Total Pageviews

Saturday, July 23, 2011

পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথামুক্তিতে নতুন শল্যচিকিৎসা

backpain-treatment
বামরুনগ্রাডের অভিজ্ঞতা
পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথামুক্তিতে নতুন শল্যচিকিৎসা
পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথার চিকিৎসায় নতুন সংযোজন এন্ডোসকপিক স্পাইন সার্জারি। গতানুগতিক অস্ত্রোপচারের বিকল্প নতুন প্রযুক্তির এই শল্যচিকিৎসায় রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে বলে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন।
এশিয়াতে এই চিকিৎসায় অগ্রদূত ব্যাংককের বামরুনগ্রাড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ভিরাপান কুয়ানসংথাম প্রথম আলোকে বলেন, মেরুদণ্ডে বড় ধরনের সমস্যা এন্ডোসকপিক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। এই অস্ত্রোপচারের পর ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে রোগী হাঁটাচলা করতে পারেন। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে পারেন।
ঘাড় ও মেরুদণ্ডের চিকিৎসায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই চিকিৎসার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় চার বছর আগে জার্মানিতে। জার্মানির সেন্ট আন্না হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সিভাসটিয়ান রাটেন ও ডা. মার্টিন কমপ মূলত এই চিকিৎসা পদ্ধতির পথিকৃৎ। আর এই চিকিৎসা পদ্ধতির সরঞ্জাম তৈরি করেছে জার্মানির মেডিকেল সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রিচার্ড ওলফ জিএমবিএইচ।
এশিয়াতে এই পদ্ধতিতে ঘাড় ও পিঠের ব্যথার চিকিৎসা প্রথম শুরু করে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত বামরুনগ্রাড হাসপাতাল। হাসপাতালের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. ভিরাপান ও তাঁর সহকর্মীরা ডা. সিভাসটিয়ান রাটেন ও ডা. মার্টিন কমপের কাছে এই পদ্ধতির ব্যবহার হাতে-কলমে শিখেছেন। এরপর তাঁরা নিজ দেশে চর্চা শুরু করেন। ডা. ভিরাপানের নেতৃত্বে বামরুনগ্রাড হাসপাতালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্পাইন ইনস্টিটিউট। এই ইনস্টিটিউটে জার্মানি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২০ সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি দল চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজ করছে।
চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে ডা. ভিরাপান বলেন, তাঁরা তিনটি পর্যায়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। প্রথমে অস্থি ও স্নায়ু শল্যচিকিৎসক, মেডিসিন, ফিজিওথেরাপিসহ ঘাড় ও পিঠের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষ-নিরীক্ষা শেষে রোগ, এর চিকিৎসা ও সুস্থতার বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়। তারপর চিকিৎসার বিষয়ে পরিকল্পনা করা হয়। প্রয়োজনে তাঁরা জার্মানির সেন্ট আন্না হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গেও পরামর্শ করেন।
ডা. ভিরাপান বলেন, পিঠের ব্যথার শেষ বিকল্প হচ্ছে শল্যচিকিৎসা। এন্ডোসকপিক পদ্ধতিতে মাত্র আট মিলিমিটার ছিদ্র করে মেরুদণ্ডে শল্যচিকিৎসা দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের সময় মেরুদণ্ডের ভেতরের চিত্র কম্পিউটারের মনিটরে দেখা যায়। অস্ত্রোপচারের কারণে টিস্যু ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতির যে আশঙ্কা থাকে নতুন এই পদ্ধতিতে তা অনেক কম।
বামরুনগ্রাড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই শল্যচিকিৎসায় রোগীপ্রতি খরচ পড়ছে দুই থেকে তিন লাখ থাই বাথ (চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা থেকে সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা)।
ডা. ভিরাপান প্রথম আলোকে জানান, বামরুনগ্রাডে এ পর্যন্ত ৩০০ জন রোগীকে এন্ডোসকপিক সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৯৫ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে তাঁরা সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, যাঁদের মেরুদণ্ডে ত্রুটির কারণে পিঠে অনবরত প্রচণ্ড ব্যথা ও একই কারণে পায়ে দুর্বলতা দেখা দেয় এবং মেরুদণ্ডে জন্মগত ত্রুটি আছে বা জটিল সমস্যা আছে তাদের জন্য এন্ডোসকপিক সার্জারির অনুমোদন দিচ্ছেন তাঁরা।
ডা. ভিরাপান জানান, চিকিৎসার পাশাপাশি নতুন এই পদ্ধতির ওপর দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতেও তাঁরা গবেষণা করছেন। এসব বিষয়ে বামরুনগ্রাডের চিকিৎসক দল জার্মান চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।
নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতির প্রসার বাড়াতে বামরুনগ্রাড হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘এশিয়ান ফুল এন্ডোস্পাইন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’। ‘পিঠ ও ঘাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি’—এই স্লোগানে ইনস্টিটিউটের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ৭ জুলাই। ডা. ভিরাপান এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক।
ওই দিনই জার্মানির সেন্ট আন্না হাসপাতাল ও রিচার্ড ওলফ জিএমবিএইচের সঙ্গে বামরুনগ্রাড হাসপাতালের সমঝোতা স্মারক সই হয়। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বামরুনগ্রাডের পরিচালক (মেডিকেল) ডা. চামারি চুয়াপেচারাসোপন বলেন, চুক্তি সই নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বামরুনগ্রাড হাসপাতালের সক্ষমতার বড় স্বীকৃতি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ডা. মার্টিন কমপ বলেন, সেন্ট আন্না হাসপাতালে এই পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ১০ হাজার রোগীকে সফলভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
ডা. ভিরাপান জানান, ইতিমধ্যে তাঁরা মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, হংকংসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। ইনস্টিটিউট করার পর এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশের চিকিৎসকদের এক বছরের ফেলোশিপ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বছরে একবার দুই দিনের কর্মশালার ব্যবস্থা আছে। পরবর্তী কর্মশালা আগামী বছরের জানুয়ারিতে।
ডা. ভিরাপান বলেন, যেকোনো দেশের চিকিৎসকেরা ফেলোশিপ ও কর্মশালায় অংশ নিতে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অগ্রাধিকার পাবেন। কর্মশালায় অংশ নিতে জনপ্রতি এক হাজার মার্কিন ডলার ফি দিতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশের একজন চিকিৎসক একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন।
বামরুনগ্রাড হাসপাতালের পরিচালক (আন্তর্জাতিক বিপণন) সিলভিয়া ইয়ং জানান, এই চিকিৎসার ব্যাপারে তথ্য জানতে ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের রোগীরা তাঁদের ঢাকার তথ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন। পান্থপথে ইউটিসি ভবনের ১২ তলায় বামরুনগ্রাডের ঢাকার তথ্যকেন্দ্র অবস্থিত।
একনজরে বামরুনগ্রাড হাসপাতাল
 ১৯৮০ সালে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে প্রতিষ্ঠা।
 প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি হাসপাতালে পরিণত।
 ৫৫৪ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে  ৭০০ পূর্ণকালীন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১২০০ চিকিৎসক।
 রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার ২৫০ কক্ষ।
 ১৯টি অস্ত্রোপচার কক্ষ।
 ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা।
 বছর ১০ লাখ রোগীর চিকিৎসা, এর মধ্যে গত বছর চার লাখ ২০ হাজার ছিল বিভিন্ন দেশের রোগী।
 বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রোগীদের জন্য রয়েছে নিজ নিজ ভাষাভাষী গাইড।
টিপু সুলতান  ব্যাংকক থেকে ফিরে
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes