Total Pageviews

Wednesday, March 14, 2012

নতুন নতুন রোগবালাই

জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবনাচার ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আর জীববৈচিত্র্য পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবনাচার ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আর জীববৈচিত্র্য পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন রোগবালাইয়ের উদ্ভব ঘটছে। কিছু কিছু রোগের পুনরাবির্ভাব ঘটছে
সহকারী অধ্যাপক, রোগতত্ত্ব বিভাগ, নিপসম।

বদলাচ্ছে পরিবেশ, বদলাচ্ছে জীবনাচার; বদলেযাচ্ছে রোগবালাইয়ের ধরন। আবির্ভাব-পুনরাবির্ভাব ঘটছে নতুন নতুন রোগবালাইয়ের। বাড়ছে জনস্বাস্থ্য ব্যয়।দৈনন্দিন জীবনে আচরণ না পাল্টালে জনস্বাস্থ্য-সুরক্ষা দুরূহ হয়েযাবে। নতুন নতুন রোগবালাই প্রতিরোধে জীবনাচার বদলানো জরুরি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টাচ্ছে রোগবালাইয়ের ধরন। সামগ্রিকভাবে গোটা দুনিয়ায় কমছে সংক্রামক রোগ আর বাড়ছে অসংক্রামক রোগবালাই। জলবায়ুর পরিবর্তন, জীবনাচারে পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন আর জীববৈচিত্র্যের পরিবর্তনের কারণে নতুন নতুন রোগবালাইয়ের উদ্ভব ঘটছে। কিছু কিছু রোগের পুনরাবির্ভাব ঘটছে।
আসছে নতুন নতুন ভাইরাস
জনস্বাস্থ্যের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন অণুজীবের কারণে মহামারি দেখা দিয়েছে; বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে নভেল (আগেছিল না এমন) ভাইরাসের উদ্ভব জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন রোগের। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বিশ্ববাসী তথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব নতুন (ইমার্জিং) এবংপুনরাবির্ভূত (রি-ইমার্জিং) রোগবালাই নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেজনসংখ্যা এবংঘনবসতির কারণে এ ধরনের নতুন নতুন ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া খুব সহজেই আসন গেড়ে বসতে পারে।
প্রাণীবাহিত রোগ
জুনুটিক ডিজিজ। গোটা দুনিয়ায় জনস্বাস্থ্যেরক্ষেত্রে জুনুটিক ডিজিজ বা প্রাণীবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব হরহামেশাই ঘটছে। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়েছে। সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় এটি পশু থেকে মানুষে ছড়াতে পারেনি তেমনভাবে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তোলপাড় হয়েছেফ্লু মহামারি নিয়ে। এইচফাইভএনওয়ান কিংবা এইচওয়ানএনওয়ান ভাইরাসজনিত বার্ড ফ্লু এবংসোয়াইন ফ্লু নিয়ে গোটা বিশ্বে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে ছিল। আগাম সতর্কতা, জনস্বাস্থ্যের রোগ-নিরীক্ষণ এবংআন্তর্জাতিক উদ্যোগের কারণে এগুলো অতীতের মতো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রের বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবংএ বিষয়ে কর্মরত প্রতিষ্ঠানগুলোর (যেমন, আইইডিসিআর) সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
নতুন নতুন ফ্লু
পাল্টে যাচ্ছে ভাইরাস জ্বর।ভাইরাসের ধর্মই হচ্ছে প্রতিনিয়ত এর চরিত্র বদল, আদল পরিবর্তন। ফলে ঋতু পরিবর্তনের সময়নিত্যনতুন ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে; কখনো ছড়ায় প্রাণীর মাধ্যমে, কখনো বাতাসে। সিজনাল ফ্লু প্রতিরোধে উন্নত বিশ্বে টিকার ব্যবস্থা রয়েছে। বছরে একবার এই টিকা নিলে ঋতুভিত্তিক ফ্লুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশেব্যাপকভাবে এর প্রচলন নেই। তাই আমাদের প্রতিরোধবিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ফ্লু প্রতিরোধে
হাঁচি-কাশিতে ছড়ায়। তাই হাঁচি-কাশির সময়হাতের কনুই উঁচু করে মুখ-নাক ঢাকতে হবে।আর সম্ভব হলে দিনে চার-পাঁচবার দুই হাত উভয়দিকে সাবান দিয়ে ভালোভাবে ফেনা তুলে ধুতে হবে। একই টিস্যু কয়েকবার ব্যবহার না করা বা রুমাল প্রতিদিন গরম পানিতে ধোঁয়ার মতো ছোট ছোট আচরণ পরিবর্তন করলে অনেক সাধারণ রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
ভেক্টরবাহিত রোগ: চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, কালাজ্বর
মশা-মাছি দিয়ে ছড়ানো এই রোগগুলো বাড়ছে, দেখা দিচ্ছে নতুন করে। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে আমাদের দেশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বেড়ে যায়। নগরায়ণের ফলে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি বেড়ে গিয়ে এর প্রাদুর্ভাব ঘটে।শুরুর দিকে এর চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনা যথেষ্ট আপ-টু-ডেট না থাকায় কিছু প্রাণহানিও ঘটে। পরবর্তী সময়ে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় এটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর প্রকোপ না কমলেও চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনার মান বেড়েছে। ডেঙ্গুর পর সাম্প্রতিক সময়ে আরেকটি মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে, যার নাম—চিকুনগুনিয়া।
বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতে এর প্রাদুর্ভাব ছিল; আমরা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছিলাম, এটি বাংলাদেশেও ঢুকবে। দুই বছর ধরে চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন এমন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ত্রিদেশীয় উদ্যোগে এই অঞ্চল কালাজ্বরমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাটির ঘরের বেলেমাছি কালাজ্বর ছড়ায়। এতে যকৃৎ (লিভার) ও প্লীহা (স্প্লিন) বড় হয়ে যায়। সময়মতো চিকিৎসায় রোগ ভালো হয়।
ভেক্টর প্রতিরোধে
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে মশা প্রতিরোধ করতে হবে। জমে থাকা পরিষ্কার পানি কিংবা নর্দমার পানিতে প্রতিনিয়তই স্প্রে করতে হবে। যে এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে, সেই এলাকায় ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য। কালাজ্বর প্রতিরোধে রোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে মাটির দেয়ালের বা মাটির মেঝের বাড়িগুলোতে মাটি থেকে ছয়ফুট উচ্চতা পর্যন্ত ওষুধ স্প্রে করে বেলেমাছি নির্মূল করতে হবে।
এমডিআর যক্ষ্মা
যক্ষ্মার চিকিৎসা আছে সম্পূর্ণভালো হওয়ার। তবু যক্ষ্মা বাড়ছে নতুন ধরনের। সময়মতো ওষুধ না খাওয়া এবংঅসম্পন্ন চিকিৎসার জন্যমাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট বা এমডিআর যক্ষ্মার প্রকোপ বাড়ছে।
পুরো কোর্স সম্পন্ন না করে ওষুধ ছেড়ে দেওয়ার ফলেএই যক্ষ্মা পুনরায় দেখা দিচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয়বেড়ে যাচ্ছে এবংওষুধের কার্যকারিতাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এমডিআর প্রতিরোধে
যক্ষ্মার ওষুধগুলো নিয়মিত, সময়মতো পুরো কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। যদি কেউ মাঝপথে ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েথাকেন, তাহলে অতিসত্বর পুনরায় চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
বাড়ছে এনসিডি বা অসংক্রামক রোগ
নন-কমিউনিক্যাবল ডিজিজ বা অসংক্রামক রোগ বাড়ছে বাংলাদেশেও। কায়িক পরিশ্রম কমে যাওয়া, দ্রুত নগরায়ণ, পরিবেশদূষণ এবংতেল-চর্বিজাতীয় খাবারে আসক্তির কারণে এনসিডি বেড়ে যাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হূদেরাগ, আর্সেনিকোসিস, হাইপারলিপিডেমিয়া, শ্বাসনালির বিভিন্ন রোগ, মনোবৈকাল্য, মনোসামাজিক চাপ ইত্যাদি রোগবালাই ও স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিনিয়তই বাড়ছে।ভবিষ্যতে এ নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রইল।
প্রয়োজন স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ
মানুষ বাড়ছে, পরিবেশ পাল্টাচ্ছে। রোগবালাই বাড়ছে, অণুজীবের ধরন পাল্টাচ্ছে। নগরায়ণ বাড়ছে, জীবনযাত্রার ধরন পাল্টাচ্ছে। এখন আমরা যদি আমাদের আচরণ না পাল্টাই, চারপাশের পরিবেশকে স্বাস্থ্যবান্ধব না করি, তবে নিত্যনতুন রোগবালাই আমাদের ভোগাবে। বাড়ছেস্বাস্থ্য ব্যয়;বাড়বে বৈকল্য। আসুন, আচরণ পাল্টাই পরিবেশ রক্ষায়, নিজেদের রক্ষায়। প্রথম আলোর ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ স্লোগান সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যের সুরক্ষায়।

কামরাঙার কিছু কথা

এই সময়ের দৃষ্টিনন্দন ফল কামরাঙা। ভিটামিন সি-তে পূর্ণ কামরাঙা। কাজ করে চুল, ত্বক, নখ ও দাঁতের ওপর। গবেষণা করে দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত ভরা পেটে (অবশ্যই যাঁদের কিডনির কোনো অসুখ নেই) কামরাঙা খান, তাঁদের চুল, ত্বক, নখ ও দাঁত তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল, ভঙ্গুরহীন হয়। সমসাময়িক সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কামরাঙা। অতিরিক্ত মোটা মানুষের দেহের চর্বি কমাতে সাহায্য করে এই ফল। তবে কিডনিতে পাথর, ইনফেকশন রয়েছে এমন ব্যক্তিদের জন্য এই ফল পরিহার করা উচিত সম্পূর্ণভাবে। আবার যাঁদের দীর্ঘ বছর ধরে ডায়াবেটিস, মোটার অসুখ রয়েছে ও হার্ট দুর্বল, তাঁদের জন্যও এই ফল বর্জনীয়। তাই বলে কামরাঙা পুষ্টিহীন এমন নয়। এতে রয়েছে উচ্চমানের ভিটামিন এ এবং সি। বাড়ন্ত শিশুদের জন্য, খেলোয়াড়, অ্যাথলেটদের জন্য এই ফল যথেষ্ট উপকারী। কামরাঙায় নেই কোনো চর্বি বা ফ্যাট। তাই এই ফল খেলে রক্তে চিনি বা চর্বি বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। এতে যে আঁশ রয়েছে তা কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীর ক্যানসার দূর করে। অতিরিক্ত টক লাগলে ডাল বা তরকারির সঙ্গে রান্না করে খেতে পারেন। তবে কোনো অবস্থাতেই কেউ এই ফল খালি পেটে খাবেন না।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই ফল ব্রণ হওয়ার পরিমাণ কমায়। এতে বিদ্যমান খনিজ লবণগুলো দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে। কিছু পরিমাণ জিংকও রয়েছে এতে। তবে অতিরিক্ত টক হওয়ার জন্য ডায়রিয়া চলাকালে বা ডায়রিয়া ভালো হওয়ার পরপরই এই ফল খাবেন না।
ফারহানা মোবিন prothom-alo

Tuesday, March 13, 2012

খাওয়ায় সহজ পরিবর্তন হূদেরাগের ঝুঁকি কমায়

পাতে লবণ খাওয়া এখনই ছেড়ে দিন, উচ্চ রক্তচাপ ও হূদেরাগের ঝুঁকি কমবে পাতে লবণ খাওয়া এখনই ছেড়ে দিন, উচ্চ রক্তচাপ ও হূদেরাগের ঝুঁকি কমবে
ছবি: খালেদ সরকার
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

হূদেরাগ এখন সমস্যা পৃথিবীজুড়ে। উন্নয়নশীল দেশেও এটি বড় সমস্যা। সবচেয়ে সচরাচর হূদেরাগ হলো করোনারি হূদেরাগ এবং এ থেকে হার্ট অ্যাটাক। তবে সুসংবাদ হলো, জীবনযাপনে পরিবর্তন এনে, হূদ্স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে আমরা অনেক কমিয়ে আনতে পারি করোনারি হূদেরাগের ঝুঁকি।
লবণঝাঁকুনি ঝেড়ে নুন খাওয়া ছাড়ুন
শিল্পোন্নত দেশ, যেমন—আমেরিকায় প্রতিদিন লোকজন তিন হাজার ৫০০ গ্রাম নুন অবলীলায় খাচ্ছেন: এর তিন-চতুর্থাংশ আসে প্রক্রিয়াজাত খাবার ও রেস্তোরাঁর খাবার থেকে। সে দেশের ন্যাশনাল হার্ট ও লাং ইনস্টিটিউট বলছে, নুন খাওয়া অর্ধেকে নামিয়ে আনলে প্রতিবছর হূদেরাগ ও রক্তনালি রোগে দেড় লাখ মৃত্যু ঠেকানো যাবে।
সোডিয়াম গ্রহণ কমাতে হলে এর বদলে খেতে হবে ফল, সবজি, লো-ফ্যাট দুধজাত খাবার। আমাদের দেশেও ফাস্টফুড, রেস্তোরাঁয় খাবার খাওয়া বাড়ছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, তাই সাবধান হওয়া উচিত অবিলম্বে।
যোগ করুন হূদ্স্বাস্থ্যকর চর্বি
মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ওমেগা-৩ মেদঅম্লসমৃদ্ধ খাবার খেলে কমে আসে রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড। খুব উঁচু মাত্রায় ওমেগা-৩ মেদঅম্ল আছে শীতল পানির মাছ, যেমন—বুনো স্যামন মাছ, ম্যাকরিল, সার্ডিনস, হেলিবাট বা হেবিং। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ: প্রতি সপ্তাহে মাছের অন্তত দুটি সার্ভিং।
তাই মাছ খান স্বচ্ছন্দে। মাছে-ভাতে বাঙালি। সামুদ্রিক মাছ, মিঠা পানির মাছ যা-ই হোক। মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে দেখা যায় কমে হূদ্ক্ষতিকর এলডিএল, বাড়ে হূদিহতকর এইচডিএল। এই ফ্যাটের ভালো উৎস হলো অ্যাভোকেডো, বাদাম, বাদাম মাখন, জলপাই তেল।
যোগ করুন বেশি বেশি আঁশ
প্রতিদিন ৩৫-৪০ গ্রাম আঁশ হবে লক্ষ্য। আঁশ কমায় কোলেস্টেরল: একসঙ্গে বন্ধনাবদ্ধ হয়ে নিষ্ক্রান্ত করে শরীর থেকে। কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাঁদের খাবারে নিয়মিত আঁশ থাকে, তাঁদের এলডিএল কমে যায় ২৫ শতাংশ। আঁশ খেলে ওজন হ্রাসেও বেশ সুবিধা হয়, আঁশসমৃদ্ধ খাবার পেট ভরাট করে সহজে, তাই দিনে কম খেলেও তৃপ্তিসুখ মেলে কম সময়েই।
মসলা যোগ করুন আনন্দে
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যে মসলা যোগ করলে তা হূদিহতকর। লঙ্কা বেশ মজবুত করে হূদ্যন্ত্রকে। ধমনি ও কৈশিকাকেও। কমায় কোলেস্টেরলও। জার্নাল অব ডায়াবেটিস কেয়ার-এ প্রকাশিত নিবন্ধে দেখানো হয়েছে, অর্ধেক চা-চামচ দারচিনি প্রতিদিন কমায় এলডিএল কোলেস্টেরল। অনেক লতাগুল্মে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ধনেপাতা, মেথিশাক, পুদিনাপাতা, আমেরিকার ওমেগানো এসব বেশ সমৃদ্ধ। রসুন খেলে কমে রক্তের কোলেস্টেরল। আদা হলো রক্তকে পাতলা করার ওষুধ, প্রদাহরোধীও বটে।
বেছে নিন খাদ্য, যাতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট
হূদ্সুস্বাস্থ্যনির্ভর করে উন্মুক্ত, নমনীয় ধমনির ওপর, যেগুলো দিয়ে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে রক্ত। গাঢ় চকলেট, কোকো, উদ্ভিজ্জ, যেমন—রেড ওয়াইন ও সবুজ চা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। রক্তস্রোতে মুক্তমূলকদের এটি ক্ষতি রোধ করে। prothom-alo

মেয়েদের অবাঞ্ছিত লোম

বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, যথাযথ চিকিত্সায় এ ধরনের সমস্যায় প্রতিকার পাওয়া যায় বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, যথাযথ চিকিত্সায় এ ধরনের সমস্যায় প্রতিকার পাওয়া যায়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল।

মেয়েটির আপাদমস্তক বোরকায় ঢাকা। কালো হিজাবের মধ্যে সুন্দর টানা টানা চোখ কেবল দেখা যায়। বয়স ১৫ কি ১৬। মুখের কাপড় সরাতে এই কঠিন পর্দার কারণটা বোঝা গেল। মেয়েটির ঠোঁটের ওপর, চিবুক, কপাল ও জুলপির কাছে ঘন লোমের রেখা; উঠতি বয়সের ছেলেদের যেমনটা দেখা যায়। এর জন্য বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে নিশ্চয় অনেক হেনস্তা হতে হয়েছে তাকে। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতেই তার এই মুখ ঢেকে চলা; স্বীকার করল মেয়েটি ছলছল চোখে। সঙ্গে রয়েছে আরেক উপদ্রব—অনিয়মিত মাসিক। এক মাস হয় তো দুই মাস হয় না। বাড়িতে মা দুশ্চিন্তায় অস্থির। শেষ পর্যন্ত দূর-সম্পর্কের এক চিকিৎসক-আত্মীয়ার সঙ্গে কথা বলে মা বুঝেছেন যে হরমোনের সমস্যার কারণে মেয়েদের এসব সমস্যা দেখা দেয়। আর এর সুনির্দিষ্ট সহজ চিকিৎসাও আছে।
অবাঞ্ছিত লোম: কী ও কেন
আর সব স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো মানুষের শরীর সূক্ষ্ম লোম বা চুলে ঢাকা। এর মধ্যে বিশেষ বিশেষ স্থানে চুলের বৃদ্ধি ও গড়ন হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। কৈশোরে পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেনের প্রভাবে কিশোর ছেলেদের দাড়ি-গোঁফ গজায়; বুক, তলপেট ও ঊরুতে চুল বাড়ে, জুলপি বড় হয়। মেয়েদের শরীরে এন্ড্রোজেন খুবই কম মাত্রায় থাকে বলে এসব স্থানে ছেলেদের মতো চুল গজায় না। তবে মেয়েদের দেহে কখনো পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেনের আধিক্য দেখা দিলে এমনটা হতে পারে। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মেয়ের এমনিতেই কোনো কারণ ছাড়াই শরীরে বেশি চুল থাকে। এ জন্য পরিবারে মা-বোনদের এ রকম ছিল কি না, তা জানা দরকার। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত লোমের অধিকারী মেয়েরা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত। এরা সাধারণত ওজনাধিক্য বা স্থূলতায় ভোগে, কৈশোরে অবাঞ্ছিত লোম, অনিয়মিত মাসিক ইত্যাদি সমস্যায় আক্রান্ত হয়, এদের মুখে ব্রণও বেশি হয়। হরমোন পরীক্ষা করলে দেখা যায়, এদের শরীরে পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় একটু বেশি, মেয়েলি হরমোনগুলোতেও কিছু তারতম্য আছে। এই মেয়েদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে চর্বির আধিক্য হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। পরবর্তী সময় এদের একটি বড় অংশ বন্ধ্যতা সমস্যায় ভোগে।
যদি অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যা খুব দ্রুত সময়ে অনেক মারাত্মক আকারে দেখা দেয়, তবে দেখতে হবে শরীরে এন্ড্রোজেন নিঃসরণকারী কোনো টিউমার বা ক্যানসার হয়েছে কি না। স্টেরয়েড ট্যাবলেট খেলে বা দেহে স্টেরয়েড হরমোনের আধিক্য থাকলেও অবাঞ্ছিত লোম বেশি হয়।
বিব্রত হওয়ার কিছু নেই
সত্যিই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রথমেই দেখতে হবে, অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন এন্ড্রোজেন কোথা থেকে নিঃসৃত হচ্ছে; যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে বাইরে থেকে ইনজেকশন বা দেহের অভ্যন্তরে কোনো টিউমার নেই, তবে অন্যান্য প্রমাণের নিরিখে পলিসিস্টিক ওভারি আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। মজার ব্যাপার, এই কিশোরীরা ওজন কমাতে সমর্থ হলেই নানা সমস্যা আপনাআপনিই সেরে যায়। যথাযথ খাদ্যনিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন অনেকখানি কমাতে পারলে মাসিক নিয়মিত হয়, লোম কমে আসে এবং ব্রণও কমে যায়। ওজন ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে অনেক সময় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। মাসিক নিয়মিত করার জন্য কখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা অন্যান্য হরমোনজাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে কৈশোরেই এদের ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিস ও রক্তে চর্বির ঝুঁকি সম্পর্কে সাবধান হতে হবে, পরীক্ষা করতে হবে এবং পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে হবে। এই মেয়েরা পরবর্তী সময়ে গর্ভবতী হলে অবশ্যই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
দরকার ধৈর্য ও সঠিক জীবনাচরণ
আমাদের শরীরে একটি চুলের আয়ু প্রায় ছয় মাস। তাই চিকিৎসায় ফল পেতে ছয় মাসের বেশি সময় লেগে যেতে পারে। তাই এই রোগের চিকিৎসায় প্রথমেই দরকার ধৈর্য। অবাঞ্ছিত লোম ওঠানোর অনেক পদ্ধতি আছে, যেমন—থ্রেডিং, ব্লিচিং, শেভ করা, ইলেকট্রলাইসিস বা ডায়াথারমির মাধ্যমে হেয়ার রিমুভ করা। চিকিৎসার পাশাপাশি এসব পদ্ধতিও প্রয়োগ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ওজন কমানো, সঠিক জীবনাচরণ মেনে চলা ও একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা তো চলবেই। কিশোরীর এই ব্রিবতকর সমস্যায় তাই অযথা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা না করে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা ও চিকিৎসা নেওয়াটা জরুরি। prothom-alo

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes