Total Pageviews

Wednesday, July 13, 2011

সব জ্বরেই অ্যান্টিবায়োটিক নয়



কখনো জ্বরে ভোগেনি এমন লোক পাওয়া মুশকিল। তবে জ্বর কোনো অসুখ নয়, অসুখের লক্ষণ মাত্র। আবার গা গরম হওয়া মানেই কিন' জ্বর নয়। সংজ্ঞানুসারে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণকারী মানদণ্ড স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গিয়ে যদি শরীরের তাপমাত্রা ৩৬.৫ সেন্টিগ্রেড-৩৭.৫ সেন্টিগ্রেড (৯৮-১০০ ফারেনহাইট) থেকে বেড়ে যায় তবেই জ্বর বলে ধরে নেয়া হয়। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ৯৮.৪ বা ৯৮.৬ ফারেনহাইট থাকে। ১ ফারেনহাইট কম বা বেশিও হতে পারে। আবার দিনের বিভিন্ন সময়েও তাপমাত্রা ১ ফারেনহাইট কমবেশি হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। তাপমাত্রা ১০০.৪ ফারেনহাইটের বেশি না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই এবং একে স্বল্পমাত্রার জ্বর বা লো গ্রেড ফিভার বলে। জ্বরকে দেহের প্রোটেক্টিভ মেকানিজম বা প্রতিরক্ষাকারী প্রক্রিয়াও বলে। কারণ কিছু জীবাণু যেমন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস উচ্চতাপমাত্রায় জীবনধারণ করতে পারে না। জ্বর কখনো একা আসে না, কখনো সঙ্গে আনে কাশি, গলা ব্যথা, দুর্বলতা, গা ব্যথা, কাঁপুনি, বমি ভাব ও খাবারে অরুচি ইত্যাদি।
একজন সুস্থ নারী বা পুরুষের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো
  • মুখে থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ৯২-১০০ ফারেনহাইট
  • রেক্টাম বা পায়ুপথে থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ৯৪-১০০ ফারেনহাইট
  • হাতের নিচে থার্মোমিটার দিয়ে মাপলে ৯৬-৯৯ ফারেনহাইট
বিভিন্ন ধরনের জ্বর
চলমান জ্বর
এ ক্ষেত্রে দিনব্যাপী জ্বর থাকে ও সারা দিনে তাপমাত্রার তারতম্য ১ ফারেনহাইটের বেশি হয় না। (জ্বরে ওষুধ খাওয়ালে অবশ্য কমবেশি হবে) এ ধরনের জ্বরের কারণ লোবার নিউমোনিয়াম টাইফয়েড, প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি।
নির্দিষ্ট বিরতির পর জ্বর
এ ক্ষেত্রে দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর জ্বর আসে এবং মধ্যবর্তী সময় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে। এ ধরনের জ্বরের কারণ ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, সেপটিসেমিয়া (রক্তে ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশন) ইত্যাদি।
রেমিটেন্ট ফিভার
এ ক্ষেত্রে সারা দিনই জ্বর থাকে, তবে তামপাত্রার ওঠানামা ১ ফারেনহাইটের বেশি হয়। জ্বর কখনোই বেড়ে যায় না এবং তাপমাত্রাও একেবারে স্বাভাবিক হয় না। এ ধরনের জ্বরের কারণ ইনফেক্টিভ অ্যানডোকার্ডাইটিস বা হার্টের এক ধরনের ইনফ্লামেশন।
পল অ্যাবস্টেন ফিভার
এটি একটি বিশেষ ধরনের জ্বর, যেখানে এক সপ্তাহ অনেক জ্বর থাকার পর পরবর্তী সপ্তাহে জ্বর একেবারেই থাকে না। আবার পরের সপ্তাহে জ্বর আসে। এ ধরনের জ্বরের কারণ হজকিন্স লিম্ফোমা বা এক ধরনের ক্যান্সার।
প্যারাসিসট্যান্ট ফিভার বা ক্রমাগত জ্বর
ব্যাখ্যাতীত কারণে ক্রমাগত জ্বর যা অজ্ঞাত কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়া হিসেবে চিকিৎসকরা শনাক্ত করেন। তবে কখনো কখনো জ্বর ছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। একে হাইপারথাইমিয়া বলে। যেমন- হিটস্ট্রোক হলে ও কিছু ওষুধ খেলে।
অতিরিক্ত জ্বর
তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলে এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি, অতি দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী মারা যেতে পারে। এ ধরনের জ্বরের কারণ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, সেপসিস, থাইরয়েড স্ট্রম, কাওয়াসাকি সিনড্রম ইত্যাদি।
জ্বরের কারণগুলো
  • ইনফেকশনের কারণে ইনফ্লুয়েঞ্জা, এনকেফালাইটিস, ম্যালেরিয়া, মেনিনজাইটিস, ইনফেকশাস মনোনিউক্লিওসিস গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস।
  • ইনফ্লামেশনের কারণে ফোড়া, অ্যাবসেস হলে।
  • টিস্যু ক্ষতিগ্রস্থ হলে যেমন- অপারেশনের পর, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হিমোলাইটিক ডিজিজ বা রক্তকণিকা ভাঙার অসুখ, কেমোথেরাপি নিলে।
  • রক্ত দেয়ার পর যদি দাতা ও গ্রহীতার রক্তের ক্রস ম্যাচিং বা সঠিক সমন্বয় না হয়।
  • ক্যান্সার-লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ইত্যাদি হলে
  • পালমোনারি এমবোলিজম হলে
  • ডিপ ভেইন থ্রম্বসিস হলে
  • কখনো কিছু মেটাবোলিক অসুস'তায় গাউট হলে
জ্বর হলে কী হয়?
জ্বর শরীরের কোনো অসুবিধার জন্যই হয়। তবে এটি প্রতিরক্ষাকারী প্রক্রিয়া। কারণ জ্বর হলে-
  • উচ্চ তাপমাত্রায় রক্তের শ্বেতকণিকা দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং শরীরে অনুপ্রবিষ্ট জীবাণু ধ্বংস করে।
  • উচ্চ তাপমাত্রায় ফ্যাগোসাইটোসিস বা ক্ষতিকর জীবাণু খেয়ে ফেলার স্বাভাবিক দৈহিক প্রক্রিয়া দ্রুততর হয়।
  • রোগ প্রতিরোধকারী টি সেলের বিস্তার বেড়ে যায় যা দেহকে প্রতিরক্ষা দেয়।
  • উচ্চ তাপমাত্রায় জীবাণু ও জীবাণু থেকে নিঃসৃত ক্ষতিকর পদার্থকে অকার্যকর করে।
জ্বর সম্পর্কে ভুল ধারণা
  • অনেকেই জ্বরের সময় কিছু খায় না। এতে শরীর দুর্বল হয়ে জীবাণুর বংশবিস্তার দ্রুততর হয়।
  • জ্বরের সময় অনেকে পানি ও জুস খান না এই মনে করে যে এতে ঠাণ্ডা আরও বেড়ে যাবে কিন্তু এটি ঠিক নয়। জ্বরের সময় প্রচুর পানি, ডাবের পানি ও ফলের রস খেতে হবে যেমন- শরীর পানিশূন্যতার শিকার না হয়।
  • জ্বরের সময় অনেকে মাথায় পানি ঢালে। কিন্তু অতিরিক্ত পানি মাথায় ঢালার প্রয়োজন নেই। মাথা ধুলে দ্রুত শুকিয়ে ফেলুন। ভেজা চুল নিউমোনিয়া বা অন্যান্য ফুসফুসজনিত ইনফেকশনের কারণ হতে পারে।
  • ঠাণ্ডা বা বরফশীতল পানি দিয়ে অনেকে গা স্পঞ্জ করে। এটিও ঠিক নয়। স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে গা স্পঞ্জ করে তোয়ালে দিয়ে মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে।
  • অনেকে জ্বর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে চান না। কিন্তু জ্বর ১০২ ডিগ্রির বেশি হলে অবশ্যই জ্বরের ওষুধ খাওয়া উচিত। বিশেষ করে শিশুদের। কারণ অন্যথায় তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠে গেলে মসি-ষ্ক ক্ষতিগ্রস- হতে পারে। খিঁচুনি হতে পারে।
জ্বর হলেই কি অ্যান্টিবায়োটিক?
প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধের দোকানে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয়, রোগীরাও অ্যান্টিবায়োটিক খেতে শুরু করে দেন জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গেই। কিন্তু অধিকাংশ জ্বরের ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা নেই বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে হতে পারে ক্ষতির কারণ।
  • অ্যান্টিবায়োটিক হলো সেসব ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে বা বিস্তার রোধ করে। এটি জ্বর কমায় না। যদি জ্বর ভাইরাসঘটিত হয় সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রয়োজন নেই, কাজও নেই। শ্বাসনালির সমস্যা বা আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন যেমন- ফ্লু, কমন কোল্ড বা সর্দিজ্বর, গলাব্যথা ইত্যাদি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাঘগটিত ও ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনা থেকেই ভালো হয়ে যায়।
  • কোনো সুনির্দিষ্ট রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিসে পৌঁছার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দিলে প্রকৃত রোগটি অনেক সময় ধরে পড়ে না ও সুচিকিৎসা পাওয়া অসম্ভব হয়ে যায়।
  • জ্বর শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবায়োটিক দিলে বাচ্চাদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ার সুযোগও হয় না। তাই অন্তত দুই দিন না গেলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা উচিত নয়। মনে রাখবেন মেনিনজাইটিস বা সেপটিসেমিয়া ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে দেরি করে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে কোনো অসুবিধা নেই।
  • যদি জ্বরের সঙ্গে পেট খারাপ থাকে, তবে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে ইনফেকশন আরও বেড়ে যাবে। সালমোনেলা নামক জীবাণুর ক্ষেত্রে অকার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে রোগী ক্রনিক ক্যারিয়ার বা বাহকে পরিণত হয়। কখনো যথেচ্ছ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে রোগী মারাত্মক অন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে।
  • কোনো কারণ ছাড়াই ব্রড স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে শরীরে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়। তাই আন্দাজে অ্যান্টিবায়োটিক না দিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে দিতে হবে।
  • রোগীরা অনেক সময় ভাবেন দামি অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই দ্রুত রোগ সারবে। দোকানদার বা হাতুড়ে ডাক্তাররা এ সুযোগে প্রচুর দামি অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। কিন্তু মনে রাখবেন বেশির ভাগ জ্বরে যদি অ্যান্টিবায়োটিক লাগে তা কম দামের পেনিসিলিন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকই যথেষ্ট।
কখন অ্যান্টিবায়োটিক খেতেই হয়?
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রমে আক্রান্ত।
  • যারা ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট (যেমন- ক্যান্সারের ওষুধ, কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করার পর যে ধরনের ওষুধ খেতে হয়) ওষুধ খান।
  • কেমোথেরাপি নিলে।
  • যাদের কোনো কারণে প্লীহা ফেলে দেয়া হয়েছে।
  • বাতজ্বরের রোগী এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক না খেলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
  • জ্বর যদি যক্ষ্মা বা টিবির কারণে হয় মনে রাখবেন অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে দু-এক দিনের মধ্যে অনেক সময়ই জ্বর ভালো হয়ে যায়। কিন্তু জ্বর চলে গেলেই ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় এটাও বিপদের কারণ হতে পারে।
জ্বর যখন ভয়ের কারণ
  • জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে
  • জ্বরের সঙ্গে ঘাড় শক্ত হয়ে গেলে
  • গায়ে লাল লাল ছোপ বা র‌্যাশ থাকলে
  • শরীরের অন্যান্য গ্ল্যান্ড বা লিম্ফনোড ফুলে গেলে
  • শ্বাসকষ্ট ও কাশি থাকলে
  • মাথায় আঘাতের পর বমি, চোখে ঝাপসা দেখার পাশাপাশি জ্বর থাকলে
  • বারবার জ্বর এলে ও চিকিৎসায় ভালো না হলে
  • জ্বর ও গিঁটেব্যথা থাকলে। এ ক্ষেত্রে বাতজ্বর হতে পারে
  • জ্বর ও খুশখুশে কাশি তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে এ ক্ষেত্রে যক্ষ্মা হতে পারে।
  • হার্টের ভাল্বের অপারেশনের পর ক্রমাগত জ্বর থাকলে
  • কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চলমান অবস্থায় জ্বর এলে
  • জ্বরের সঙ্গে পেট ফুলতে থাকলে
  • ক্যাথেটার করা রোগীর জ্বর এলে
  • অপারেশনের পর ঘনঘন জ্বর এলে
  • নবজাতক শিশুর জ্বর থাকলে
  • কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা রোগীর জ্বর এলে
মনে রাখবেন জ্বর বেশি মানেই রোগ বেশি এবং জ্বর কম মানে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই এটা ঠিক নয়। কারণ অনেক সময় অনেক সাধারণ অসুখে অনেক জ্বর থাকে, আবার কোনো কোনো সময় মারাত্মক অসুখেও হালকা জ্বর থাকে।
লেখক : অধ্যাপক
মেডিসিন বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা
ওষুধ যখন বিপদের কারণ
ডা. দিদারুল আহসান
রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমরা ওষুধ খাই; কিন্তু সেই ওষুধই আবার কখনো কখনো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে চর্মরোগে। বেশ কিছু চর্মরোগ আছে যার নেপথ্যে মূল ভূমিকায় রয়েছে কোনো না কোনো ওষুধ। অসংখ্য রোগ রয়েছে যা ওষুধের কারণে হয় যার মধ্যে একটি হচ্ছে ফলিয়েটিভ ইরাইথ্রোডার্মা। এই রোগের অন্তত ১১ শতাংশের কারণ হচ্ছে কোনো না কোনো ওষুধ। যে ওষুধগুলোর ব্যবহার থেকে এ রোগ হতে দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সালফার যা কিন্তু অহরহই ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও আছে অ্যালুপুরিনল, ফেনিটমেন, ফেনোবারবিটাল, আইসোনায়েড, আয়োডিন ইত্যাদি। এই রোগের ক্ষেত্রে শরীরজুড়ে আঁইশ হতে দেখা যায়, যা ঘষা দিলে ঝরে পড়তে থাকে। শুরুতে লাল লাল দাগ দিয়ে ত্বকে শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে তার বিস্তার ঘটতে থাকে এবং পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু দিনের মধ্যেই ত্বক আঁইশ আকারে উঠে আসতে থাকে।
পরবর্তী সময়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দেয় সঠিক চিকিৎসা। না হলে তার জীবন শঙ্কা তৈরি হয়। এমন আরেকটি রোগ হচ্ছে ড্রাগ ইরাপশন। নাম থেকেই বোঝা যায় ড্রাগ বা ওষুধের কারণেই এই রোগটি হয়। এ ক্ষেত্রে ত্বকের গায়ে র‌্যাশ বা চাকা ওঠে, যা দেখলেই মনে হয় যেন হাম উঠেছে কিংবা অ্যালার্জি উঠেছে।
ওষুধের কারণে সাধারণভাবে দুই ধরনের র‌্যাশ হয় যেমন- আর্টিকেরিয়া, যাতে চাকা হয় এবং চুলকানি থাকে। আর এক ধরনের র‌্যাশ হলো মরবিফিলিফর্ম। শেষেরটা বেশি পাওয়া যায় এবং শরীরজুড়ে লাল লাল দাগ অথবা ছোট ছোট দানা বা গোটার আকারে লালচে রঙের হতে দেখা যায়। যেহেতু- ওষুধের কারণেই এই রোগটি হয় তাই এ দরনের র‌্যাশ দেখা দেয়া মাত্র ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে। সাধারণত যেসব ওষুধের কারণে এই রোগ হয় তা হলো অ্যামোক্সাসিলিন, কোট্রামাইসোল, অ্যামপিসিলিন, পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, সিমেটাডিন ইত্যাদি।
ফিঙ ড্রাগ ইরাপশন নামের আরেকটি রোগে ওষুধ খেলে বারবারই এ রকম উপসর্গ নিয়ে রোগটি দেখা দেয়। যতবার ওষুধটি খাবেন ততবারই ত্বকে এই রোগটি একইভাবে দেখা যাবে। দেখতে গোলাকার ডিম্বাকৃতির লালচে চুলকানিযুক্ত, উঁচু অথবা ফোস্কাযুক্ত যেকোনোভাবে দৃশ্য হতে পারে, যা সেরে যাওয়ার পর স্থানটি কালো রঙের হয়ে থাকে অনেক দিন পর্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওষুধ যার কারণে রোগটি হয় যেমন- টেট্রাসাইক্লিন, সালফোনামাইড, বারবিচুরেট, স্যালিসাইলেটস ইত্যাদি।
স্টেভাসন জনসনস সিনড্রম নামের আরেকটি রোগও ওষুধের কারণেই হয়। রোগটি অত্যন্ত জটিল এবং এর থেকে জীবননাশও ঘটতে পারে। প্রথমে ফোস্কা আকারে দেখা দেয় যা ঠোট, জিহ্বা, মুখের ভেতরে ঘা হয়ে দেখা দেয়। চোখে আক্রমণ ঘটলে অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখ, হাত ও পায়ের তালুতে ফোস্কা নিয়ে উঠতে দেখা যায়। ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া গিরায় ব্যথা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, যকৃৎ বড় হওয়া এবং রক্তের মধ্যেও ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয় যা চামড়ার ওপর দিয়ে লাল লাল ছোট অথবা বড় দাগ নিয়ে দেখা দেয়, যেটা কখনো কখনো খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যদি ঠিক সময় ওষুধ খাওয়া শুরু করা না হয় রোগটির জন্য দায়ী কয়েকটি ওষুধ হলো বারবিচুরেট, কুইনিডিন, ফিনাইলবুটাজোন ইত্যাদি।
একটি কথা মনে রাখতে হবে ওষুধ কিন্তু এক ধরনের বিষ। সাধারণত তা জীবাণুর জন্য বিষ হিসেবে কাজ করে। তবে কখনো কখনো শরীরেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই ওষুধ থেকে দূরে নয়, ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক : চর্ম, অ্যালার্জি ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ
আল-রাজী  হাসপাতাল, ঢাকা
ডা. জিলান মিয়া সরকার
সুনর্গডট ইনফু

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes