১৬-১৭ বছর বয়সের আগে শিশুর শরীরের হাড়, মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড়ার লিগামেন্ট, মাংসপেশি—এসবের বিকাশ লাভ পরিপূর্ণ হয় না। কম বয়সে নিয়মিত বাড়তি ওজন বয়ে বেড়ালে এসবের বিকাশলাভে যেমন বিঘ্ন ঘটে, তেমনি দেখা দিতে পারে নানা শারীরিক সমস্যা। গবেষকদের মতে, বইখাতাভর্তি স্কুলব্যাগের ওজন বাচ্চার শরীরের ওজনের ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি যেন না হয়। আপনার সন্তানের ওজন ২০ কেজি হলে তার স্কুলব্যাগের ওজন দুই-তিন কেজির বেশি করা যাবে না। বেশি হলে এবং দিনের পর দিন এভাবে ব্যাগ বহন করলে তার মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যেতে পারে; কাঁধে, ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করতে পারে, যা পরে বড় হলেও থেকে যেতে পারে। মেরুদণ্ডে আছে পরপর সাজানো ৩৩টি কশেরুকা। দুই কশেরুকার ফাঁকে ফাঁকে আছে স্পঞ্জের মতো চাকতি। বেশি ভারে এসব চাকতি চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাবে।
মেরুদণ্ডকে স্বাভাবিক অবস্থায় একপাশ থেকে দেখলে ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো দেখায় অনেকটা। ঘাড়ের অংশ সামনের দিকে, পিঠের অংশ পেছনের দিকে, আবার কোমরের অংশ সামনের দিকে এবং নিতম্বের অংশ পেছনের দিকে বাঁকা। এটা মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা। বসা বা দাঁড়ানো অবস্থায় আমাদের মেরুদণ্ডের এই স্বাভাবিক বক্রতাকে ধরে রাখতে হবে। অন্যথায় হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট ও মাংসপেশিতে চাপ পড়বে। মেরুদণ্ড, পিঠ ও কোমরব্যথাসহ নানা সমস্যা দেখা দেবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুঁজো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যাবে। স্কুলব্যাগের বইপত্রের ভারে আপনার সন্তান যদি সামনের দিকে বা পেছনের দিকে কিংবা ডানে অথবা বাঁয়ে বাঁকা হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে, স্কুলব্যাগটি বেশি ভারী হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ব্যাগের ফিতার চাপে কাঁধ ফুলে যেতে পারে। এমনকি কাঁধে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চার কাঁধে, ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা হবে, পিঠ বাঁকা হয়ে যাবে। বাহু বা হাতেও ব্যথা হতে পারে। ঝিমঝিম করতে পারে হাতে।
এসব হলে বুঝতে হবে, ব্যাগের ওজন বেশি হয়ে গেছে।
 স্কুলব্যাগের ভারে ছোট্ট শিশুটির শারীরিক কোনো ক্ষতি যেন না হয়, সে জন্য বাবা-মাকে একটু সতর্ক হতে হবে।
 কিনতে হবে অপেক্ষাকৃত কম ওজনের কাপড়ের ব্যাগ। ব্যাগে ধাতব রিংয়ের বাড়তি ওজন যেন না থাকে।
 সরু ফিতার নয়, মোটা ফিতার ব্যাগ ভালো। সরু ফিতা কাঁধে দেবে যাবে বেশি, ব্যথা হবে।
 পিঠে ঝোলানো যায় এমন ব্যাগ ভালো। তাতে ব্যাগের ওজন ঠিকমতো পায়ের দিকে সঞ্চালিত হতে পারে। শরীর বাঁকা হবে না। এক কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে নিলে শরীর একদিকে বাঁকা হয়ে যাবে। মেরুদণ্ডে ব্যথা হবে। মেরুদণ্ড বাঁকা হবে।
 দুই হাতে ওঠাতে হবে ব্যাগ। সন্তানের দুই হাত ব্যাগের দুই ফিতার ভেতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যাগটা তার পিঠে ঝুলিয়ে দিতে হবে।
 ব্যাগের ফিতাগুলো যেন লম্বা না হয়। পিঠে ঝুলন্ত ব্যাগ যেন বাচ্চার ঠিক কোমরে এসে পড়ে। তাহলে বইভর্তি ব্যাগের ওজন কোমরে এসে পড়বে এবং দুই পা বেয়ে মাটিতে পতিত হবে, মেরুদণ্ডে চাপ পড়বে কম।
 ব্যাগের নিচের অংশ ফিতা দিয়ে কোমর বরাবর বেঁধে দিতে পারলে আরও ভালো। তাতে পিঠে বাড়তি চাপ পড়বে না। পিঠ বাঁকা হবে না। কোমরের নিচে ব্যাগ ঝুলতে থাকলে ব্যাগের ওজন পিঠ বাঁকা করে মাটির দিকে ধাবিত হবে এবং পিঠ বাঁকা হয়ে যাবে, ব্যথা হবে।
 ব্যাগে বেশি পকেট থাকলে ভালো। তাহলে ব্যাগের মোট ওজন ব্যাগের বিভিন্ন দিকে ভাগ করে দেওয়া যাবে। শরীরের দুই দিকে সমান চাপ পড়বে।
 মাথায় বিদ্যার বোঝা বেশি চাপাতে গিয়ে পিঠে ব্যাগের বোঝা যেন বেশি হয়ে না যায়, এ ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখা দরকার শিক্ষকদেরও।
মো. শহীদুল্লাহ
বিভাগীয় প্রধান
কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ, কমিউনিটি বেজড্ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

প্রস্রাবের সমস্যা

সমস্যা: আমার বয়স ২৪। আমি তিন-চার বছর ধরে প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছি।আমি একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপকের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পেরেছি সমস্যাটির নাম ব্লাডার নেক অবস্ট্রাকশন (Primary bladder neek obstruction)।তিনি আমাকে সার্জারির পরামর্শদেন। কিন্তু ওই সার্জারির একটা নেতিবাচক দিক আছে(যেমন বাচ্চা পেতে সমস্যা হয়)। আমি অবিবাহিত, তাই আমি জানতে চাই ওই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সার্জারি ছাড়া বিকল্প কোনো পথ আছেকিনা বা আরও কয়েক বছর পর সার্জারি করালে কোনো সমস্যা আছেকিনা? এ সম্পর্কেযথার্থপরামর্শ পেলে উপকৃত হব। এ সংক্রান্ত কিছু পরীক্ষার কাগজ সঙ্গে পাঠালাম।
এম ডি হোসেন চৌধুরী
বড়লেখা, মৌলভীবাজার
পরামর্শ: আপনার সমস্যাটি নিরাময়যোগ্যঅসুস্থতা। এটি ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়। তবে অসুখের তীব্রতা বেশিহলে ও দীর্ঘস্থায়ী হলে—ওষুধ চিকিৎসা কার্যকর না হলে, অপারেশন প্রয়োজন। Primary bladder neek obstruction-এর একটি অন্যতম জটিলতা হচ্ছে—ধীরগতিতে কিডনির কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া বা ধীরগতি কিডনি বিকলতা দেখা দেওয়া। এটি জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনে অপারেশন জরুরি। আপনি অবিবাহিত বিধায়এই অপারেশন এখনই না করে ওষুধের চিকিৎসায় থাকা প্রয়োজন। নিয়মিত বা নির্দিষ্ট সময় পর পর চিকিৎসকের (ইউরোলজিস্টের) পরামর্শনেওয়া প্রয়োজন। urethrocystos copy-র কথা আপনি বলেছেন—এটি এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো করা প্রয়োজন হয়। আপনার ইউরোলজিস্ট প্রয়োজন মনে করলে এটি করার পরামর্শদেবেন। এর সঙ্গে একটি কথা উল্লেখ করতে চাই, এই অসুস্থতায় যেহেতু আপনি ভুগছেন, দীর্ঘদিন ওষুধের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকুন আর দ্রুত আপনি সন্তান নিন ও পরিবার সম্পূর্ণ করুন।
পরামর্শ দিয়েছেন
কাজীরফিকুল আবেদীন
সহকারী অধ্যাপক (ইউরোলজি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

মাথাব্যথা ও বমি

সমস্যা: আমার বয়স ১৮, কলেজে পড়ি। প্রায় দুই বছর ধরে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়। আর মাথাব্যথার সময়কিছু খেলে বমি হয়। বিশেষ করে মাথার সামনের দিকে বেশি ব্যথা করে এবংচোখ লাল হয়। আমি দুই মাস আগে একজন নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে ‘ডিসোপ্যান ০.৫’ এবং ‘ইনডেভার ৪০’ ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। ওষুধগুলো খাওয়ার পর ও মাথাব্যথা ও বমি হয়েছে।আমার ভয় কোনো জটিল অসুখ হলো কিনা। কী করলে আমার সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব?
নাম-ঠিকানা প্রকাশেঅনিচ্ছুক
পরামর্শ: একদম ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটা খারাপ ধরনের অসুখ না। একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছেগিয়েচোখ দেখিয়েনিন। সঙ্গে সাইনের একটি এক্স-রে করানোও দরকার।আপাতত স্টেমিটিল ৫ এমজি সকালে খাবারের আগে খেতে থাকবেন।বেশি মাথাব্যথা হলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। অতিরিক্ত টেনশন পরিহার করুন। ধূমপানে অভ্যস্ত থাকলে ত্যাগ করুন।
পরামর্শ দিয়েছেন এ বি এম আবদুল্লাহ
ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক
মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

পান-সুপারি

পান-সুপারি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সেই পুরোনো আমল থেকেই চলে আসছে পান-সুপারির রীতি। পান-সুপারি শরীরের জন্য উপকারী হলেও পানের সঙ্গে চুন, জর্দা ও খয়ের দাঁতের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। স্থূলকায় ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ক্ষুধা দূর করার জন্য কাজ করে পানপাতা। পান-সুপারি উভয়েই মাথাব্যথা (বিশেষত সায়নোসাইটিস, মাইগ্রেনের ব্যথা, ঠান্ডাজনিত ব্যথা) ভালো করে। মুখের লালা খাবারের সঙ্গে মিশে খাবার হজম করতে সাহায্য করে। চুন, জর্দা, খয়েরে ক্ষতির পরিমাণই বেশি। পানের সঙ্গে এলাচ, লবঙ্গ, সুপারি, মৌরি, গরম মসলা ও ধনিয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সন্তান প্রসবের পর জননতন্ত্রের জীবাণু দূর করার জন্য কুসুম গরম পানিতে পানপাতা ভিজিয়ে সেই পানি ব্যবহার করলে কাটা অংশগুলো দ্রুত শুকায় এবং ব্যথা দূর হয়। পানের মতো সুপারিতেও রয়েছে অ্যালকালয়েড অ্যারিকোলিন নামের উপকরণ, যা লালা তৈরিতে সাহায্য করে। লালা এক ধরনের পাচক রস। পাচক রস খাবার দ্রুত হজম করে, মুখের জীবাণু ধ্বংস করে। পান-সুপারি বা পানপাতা চিবোনোর পর খেয়াল রাখতে হবে, যেন দাঁতের ফাঁকে জমে না থাকে। যেকোনো খাবার দাঁতের ফাঁকে জমে, পচে ডেন্টাল ক্যারিজ (দাঁতের ক্ষয়জনিত বা ইনফেকশনজনিত অসুখ) তৈরি করে। অতিরিক্ত পরিমাণে পান, চুন, জর্দা, খয়ের ও তামাকপাতা খেলে মুখের নানা অসুখ, এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। তবে উপকারের আশায় পান বেশি খেলে ফুসফুস ও পাকস্থলীর ক্ষতি হয়।
ফারহানা মোবিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

Saturday, July 23, 2011

সন্তানের চশমা পরিবর্তনে মা-বাবার করণীয়

children-eye-glasses
দীপা প্রতি পরীক্ষার আগে চোখব্যথা ও মাথাব্যথার উপসর্গে আক্রান্ত হয়। ওর ব্যথার তীব্রতা এতটা বেড়ে যায় যে কিছুতেই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারে না। পড়া শুরু করায় তেমন কোনো অসুবিধা থাকে না কিন্তু সামান্যক্ষণ পরই তার ব্যথা শুরু হয়। মা-বাবা তাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চোখ পরীক্ষা করেন। বদলিয়ে দেন চশমার পাওয়ার। চশমা বদলের পর কয়েক দিন ভালো থাকে, তারপর আবার একই সমস্যা। মাথাব্যথা, চোখব্যথা। দীপা পড়াশোনায় ভালো। ক্লাসে প্রথম দশজনের ভেতর তার অবস্থান। তবে দিন দিন চোখের পাওয়ার বৃদ্ধি ও চোখের সমস্যায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন দীপার মা-বাবা।
ওপরে দীপাকে নিয়ে যে চিত্রটা তুলে ধরলাম, আমরা প্রতিদিন কমবেশি আমাদের সন্তানদের নিয়ে এ ধরনের সমস্যায় ভুগি। স্বাভাবিকভাবেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি সন্তানের চোখের সমস্যা নিয়ে। কেবল চোখ নয়, বড় ধরনের রোগের আশঙ্কা মাথায় আসে।
চিকিৎসক হিসেবে এ ধরনের রোগী আমরা পাই। এ ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা-বাবাদের আশ্বস্ত করছি যে আপনার সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের গল্পের দীপাকে নিয়েই আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আতঙ্কিত মা-বাবা এক চিকিৎসক থেকে আরেক চিকিৎসকের কাছে ছোটেন। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া যায় না। কেবল পরিবর্তন ঘটতে থাকে চোখের চশমার। দীপা তার এক উদাহরণ।
দীপার চোখে পাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। তবে তা খুব বেশি মাত্রায় নয়। ওর কিছু অভ্যাস এ সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। আবার দীপার মা-বাবার টেনশন থেকে বারবার চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। দীপা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সচেতন। বই চোখের খুব কাছে নিয়ে অধ্যয়নের অভ্যাস তার। পড়ার টেবিল নয়, বিছানায় শুয়েই সে পড়াশোনা করে। এভাবে পড়াশোনা করায় নিজের অজান্তে তার চোখের ওপর বেশি চাপ পড়ে।
আমরা যখন পড়াশোনা করি, তখন আমাদের চোখের বেশ কয়েকটি পেশি একত্রে কাজ করে। বিশেষ করে কাছের দৃষ্টিকর্মের জন্য পেশিগুলো অধিকমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকে। দেখার সামগ্রী যথা বইপত্র যত কাছে নিয়ে পড়ার অভ্যাস করা হয়, তত বেশি চোখের পেশির ওপর চাপ পড়ে। এতে একপর্যায়ে পেশিগুলো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়। ফলে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, মাথাব্যথার উপসর্গ দেখা দেয়। কখনো কখনো পেশির খিঁচুনি হয় এবং এ ক্ষেত্রেও উল্লিখিত উপসর্গের উৎপত্তি ঘটে। পেশিগুলো অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল থাকাকালে চোখের অভ্যন্তরের লেন্সের আকৃতির ওপর প্রভাব পড়ে। এতে চোখের অন্তর্নিহিত পাওয়ারের পরিবর্তন ঘটে। চোখের পাওয়ার বিশেষত মাইনাস পাওয়ার এ সময় বেড়ে যায়।
রোগীর দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। ইদানীং মা-বাবা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে অধিকমাত্রায় সচেতন। তা ছাড়া মা-বাবা ছেলেমেয়েদের স্কুলের লেখাপড়ার বাইরেও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে থাকেন। স্কুলের পর একাধিক কোচিং সেন্টারে পাঠিয়েই ক্ষান্ত হন না, বাড়িতেও টিউটর রাখেন। ছেলেমেয়েদের এভাবে পড়াশোনার চাপ দেওয়ায় তাদের চোখ বিশ্রামের সুযোগ পায় না। এর ফলে চোখের পেশিগুলোও বিশ্রাম পায় না। পরীক্ষার্থীরা মা-বাবার কাছে দূরের ঝাপসা দৃষ্টির উপসর্গের কথা বলে। মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে ছোটেন চোখের চিকিৎসকের কাছে। চোখের বিশ্রাম না থাকায় ‘অস্বাভাবিক’ চোখের অস্বাভাবিক পাওয়ার পরিবর্তন করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চোখের পূর্ণমাত্রার বিশ্রামের পর যে পাওয়ার থাকে, বিশ্রামহীন চোখের পাওয়ার তা থেকে ভিন্ন হয়। হয়তো যে চোখে কোনো পাওয়ার লাগারই কথা নয়, সেই চোখ বিশ্রামে না থাকায় চোখের ভেতরের পেশির সংকুচিত অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাওয়ার ঘাটতির শিকার হয়।
দীপার ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মা-বাবার কিছু করণীয় রয়েছে। যেমন:
 ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ফাঁকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দিন। একটানা বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা ঠিক নয়। ২০ মিনিট পড়াশোনার পর অন্তত পাঁচ মিনিট চোখের বিশ্রাম নেওয়া ভালো।
 সন্তানকে চোখের চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার আগে চোখের বিশ্রাম দিন। যেমন বিকেলে যদি চিকিৎসকের চেম্বারে নেওয়ার প্রোগ্রাম থাকে, সে ক্ষেত্রে দুপুরের আহারের পর বিশ্রামে থাকতে সাহায্য করুন।
 চোখের চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত রাখুন।
 কোচিং সেন্টারের শিডিউল ওই দিনের জন্য পরিবর্তন করে নিন। কোচিং সেন্টার থেকে সরাসরি চোখের চিকিৎসকের কাছে যাবেন না। কেননা এ ক্ষেত্রে সন্তানের চোখের পরিমিত বিশ্রাম হয় না।
 আপনার সন্তানকে পর্যাপ্ত আলোয় আরামদায়ক পরিবেশে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে দিন। লেখাপড়া টেবিলে করা উচিত, বিছানায় শুয়ে নয়। বিশেষ করে যারা চশমা ব্যবহার করে, তাদের জন্য বিছানায় শুয়ে পড়াশোনা করা মোটেও উচিত নয়।
মোটকথা, সন্তানের চোখের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব মা-বাবার। সন্তানকে চোখের পরিচর্যায় যত্নশীল করে তোলায় মা-বাবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
বাংলাদেশে প্রথম ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার প্রতিস্থাপন
এই প্রথম বাংলাদেশে ক্ষুদ্রাকৃতির ইসিজি রেকর্ডার রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। সৈয়দ মো. কায়সারের শরীরে পেনড্রাইভ আকৃতির ইসিজি রেকর্ডার চামড়ার নিচে মাত্র ১৫ মিনিটের স্বল্পকালীন আউট সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে মনিটরটি স্থাপন করেন স্কয়ার হাসপাতালের বিশিষ্ট হূদেরাগ বিশেষজ্ঞ আবদুল্লাহ আল জামিল। এই ইসিজি রেকর্ডারটি তিন বছর পর্যন্ত রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ইসিজি রেকর্ড করতে থাকবে। যেসব রোগীর অনিয়মিত হূৎস্পন্দন বা ব্যাখ্যাতীত ঘন ঘন মূর্ছা যাওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের চিকিৎসা এবং রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই প্রতিস্থাপনযোগ্য ইসিজি রেকর্ডারটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই রেকর্ডারটির ইসিজি রেকর্ড দেখার জন্য বাইরে থেকে একটি বিশেষায়িত যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে। সেই যন্ত্রের সাহায্যে ইসিজি যেকোনো সময় দেখা এবং প্রিন্ট নেওয়া যাবে। যন্ত্রটির নাম REVEAL এবং বিখ্যাত আমেরিকান কোম্পানি VITATRON এবং MEDTRONIC যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশি হূদেরাগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই যন্ত্রটি বাংলাদেশে হূদেরাগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এর আগে এ ধরনের যন্ত্র লাগানোর জন্য রোগীদের উন্নত বিশ্বে পাড়ি জমাতে হতো। যন্ত্রটি লাগানো থাকা অবস্থায় এমআরআই করার জন্য কোনো সমস্যা হবে না বলে উদ্ভাবক কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান।
মো. শফিকুল ইসলাম
অধ্যাপক, চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথামুক্তিতে নতুন শল্যচিকিৎসা

backpain-treatment
বামরুনগ্রাডের অভিজ্ঞতা
পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথামুক্তিতে নতুন শল্যচিকিৎসা
পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসায় নতুন সংযোজন এন্ডোসকপিক স্পাইন সার্জারি। গতানুগতিক অস্ত্রোপচারের বিকল্প নতুন প্রযুক্তির এই শল্যচিকিৎসায় রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে বলে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন।
এশিয়াতে এই চিকিৎসায় অগ্রদূত ব্যাংককের বামরুনগ্রাড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ভিরাপান কুয়ানসংথাম প্রথম আলোকে বলেন, মেরুদণ্ডে বড় ধরনের সমস্যা এন্ডোসকপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। এই অস্ত্রোপচারের পর ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে রোগী হাঁটাচলা করতে পারেন। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
ঘাড় ও মেরুদণ্ডের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই চিকিৎসার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় চার বছর আগে জার্মানিতে। জার্মানির সেন্ট আন্না হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সিভাসটিয়ান রাটেন ও ডা. মার্টিন কমপ মূলত এই চিকিৎসা পদ্ধতির পথিকৃৎ। আর এই চিকিৎসা পদ্ধতির সরঞ্জাম তৈরি করেছে জার্মানির মেডিকেল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রিচার্ড ওলফ জিএমবিএইচ।
এশিয়াতে এই পদ্ধতিতে ঘাড় ও পিঠের ব্যথার চিকিৎসা প্রথম শুরু করে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত বামরুনগ্রাড হাসপাতাল। হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ভিরাপান ও তাঁর সহকর্মীরা ডা. সিভাসটিয়ান রাটেন ও ডা. মার্টিন কমপের কাছে এই পদ্ধতির ব্যবহার হাতে-কলমে শিখেছেন। এরপর তাঁরা নিজ দেশে চর্চা শুরু করেন। ডা. ভিরাপানের নেতৃত্বে বামরুনগ্রাড হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্পাইন ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটে জার্মানি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজ করছে।
চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে ডা. ভিরাপান বলেন, তাঁরা তিনটি পর্যায়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। প্রথমে অস্থি ও স্নায়ু শল্যচিকিৎসক, মেডিসিন, ফিজিওথেরাপিসহ ঘাড় ও পিঠের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষ-নিরীক্ষা শেষে রোগ, এর চিকিৎসা ও সুস্থতার বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়। তারপর চিকিৎসার বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয়। প্রয়োজনে তাঁরা জার্মানির সেন্ট আন্না হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করেন।
ডা. ভিরাপান বলেন, পিঠের ব্যথার শেষ বিকল্প হচ্ছে শল্যচিকিৎসা। এন্ডোসকপিক পদ্ধতিতে মাত্র আট মিলিমিটার ছিদ্র করে মেরুদণ্ডে শল্যচিকিৎসা দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের সময় মেরুদণ্ডের ভেতরের চিত্র কম্পিউটারের মনিটরে দেখা যায়। অস্ত্রোপচারের কারণে টিস্যু ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতির যে আশঙ্কা থাকে নতুন এই পদ্ধতিতে তা অনেক কম।
বামরুনগ্রাড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই শল্যচিকিৎসায় রোগীপ্রতি খরচ পড়ছে দুই থেকে তিন লাখ থাই বাথ (চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা থেকে সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা)।
ডা. ভিরাপান প্রথম আলোকে জানান, বামরুনগ্রাডে এ পর্যন্ত ৩০০ জন রোগীকে এন্ডোসকপিক সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তাঁরা সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, যাঁদের মেরুদণ্ডে ত্রুটির কারণে পিঠে অনবরত প্রচণ্ড ব্যথা ও একই কারণে পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং মেরুদণ্ডে জন্মগত ত্রুটি আছে বা জটিল সমস্যা আছে তাদের জন্য এন্ডোসকপিক সার্জারির অনুমোদন দিচ্ছেন তাঁরা।
ডা. ভিরাপান জানান, চিকিৎসার পাশাপাশি নতুন এই পদ্ধতির ওপর দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতেও তাঁরা গবেষণা করছেন। এসব বিষয়ে বামরুনগ্রাডের চিকিৎসক দল জার্মান চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতির প্রসার বাড়াতে বামরুনগ্রাড হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘এশিয়ান ফুল এন্ডোস্পাইন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’। ‘পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি’—এই স্লোগানে ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ৭ জুলাই। ডা. ভিরাপান এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক।
ওই দিনই জার্মানির সেন্ট আন্না হাসপাতাল ও রিচার্ড ওলফ জিএমবিএইচের সঙ্গে বামরুনগ্রাড হাসপাতালের সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বামরুনগ্রাডের পরিচালক (মেডিকেল) ডা. চামারি চুয়াপেচারাসোপন বলেন, চুক্তি সই নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বামরুনগ্রাড হাসপাতালের সক্ষমতার বড় স্বীকৃতি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডা. মার্টিন কমপ বলেন, সেন্ট আন্না হাসপাতালে এই পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ১০ হাজার রোগীকে সফলভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ডা. ভিরাপান জানান, ইতিমধ্যে তাঁরা মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, হংকংসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ইনস্টিটিউট করার পর এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকদের এক বছরের ফেলোশিপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বছরে একবার দুই দিনের কর্মশালার ব্যবস্থা আছে। পরবর্তী কর্মশালা আগামী বছরের জানুয়ারিতে।
ডা. ভিরাপান বলেন, যেকোনো দেশের চিকিৎসকেরা ফেলোশিপ ও কর্মশালায় অংশ নিতে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অগ্রাধিকার পাবেন। কর্মশালায় অংশ নিতে জনপ্রতি এক হাজার মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন।
বামরুনগ্রাড হাসপাতালের পরিচালক (আন্তর্জাতিক বিপণন) সিলভিয়া ইয়ং জানান, এই চিকিৎসার ব্যাপারে তথ্য জানতে ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের রোগীরা তাঁদের ঢাকার তথ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন। পান্থপথে ইউটিসি ভবনের ১২ তলায় বামরুনগ্রাডের ঢাকার তথ্যকেন্দ্র অবস্থিত।
একনজরে বামরুনগ্রাড হাসপাতাল
 ১৯৮০ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রতিষ্ঠা।
 প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতালে পরিণত।
 ৫৫৪ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে  ৭০০ পূর্ণকালীন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১২০০ চিকিৎসক।
 রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ২৫০ কক্ষ।
 ১৯টি অস্ত্রোপচার কক্ষ।
 ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা।
 বছর ১০ লাখ রোগীর চিকিৎসা, এর মধ্যে গত বছর চার লাখ ২০ হাজার ছিল বিভিন্ন দেশের রোগী।
 বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রোগীদের জন্য রয়েছে নিজ নিজ ভাষাভাষী গাইড।
টিপু সুলতান  ব্যাংকক থেকে ফিরে
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

কিডনি, প্রদাহ, প্রস্টেট, প্রস্রাব, ব্যায়াম



মানব ত্বকের প্রধান কর্মযজ্ঞ হলো:
 শরীরে পানি ও ইলেকট্রো লাইটের ভারসাম্যতা রক্ষা করা
 দেহ তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখা
 অণুজীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রাচীর
 আঘাত, পরিবেশে থাকা নানা বিষ পদার্থ ও ক্ষতিকর আলট্রা ভায়োলেট সূর্যরশ্মি হতে সুরক্ষা বন্দোবস্ত
 ভিটামিন উৎপন্ন করা
 ইমিউন বা রোগ প্রতিরোধী সংস্থার প্রাথমিক নিরীক্ষা যন্ত্র
 ‘সুন্দর বটে তবে অঙ্গদখানি’—কসমেটিক সৌন্দর্য
 স্পর্শ ইন্দ্রিয়
 মা ও সন্তানের মাঝে প্রগাঢ় আত্মিক বন্ধন স্থাপনা
নবজাতকের স্নান
 গোসল নবজাতক শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার প্রধান পথ। গর্ভ হতে লেপ্টে থাকা রক্ত, ভারনিস্ক, এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসর মতো জীবাণু সংক্রমণের হাত কমাতে।
 স্বল্প জন্ম ওজনের নবজাতকে গোসল নাড়ি ঝরে না পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা শ্রেয়।
 নবজাতক গোসলের সময় পাঁচ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত না। গোসলের জল যেন পরিশুদ্ধ থাকে।
 সাবান কিংবা ক্লিনারস জীবনের প্রথম কয়েক সপ্তাহ ব্যবহার না করা।
 গরম রুমে স্নান করিয়ে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে শুষ্ক তোয়ালে দিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালোভাবে মুছে নিন এবং মায়ের বুকে দিয়ে দিন।
বেবি পাউডারের ব্যবহার
 তপ্ত কিংবা ভ্যাপসা আবহাওয়া কাজ দিলেও নবজাতকের বয়সে এর ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত না।
 বেশি ব্যবহারে শিশুর ত্বকের গ্রন্থিগুলো শ্বাসপ্রশ্বাসে ছিদ্র বন্ধ করে দেয়—ঘামাচি তৈরি করে।
 বেবি পাউডার শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসে ফুসফুসে পৌঁছালে মারাত্মক অসুখ ডেকে আনে।
ডায়াপার এরিয়ার যত্ন
 শিশুর এ স্থান প্রায়শ ভেজা থাকে। মলমূত্র এক সঙ্গে মিশে পিএইচ মাত্রা বাড়ায়—ক্ষতি হয় ত্বকের।
 ঘরে ব্যবহূত ন্যাপকিন বা বাজারের ডায়াপার ঘন ঘন পাল্টানোই উত্তম।
 শিশুর ন্যাপকিনের স্থান সামান্য গরম জল ও কটন তুলায় পরিচ্ছন্ন রাখা যায়।
নাভি, নাক, চোখের যত্ন
 ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাড়ি শুকিয়ে যায় এবং ৫-১০ দিনের মাথায় ঝরে পড়ে। নাভিতে কোনো কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই।
 নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখা যায়।
 গরম জলে কটন সোয়াব ভিজিয়ে খুব আলতোভাবে চোখ পরিষ্কার করতে হবে।
 শিশু ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে নারকেল তেল অন্যান্য কেমিক্যালস এজেন্টের তুলনায় বেশি গ্রহণযোগ্য।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes