Total Pageviews

Sunday, September 18, 2011

ডায়াবেটিসের সমস্যা

a k azad khan
পরামর্শ দিয়েছেন দেশের খ্যাতিমান ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান।
সমস্যা: আমার বয়স ৬১ বছর। ২০০০ সালের মে মাসে আমার ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আমার গাইড বই নম্বর ২১৭৪৩৫। উচ্চতা ১৬৬ সেন্টিমিটার, ওজন বর্তমানে ১১৫ কেজি। মা-বাবা দুজনেরই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন ও হাঁপানি ছিল। বাবা স্ট্রোক করে মৃত্যুবরণ করেন। মা-ও পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান এবং পরে মৃত্যুবরণ করেন।
ডায়াবেটিস রোগীদের যেভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও কায়িক পরিশ্রম বা হাঁটার পরামর্শ চিকি ৎ সকেরা দিয়ে থাকেন, তা আমার পক্ষে পালন করা সম্ভব হয়নি। সম্ভব না হওয়ার কারণ, আমি ছোটবেলা থেকেই ভোজনবিলাসী ও অলস-প্রকৃতির ছিলাম। চাকরিজীবনেও আমি আলস্য ত্যাগ করতে পারিনি। সারা দিনের কোনো সময়ই আমি হাঁটাহাঁটি বা কায়িক কোনো পরিশ্রম করিনি। একটি কাজ আমি সব সময় মেনে চলেছি, তা হলো, নিয়মিত ওষুধ সেবন।
অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও কায়িক শ্রমের অভাবে আমি ক্রমেই মুটিয়ে যেতে থাকি। এখন আমার কোমরের মাপ ৫৮ ইঞ্চি। হাঁটাচলা করতে পারি না (স্বাভাবিক)। সারা দিন বসে এবং শুয়ে থেকে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যে আমার কিডনিতে জটিলতা দেখা দেয়। অপরদিকে প্রস্টেটগ্রন্থিও বেড়ে যায়। পাঁচ-ছয় বছর ধরে পা ফুলে গেছে, এমনকি পায়ের তালুও ফোলা। চোখেও ছানি পড়ার আভাস দেখা যাচ্ছে। যখন হাঁটতে পারতাম, তখন আমি চিকি ৎ সকের পরামর্শ উপেক্ষা করে হাঁটিনি। এখন আমি বাঁচার জন্য চেষ্টা করেও অতিরিক্ত ওজন ও শ্বাসকষ্টের জন্য হাঁটতে পারি না। আমার দেহের ওজন পায়ের হাঁটু বহনে অক্ষম। মেজাজ সব সময় উত্তেজিত থাকে, তবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এখন আমি কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সোজা হয়ে এক মিনিট একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। গোসল করে ওঠার পরও হাঁপাতে হয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রধান হওয়ায় সংসারের ব্যয় নির্বাহের পর ওষুধ ও চিকি ৎ সার ব্যয়ভারের জন্য ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল। দেহের নিম্নাংশ প্রায় অবশের পথে বলা চলে।
দৈহিক পরিশ্রম ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা, বিশেষ করে ওষুধে ওজন কমানো এবং চলাফেরার উপযোগী করার মাধ্যম থাকলে সে বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। আমার রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক।
এত কথা বলার এবং শোনার জন্য বাংলাদেশে কোনো চিকি ৎ সক নেই।তাই এ সুযোগ গ্রহণ করলাম। ধন্যবাদ।
গাজী আহসান
জিগাতলা, ঢাকা।
 যেহেতু আপনার ডায়াবেটিসসংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতাও দেখা দিয়েছে, তাই সব রিপোর্টসহ আপনি ১৬ অথবা ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় মিরপুর দারুস সালামে সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করবেন। এতে আপনার কোনো খরচ হবে না।
আপনার শেষ মন্তব্যটির সঙ্গে একমত হতে পারছি না বলেদুঃখিত। বাংলাদেশে অনেক চিকি ৎ সক রয়েছেন। আমার মতে, অধিকাংশ চিকি ৎ সক ঠিকভাবে কথা শোনেন এবং ব্যবস্থাপত্র দেন। চিকি ৎ সক খারাপ নন। কাজেই আপনার কথা শোনার জন্য বাংলাদেশে কোনো চিকি ৎ সক নেই—এ কথাটির সঙ্গে একমত হতে পারছি না।
সমস্যা: আমার বয়স ৫০। আমি একজন ব্যবসায়ী। ১০ বছর ধরে আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমার মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকে এবং ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আচরণ পরিবর্তন করতে পারছি না। এ ছাড়া আমি প্রায় ২০ বছর ধরে ধূমপানে আসক্ত। দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। পারিবারিক নানা সমস্যায় সারা দিন দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটাতে হয়। আমার ওজন ৫৫ কেজি। চিকি ৎ সকের উপদেশে আমি প্রতিদিন গ্লুকোমেট ৫০০ সেবন করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ।
 আপনার জন্য ধূমপান একেবারেই নিষিদ্ধ। ধূমপান এমনিতেই সবার জন্য ক্ষতিকর। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি ক্ষতিকর। কাজেই ধূমপান ছাড়ুন। খিটখিটে মেজাজ আর দুশ্চিন্তার সমাধান নেই, যদি না আপনি নিজেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করেন। এ জন্য যোগব্যায়াম উত্তম। আপনি মাইন্ড কন্ট্রোল ব্যায়াম করুন।
সমস্যা: ১৫ বছর ধরে তাকে লালন-পালন করছি। অর্থা ৎ ডায়াবেটিসকে। আপনারা বলেন, থ্রিডি অর্থা ৎ ডিসিপ্লিন, ডায়েট এবং ড্রাগ মেনে চললে প্রায় সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়। প্রথম দিকে আমি ছিলাম মেলিটাস-২ শ্রেণীর। এখন মেলিটাস-১ গোত্রের সদস্য। দুই বেলা ইনসুলিন ও ওষুধ খেতে হয়। পেশাগত কারণে শারীরিক ব্যায়াম করতে পারি না। বয়স ৫০+। ধূমপানের অভ্যাস ছিল (এখনো মাঝেমধ্যে খাই) বলে ডায়াবেটিসের পাঁচ বছরের মাথায় বুকটা ফেড়ে ফেলতে হয়। না, কোনো অ্যাটাক হয়নি—হালকা ব্যথা অনুভব করা মাত্রই চিকি ৎ সকের শরণাপন্ন হই এবং বাইপাসে চলে যাই। ইনসুলিন নেওয়ার পর থেকে মোটামুটি ভালোই আছি। তিন মাস পর পর লিপিড প্রোফাইল এবং প্রতি দুই মাস পর ডায়াবেটিস সেন্টারে যাই চেকআপ করাতে। ওজন ৬০ কেজি। আমার কয়েকটি প্রশ্ন—
১. প্রায় সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের মধ্যে জৈবিক চাহিদা অন্তর্ভুক্ত কি না? নাকি সব ডায়াবেটিস রোগীরই এ দিকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন? অনেককে দেখেছি বিয়ে করেছে, সন্তান জন্ম নিচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার পরামর্শ আশা করছি।
২. আমার S-creatinine সব সময়ই ১.৪০-১.৪৫-এর মধ্যে থাকে। এটি কি কোনো আগাম সংকেত?
৩. সকালে (১২+piodar 30) এবং রাতে ছয়-আট ইউনিট ইনসুলিন নিই। মাঝেমধ্যেই রাতে ভাত খেতে হয়। ভাত খেলে শেষ রাতের দিকে মাথায় একটা হালকা ব্যথা হয়। এটি কি কোনো সমস্যা?
৪. হাঁটাহাঁটির সময় পাই না, তবু প্রায়ই হাঁটি। হাঁটলে পায়ের মাসল ও নিচে ব্যথা হয়। ভরা পেটে হাঁটলে মাঝেমধ্যে অস্বস্তি লাগে। কোনো ব্যথা করে না। বুকটা মনে হয় একটু চেপে আসে। দুই-এক মিনিট বিশ্রাম নিলে হাঁটতে আর কোনো সমস্যা হয় না। আবার কি ব্লক হয়ে যাচ্ছে?
জাকির হোসেন
বৈকালী, খুলনা।
 আপনার সমস্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপনি ঠিক টাইপ-১ গোত্রের সদস্য নন। আপনার যেটা হয়েছে, আপনার এখন ইনসুলিননির্ভর ডায়াবেটিস হয়েছে। কারণ, টাইপ-১ জন্মগত। আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে পারিবারিক জীবনে জৈবিক চাহিদা পূরণে কোনো অসুবিধা হবে না। যেহেতু আপনার ক্রিয়েটিনিন বাড়তি মাত্রা দেখাচ্ছে। তাই একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। হাঁটাহাঁটির সময় বুকে ব্যথা হলে বিশ্রাম নেবেন এবং অতিসত্বর একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। শুক্রবার সকাল ১০টায় মিরপুর দারুস সালামে ডায়াবেটিস হাসপাতালে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
সমস্যা: আমি সাত বছর ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাসায় অ্যাকুচেক মেশিনে রক্ত পরীক্ষা করে নিজেই মনিটরিং করে আসছি। মুখে খাওয়ার ওষুধ খাই। তবে যে বিষয়ে জানতে চাইছি তা হলো, রাতে খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ব্লাড সুগার যদি ৮০ হয়, তাহলে সকালে ফাস্টিং ব্লাড সুগার তো আরও কম হওয়ার কথা; কিন্তু তা না হয়ে হয় ৯.০—এই এক মিলিমোল বাড়ে কেন? এ নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। অনুগ্রহ করে আমাকে বলবেন কি? প্রায়ই সকালের সুগার লেভেল বেশি থাকে, খাওয়ার পর কমে যায়।
সৈয়দা হাসনা হেনা
চট্টগ্রাম।
 অনেকের ক্ষেত্রে এ রকম সুগারের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। আপনি যেহেতু মুখে ওষুধ খান, এ রকমটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
সমস্যা: আমার বয়স ৬২ বছর। আমি আট বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি। ডায়াবিনল ৫ মিলিগ্রাম খাচ্ছি। নাশতার দুই ঘণ্টা পর রক্তের সুগার প্রতি মাসেই পরীক্ষা করাই। সঙ্গে লিপিড প্রোফাইল, ক্রিয়েটিনিন করাই। আমার রক্তের সুগার ওঠানামা করছে। দুই মাস আগে আমি হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে সিসিইউতে নিবিড় তত্ত্বাবধানে ছিলাম। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হয়েছে। বর্তমানে ইকো করে বলেছেন, তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমার রক্তচাপ ওঠানামা করে। আমার অষ্টিও আর্থ্রাইটিসও আছে। আমি বড়ি এনডিব্লেগ, ভ্যালসারটিল, রেমিকার্ড ৫ মিলিগ্রাম খাচ্ছি। এ অবস্থায় সুস্থ থাকতে করণীয় কী?
শংকর চন্দ্র সাহা
নতুন বাজার, বরিশাল।
 আপনার রক্তচাপ ওঠানামার জন্য হূদেরাগ হয়ে থাকতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সুষম খাবার জরুরি। এ জন্য আপনাকে পুষ্টিবিদের পরামর্শমতো লো-ফ্যাট, হাই-ফাইবার-জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, পরিমিত আহার করুন। নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন, সুস্থ থাকবেন।
সমস্যা: আমার বয়স ৩৭ বছর। ১৫ বছর ধরে আমার ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আমি শর্করাবিহীন বহুমূত্র রোগে ভুগছি। তিন বছর ধরে জীবনীশক্তি অত্যন্ত দুর্বল এবং ওষুধ-সহিষ্ণুতা অত্যন্ত কম হওয়ায় ২০ মিলিগ্রাম পাওয়ারের ওপর কোনো ওষুধ সেবন করলে আরও কাবু হয়ে পড়ি। এই রোগের কোনো ওষুধ আছে কি না, থাকলে তার নাম অথবা জেনারিক নাম জানালে উপকৃত হব। এর আগে ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, নামকরা ইউরোলজিস্টের চিকি ৎ সা নিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রয়োগসিদ্ধ বা সমাধান তাঁরা দিতে পারেননি। বারডেম যেহেতু প্রস্রাবের রোগসমূহের একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, কিন্তু এখানে শর্করাযুক্ত বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগেরই চিকি ৎ সা হয়। দুর্ভাগ্য যে অন্য পাঁচ-ছয়টি প্রস্রাবের রোগের সঙ্গে এই রোগটিকে চিকি ৎ সকেরা গুলিয়ে ফেলেন। বর্তমানে আমার অবস্থা খুবই খারাপ, কায়িক পরিশ্রম করতে পারি না এবং বাসায় শুয়ে-বসে দিন কাটাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চিকি ৎ সার ব্যাপারে দৌড়াদৌড়ি, নানা টেস্ট, এটা-সেটা একার পক্ষে কুলিয়ে উঠছি না। বিদেশে চিকি ৎ সার জন্য যাওয়া যায়, কিন্তু শারীরিক দুর্বলতার কারণে গুলশানে দূতাবাস পর্যন্ত যেতেই সাহস হয় না। আত্মীয়ের সংখ্যা নগণ্য হওয়ায় একা বিদেশে যাওয়াও বোকামি হবে।
আরিফ এ আলী
পল্লবী, ঢাকা।
 প্রোস্টেট বা প্রস্রাবের ইনফেকশন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে। আপনার এ রোগের চিকি ৎ সা সম্ভব, দেশে বা বিদেশে কোনো তারতম্য হবে না।
সমস্যা: আমার বয়স ৫০। বিবাহিত। ওজন ৫৬ কেজি। উচ্চতা পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি। আড়াই বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছি। ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের পরামর্শে খাদ্য গ্রহণ, ওষুধ সেবন ও হাঁটা চলছে। সকালে খালি পেটে খাই কমপ্রিড ৮০ এমজি একটি, পেনটনিকস ২০ এমজি একটি, রাতে খাওয়ার আগে একটি পেনটনিকস ২০ এমজি ও পরে একটি ভিটামিন ট্যাবলেট এ-জেড (A-Z)। প্রতি মাসে চারবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখি। ফলাফল খাওয়ার আগে সাত এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮.৫। মাঝেমধ্যে অধিক খাওয়াদাওয়া করলে ৯.৫ পর্যন্ত হয়। এ পর্যন্ত ভালোই ছিলাম। কিন্তু দুই মাস ধরে শরীর খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। হাঁটাহাঁটি করতে পারি না। হাঁটতে গেলেই মনে হয়, পড়ে যাব। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ ভেবে দ্রুত গ্লুকোজের মাত্রা মেপে দেখলে ৮-৮.২-এর মতো পাওয়া যায়। অতিরিক্ত দুর্বলতার কারণে রোজা রাখতে ভয় পাচ্ছি। রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে।
স্থানীয় ডাক্তার রিভোট্রিল (Rivotril) 0.5 একটি আমাকে সেবন করান। এর সঙ্গে সকাল ও রাতে নেক্সাস-২০ (Nexus 20), নিউরো-বি (Neuro-B) চালিয়ে যেতে বলেন এবং দুশ্চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে উপদেশ দেন। আমি কি কোনো জটিল রোগে ভুগছি? উল্লেখ্য, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া আমি একজন হতাশ মানুষ।
আবসার উদ্দিন
নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম।
 আপনার দুশ্চিন্তাজনিত মানসিক সমস্যা রয়েছে।চিকি ৎ সাবিজ্ঞানে আমরা একে ফাংশনাল ডিজ-অর্ডার বলি। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা খুবই কঠিন। তাই শিখতে হবে মনকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ জন্য যোগব্যায়াম উত্তম। যোগব্যায়াম শিখুন। মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকা আপনার জন্য জরুরি।
সমস্যা: আমার বয়স ৭৬ বছর। ১৯৯০ সাল থেকে ডায়াবেটিসে ভুগছি। বারডেমের সদস্য ছিলাম। মিক্সটার্ড ইনসুলিন নিচ্ছি। বর্তমান ইনসুলিনের মাত্রা সকালে ১২ ও বিকেলে ৮। এখন একটানা Mixtord না নিয়ে সমমানের ইনসুলিন comb. বা অন্য Brand-এর ইনসুলিন ব্যবহার করা যাবে কি না? ২. রোজার মাসে ইনসুলিন না নিয়ে কোনো মাত্রার কোনো ট্যাবলেট খাওয়া যাবে কি না? এবং একটানা কি ট্যাবলেট খাওয়া যাবে? এখন এ অবস্থায় ইনসুলিন বাদ দিয়ে ওষুধে ফেরা যায় কি না। ৩. ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখলেও কখনো সুগার বেড়ে যায় শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণে কমে। ব্যায়াম বা ওষুধে তেমন প্রভাব ফেলে না। এ অবস্থায় আমার পক্ষে কী করা উচিত?
মু. ফয়জর আলী মিয়া।
 আপনার ক্ষেত্রে চিরাচরিত থ্রিডি ব্যবস্থাপত্র ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, পরিমাণমতো, পরিমিত, সময়মতো খাওয়া, ওষুধ সেবন এবং ব্যায়াম সবই দরকার। ধর্মেমতে রোজা রেখে রক্ত দেওয়া এবংইনসুলিন নেওয়া যায়। রেইনাল ফেলইউর টাইপ-১ এবংটাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে ঘন ঘন ইনসুলিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
সমস্যা: ১৫ বছর তার সঙ্গে বসবাস। ছিলাম মেলিটাস-২, হয়েছি মেলিটাস-১। ৪০ বছরের সময় আক্রান্ত, ৪৭ বছরে ওপেন হার্ট। আমি যে একজন ডায়াবেটিস পরিবারের সন্তান। খুব সতর্ক থেকেছি, তবু এড়াতে পারিনি এ রোগ।
পেশায় প্রকৌশলী। প্রচুর ধূমপান করতাম, সঙ্গে ডায়াবেটিস। ফলাফল ‘আরটারিও ক্লেরোসিস’। বেঙ্গালুরুর চিকি ৎ সক দেবী শেঠি আমার বুকটা চিরেছিলেন। বলেছিলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, ধূমপান করবেন না এবং ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে রাখবেন, ১৪-১৫ বছর নিশ্চিন্তে চলতে পারবেন।’ আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা। ‘শৃঙ্খলাই জীবন’ বিষয়টি মেনে চলতে পারিনি। এখন আমাকে ইনসুলিন, ওষুধ সবই নিতে হচ্ছে। বয়স ৫৫ বছর। ওজন ৫৯ কেজি। উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি। ওষুধ ইনসুলিন (৭০/৩০, পেনপিল), সকালে ১৪, রাতে ছয় ইউনিট (তিন বছর ধরে)। ট্যাবলেট সকালে পিওডার ৩০, দুপুরে অগলি ১৫।
এ ছাড়া হার্টের জন্য ট্রাইটেস পাঁচ (রাতে) ডিলিপিড/নোফিয়েস্ট/ মনোকার্ড/পেনটাবেক্স/ইকোস্প্রিন ইত্যাদি চলছে (আট বছর ধরে)। বিপি-১৩০/৮০। খাদ্য—সকালে রুটি, দুপুরে ভাত, রাতে রুটি।
বর্তমান সমস্যা: ইদানীং খাওয়ার পরপরই জরুরি কাজে একটু দ্রুত হাঁটাচলা করলে বুকে ভারী বোধ হয়, সঙ্গে সঙ্গে মুখ দিয়ে ঢেঁকুর/গ্যাস ওঠে এবং পাঁচ-ছয় মিনিট পর বুকের অস্বস্তি ভাবটা কমে যায়। পেট খালি বা আধাখালি থাকলে এমন কোনো অনুভূতি হয় না।
রং-চায়ের (লেবু খাই প্রচুর) সঙ্গে দিনে ১৫-১৬টা Huxol বড়ি খাই, এটাতে কোনো সাইডএফেক্ট হয় কি না?
# দুপুরে ভাত খাওয়ার পর ব্লাড সুগার ১০-১১ পাওয়া যায়।
# বর্তমানে বেশি হাঁটাচলা করলে পায়ে ব্যথা হয়।
নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক।
 আপনার যে বিবরণ, তাতে বাইপাসের পরও হূদেরাগের সমস্যা হতে পারে। আপনি অতিসত্বর একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সমস্যা: সালাম নেবেন। আমার বয়স ৪৩। ওজন ৫৩ কেজি। বারডেমের সদস্য। সুগারের মাত্রা সাত থেকে ১০-এর মধ্যে থাকে খাওয়ার পর। প্রেসার ১২৫/৯০। পায়োগ্লিটাজোন হাইড্রোক্লোরাইড ১৫ মিলিগ্রাম প্রতিদিন খাই। ইদানীং লক্ষ করছি, প্রস্রাবের পর যেখানে প্রস্রাব জমা হয়, সেখানে ঘন ফেনা দেখা যায়। স্থানীয় এক চিকি ৎ সকের ভাষ্যমতে, প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বেরিয়ে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, ডায়াবেটিসের জন্য প্রোটিন প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায় কি না। প্রোটিন যাতে বেরিয়ে না যায়, তার জন্য করণীয় কী?
ফয়সাল আহমেদ
মির্জাপুর, টাঙ্গাইল।
 আপনি নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করান এবং বিশেষজ্ঞ চিকি ৎ সকের পরামর্শনিন।
সমস্যা: আমার মায়ের বয়স ৪৬ বছর। এ বছরের মার্চের শেষের দিকে তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। মায়ের পরিবারে কারও ডায়াবেটিস নেই। আমরা পরিবারের সবাই মাকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় থাকি। নিয়ম-শৃঙ্খলাও ঠিকমতো মানতে পারেন না তিনি। আমি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। যতটা যত্ন নেওয়ার, ঠিক সেভাবে পালন করতে পারছি না। আমার নিজেরই অনেক ভয় হয়, মা যদি আবার স্ট্রোক করে বসেন। কেউ তাঁকে বলছিলেন, কোনো একটা ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ফলটির নাম জানালে খুশি হব।
নুসরাত জামান মণি।
 আধুনিক চিকি ৎ সায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়। সে কারণে যত ভালোভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, আপনার মা তত ভালো থাকবেন। কিছু নিরাপদ প্ল্যান্ট আছে। যেমন—করলা, মেথি ইত্যাদি সেবনে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সমস্যা: সালাম নেবেন। আমার বয়স ৩৫। ওজন ৫৮ কেজি। ডায়াবেটিসের রোগী। প্রতিদিন খাওয়ার ২০ মিনিট আগে ডায়াটটল একটি ট্যাবলেট খাই। সুগারের মাত্রা খাওয়ার পর সাত থেকে ১০-এর মধ্যে ওঠানামা করে। প্রেশার ১৩০/৯০ থাকে। ঘাড়ের পেছনে সব সময় অল্প অল্প ব্যথা করে। ইদানীং কোমরেও ব্যথা করে। সারা দিন কোথায় কী করেছি, রাতে ঘুমাতে গেলে চোখ বন্ধ, কিন্তু মাথায় সারাক্ষণ সেটা ঘুরপাক খেতে খেতে সকাল হয়ে যায়। এতে ঘুম হলো কি না, টের পাই না। এ সমস্যাটা গত দুই-তিন বছর থেকে। এ সমস্যাটা আমাকে মানসিকভাবে কষ্ট দেয়। এতে আমার ডায়াবেটিসের মাত্রাও বেড়ে যায়।
দীন মোহাম্মদ
পশ্চিম রামপুরা, ঢাকা।
 ঘুম বিষয়ে বেশি সংবেদনশীল হওয়ার প্রয়োজন নেই। না ঘুমিয়ে কোনো লোক মারা গেছেন—এমনটা শোনা যায় না। যোগব্যায়াম করুন। পরিশ্রম আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে। আপনার শারীরিক সমস্যার চেয়ে মানসিক সমস্যা বেশি।
সমস্যা: সালাম নেবেন। আমার বয়স ৪২। ওজন ৫৪ কেজি। ডায়াবেটিসের রোগী। বারডেমের সদস্য। প্রতিদিন সেগলিট ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট খাই। সুগারের মাত্রা সাত থেকে ১০-এর মধ্যে ওঠানামা করে (খাওয়ার পর)। প্রেশার ১৩০/৯০। ঘাড়ের পেছনে অনেক সময় ব্যথা করে। প্রশ্ন হলো, উচ্চ রক্তচাপের জন্য কোনো ওষুধ খাব কি না। খেলে কোন ওষুধ ও কত মাত্রার?
সাজ্জাদ আহমেদ
নাগরপুর, টাঙ্গাইল।
 ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপ ওঠানামা করলে হূদেরাগের ঝুঁকি বাড়ে।একজন হূদেরাগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চিকি ৎ সা নিন এবংডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
দুনিয়াজুড়ে বাড়ছে ডায়াবেটিসও
স্বাস্থ্যকুশল: আজ (৬ সেপ্টেম্বর) অধ্যাপক ইব্রাহিমের মৃত্যুদিবস। বারডেমের ডায়াবেটিস সেবা দিবস। এ দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্বে ডায়াবেটিসের প্রকোপ এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাইছি।
এ কে আজাদ খান: গোটা পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটেছে এবং ঘটছে। তাই রোগবালাইয়ের ঘরানারও পরিবর্তন হচ্ছে। একসময় সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ এত বেশি ছিলযে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিম একজন ভিশনারি মানুষ ছিলেন। তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডায়াবেটিস এবং এ-জাতীয় অসংক্রামক ব্যাধি বাড়তেই থাকবে।সেখান থেকেই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে গোটা দুনিয়ায় অসংক্রামক ব্যাধির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।বাড়ছে ডায়াবেটিসও।ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয় না। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হূদেরাগসহ অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধি বাড়তে থাকে। এটা এখন উন্নত, অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশেরই সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই জীবনাচরণে পরিবর্তন এবংকঠোর শৃঙ্খলা মেনে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
স্বাস্থ্যকুশল: ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে করণীয় কী?
এ কে আজাদ খান: প্রথম কথা হচ্ছে, রোগটি সম্পর্কেজানতে হবে। আমরা সব সময় শৃঙ্খলার কথা বলি। তিনটি ডি-এর কথা বলি—ডায়েট, ড্রাগ ওডিসিপ্লিন। পরিমাণমতো, পরিমিত ও সময়মতো সুষম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত হাঁটাসহ কায়িক পরিশ্রম করা এবং সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারে। একইভাবে ডায়াবেটিস দেখা দিলে সেটিকেও শৃঙ্খলা মেনে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একজন ডায়াবেটিক রোগী নিয়ম মেনে খাবার খেলে, ব্যায়াম করলে এবং যথাযথভাবে ওষুধ সেবন করলে কোনো জটিলতা ছাড়াই দীর্ঘদিন সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। সে কারণেই ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অন্যান্য অসংক্রামক ব্যাধিও শরীরে বাসা বাঁধে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো,

ঘাড় ব্যথার অন্যতম প্রধান কারন

সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস – ঘাড় ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন
বাতের ব্যাথা বলতে আমার বুঝি হাত পা বা মেরুদন্ডের দীর্ঘকালীন ব্যাথাকে।“বাত” শব্দ টা নির্দিষ্ট কোন একটা রোগ নয় বরং এক প্রকার রোগ বলা যায় যার সংখ্যা শতাধিক। বাত সম্পর্কে প্রচলিত ধারনা নেতি বাচক। রোগিরা অনেকে প্রশ্ন করেন “ডাক্তার সাহেব রোগ টা কি বাত?” উত্তর যদি হ্যাঁ বলি তবে রোগীরা ধরে নেন বয়েস হয়েছে বাতের ব্যথা ত ধরবেই আর এটা সারবেও না।কথাটা নিতান্ত অমুলক ও নয়।অধিকাংশ বাত ই বয়স্কদের রোগ আর নিরাময়যোগ্য ও নয়।এটা সত্যি যে বয়স বাড়া এবং এর পরিবর্তন গুলো আমরা রোধ করতে পারি না তবে চিকিৎসা করে রোগীর উপসর্গ কমিয়ে কষ্টের লাঘব করা সম্ভব।
সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিস কিঃ-
ঘাড় ব্যাথার অন্যতম প্রধান কারন হল সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস।ব্যাপার টা একটু খুলে বলি। মেরুদন্ডের ক্ষয়(degenerative condition) রোগ হল স্পন্ডাইলোসিস আর মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের ক্ষয়ে যাওয়া হল সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস।আমাদের মেরুদন্ড হল হাড়, মাংশপেশী, গিঠ ইত্যাদি নিয়ে। কশেরুকা বা ভারটিব্রা গূলো একটার উপর আরেকটা ইন্টারভারটিব্রাল ডিস্ক এবং অনান্য গিঠ দিয়ে জুড়ে তৈরি হল মেরুদন্ড। দুটো হাড়ের মাঝখানের ডিস্ক, অনান্য গিঠ, লিগামেন্ট সব কিছুই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্ষয় হতে থাকে।মেরুদন্ডের হাড় ঘিরে রাখে একটা নালি বা ক্যানাল ,( ভারটিব্রাল ক্যানাল) যার ভিতর দিয়ে মস্তিস্ক থেকে নেমে আসে স্পাইনাল কর্ড এবং তা থেকে গাছের শিকড়ের মত নার্ভ গূলো বেরিয়ে এসে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে মেরুদন্ডের হাড়ে পরিবর্তন হতে থাকে। ভারটিব্রা বা কশেরুকার মধ্যকার ডিস্কে পানি কমে গিয়ে ভঙ্গুর হয়,উচ্চতা কমে চিপ্টে যায় এবং তা অনেক সময় পিছনে সরে গিয়ে নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করে যাকে বলে ডিস্ক প্রোলাপ্স।এই ডিস্ক এর উচ্চতা কমার সাথে সাথে তৈরী হয় ছোটো ছোটো হাড়ের টুকরো বা অস্টিওফাইট যা।এই টুকরো গুলোও নার্ভের উপর চাপ দিয়ে ব্যাথার সৃস্টি করতে পারে।
সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারনঃ-
বয়সঃ বৃদ্ধ বয়সের রোগ এটি।স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন শুরু হয় ৪০ বৎসর বয়সের পর থেকে কোনো কোণো ক্ষেত্রে আগে থেকেও।
আনুপাতিক হার পুরুষ বা মহিলা রোগীদের মধ্যে প্রায় সমান সমান।
পেশাঃ- ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে কাজ করতে হয় এমন সব পেশাতে রোগটি বেশী দেখা যায়।যেমন চেয়ার টেবিলে বসে কাজ, কমপিউটারে কাজ, টাইপ রাইটার ইত্যাদি।ঘাড়ের ঝাকুনি হয় এমন পেশা যেমন নর্তকী, সাইকেলে চলাচল করতে হয় এমন পেশা ইত্যাদি।।
ঘাড়ে আঘাত এর ইতিহাস থাকে অনেক ক্ষেত্রে।
উপসর্গঃ=
প্রধান উপসর্গ হল ঘাড়ে ব্যাথা আর চল্লিশোর্ধ বয়সে ঘাড়ে ব্যাথার প্রধান কারন ও এটি।
ঘাড়ের ব্যাথা অনেক সময় কাঁধ থেকে উপরের পিঠে,বুকে , মাথার পিছনে বা বাহু হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।ঘাড়ের থেকে হাতে নেমে আসা নার্ভের উপর চাপ পড়লে সমস্ত পুরো হাতেই ব্যাথা হতে পারে।
সার্ভিক্যাল স্পন্ডোলাইসিসের সবচে মারাত্মক দিক হল যখন স্পাইনাল কর্ডের উপর চাপ পড়ে।এটা থেকে চার হাত পায়ে দুর্বলতা, হাটতে অসুবিধা,পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া,ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে ।এটি হল সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোটিক মাইলোপ্যাথি(Crevical spondylotic myelopathy)।
ঘাড় নাড়াতে গেলে ব্যাথা লাগে।একিউট ক্ষেত্রে ডাইনে, বায়ে ঘাড় ঘোরান মুস্কিল হয়।ঘাড়ে জ্যাম মেরে ধরে থাকে।
ব্যাথার সাথে হতে পারে হাতে, বাহুতে ঝিন ঝি্ন, সির সির্, অবশ ভাব, সূচ ফোটানোর অনুভুতি সাথে হাত দিয়ে কাজ করতে অসুবিধা।
লক্ষনঃ-
ঘাড় উপরের পিঠ এবং বাহুতে চাপ দিলে ব্যাথা অনূভুত হয়। ঘাড়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া ব্যাহত হয়।
ঘাড় ব্যাথা কখন দুঃশ্চিন্তার কারনঃ-
ঘাড়ে ব্যথার সাথে নীচের লক্ষন থাকলে-
• বিনা কারনে হঠাৎ পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে বা নিয়ন্ত্রন করতে অসুবিধা হলে।
• হাত বা পায়ে অস্বাভাবিক দুর্বলতা
• জ্বর থাকলে
• ওজন কমতে থাকলে
• ৬ সপ্তাহের বেশী ব্যাথা থাকলে
• অনান্য নার্ভের সমস্যা যেমন, কথা বলতে অসুবিধা, মাথা ঘোরা, চোখে দেখতে অসুবিধা।
• রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হলে,
• যে সমস্ত প্রশ্ন রোগীর মনে স্বাভাবিকভাবেই জাগেঃ-
• কি কারনে ব্যাথা হচ্ছে?
• সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলসিস ছাড়া অন্য কোন কারনে উপসর্গ গুলো হতে পারে কিনা
• কি কি পরীক্ষা করান উচিত।
• চিকিৎসা কি?
• অপারেশানের দরকার আছে কিনা?থাকলে কি কেন বা কখন।
• কিভাবে ঘাড়ের যত্ন নেওয়া যেতে পারে।
• ঘাড়ের বিশ্রাম বা কাজ করা বন্ধ রাখার দরকার আছে কিনা?
• চিকিতসা করলে ভাল হবে তো ? হলে পুরোপুরি কিনা?
• সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিস থেকে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
• বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর দরকার আছে কিনা?
পরীক্ষাঃ-
সার্ভিকাল স্পনডাইলোসিস ডায়াগনোসিসের জন্য ঘাড়ের এক্স-রে প্রধান পরীক্ষা।৩০ উর্ধ বয়সে শতকরা ৫ থেকে ১৫ ভাগ এবং ৭০ উর্ধ বয়সের ৭০ থেকে ১০০% ভাগ লোকের এক্স-রে তে স্পন্ডোলাইসিসের লক্ষন ধরা পড়ে । এক্স রে’র সাথে রোগীর লক্ষনের মিল কম।এক্স রে তে স্পন্ডাইলোসিসের পরিবর্তন ধরা পড়লেও মাত্র ৫% লোক ঘাড় ব্যাথা তে ভোগেন অর্থাৎ অধিকাংশ লোকেরই ব্যাথা হয় না।অনেকের দেখা যায় এক্সরে তে ক্ষয় অনেক কিন্তু সেই তুলনায় ব্যথা কম আবার সামান্য ক্ষয়ে প্রচুর ব্যাথা হয়ে থাকে অনেকের।
অনান্য পরীক্ষাঃ- রক্তের গ্লুকোজ, প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা।
বিশেষ পরীক্ষাঃ-ঘাড়ের এম আর আই(MRI), ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি( Electromyography nerve conduction study)।
চিকিৎসাঃ-
১) ঔষধঃ- ব্যাথার ঔষধ(Analgesics), মাংশপেশী শিথিল করার ঔষধ(Muscle relaxants), দুশ্চিন্তা কমানোর ঔষধ(Anxiolytics)।
২)ফিজিওথেরাপীঃ- ঘাড়ে টানা বা সার্ভিক্যাল ট্রাকশান(Cervical Traction), শর্ট ওয়েভ ডায়াথার্মি(Short Wave Diathermy), ম্যাসাজ(Massage), ট্রান্সকিঊটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক নার্ভ স্টিমুলেশান(Transcutaneous electric nerve stimulation, TENS)।
সার্ভিক্যাল কলার(Cervical Collar)।
৩)ঘাড়ের ব্যায়ামঃ
৪) উপদেশঃ-
 শক্ত সমান বিছানায় এক বালিশে চিত হয়ে ঘুমাবেন।ঘাড় যাতে বালিশ দিয়ে সাপোর্ট দেয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজন মনে করলে বালিশ নিচে টেনে নামিয়ে নেবেন বা কম উচ্চতার বালিশ ব্যাবহার করবেন।
 ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে বেশিক্ষন কাজ করবেন না
 কাজের জায়গায় চেয়ার টেবিল এমন ভাবে রাখবেন যাতে ঘাড় সামনে না ঝুকিয়ে কাজ করতে পারেন।
 ঘাড়ে গরম সেক দিতে পারেন,
 মাঝে মাঝে ঘাড়ের ব্যায়াম করে নেবেন।
অপারেশানঃ- শতকরা প্রায় একশতভাগ রোগী অপারেশান ছাড়া ভাল থাকেন। অপারেশানের দরকার পড়ে কচিৎ কদাচিত।

Saturday, September 17, 2011

কিডনি রোগীরা যা খাবেন না

পানি খেতে হবে পরিমিত। প্রতিদিনের পস্রাবের পরিমানের ওপর নির্ভর করবে কতটুকু পানি রোগী খেতে পারবেন।
০ কিডনি রোগী মাছ, মাংস, দুধ, ডিম প্রভৃতি প্রাণীজ আমিষ সীমিত পরিমাণে খাবেন। রোগীর রক্তের ক্রিয়েটিনিন, শরীরের ওজন, ডায়ালাইসিস করেন কিনা, করলে সপ্তাহে কয়টা করেন তার ওপর নির্ভর করবে প্রতিদিন কত গ্রাম প্রোটিন খাবেন তার পরিমাণ।
০ উদ্ভিজ প্রোটিন বা দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন যেমন-ডাল, মটরশুটি, সিমেরবীচি যে কোন বীচি ডায়েট চার্টে থাকবে না।
০ যে সমস্ত- সবজি খাবেননা: ফুলকপি, বাধাকপি, গাজর, ঢেঁড়শ, শিম, বরবর্টি, কাঠালের বীচি, শীমের বীচি, মিষ্টি কুমড়ার বীচি, কচু, মূলা এবং পালং, পুঁইশাক ইত্যাদি।
০ ফলের ক্ষেত্রেও আছে নানান রকম নিষেধাজ্ঞা। প্রায় সব ফলেই সোডিয়াম পটাশিয়ামের আধিক্য আছে বলে কিডনি রোগীদের জন্য ফল খাওয়া একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। বিশেষ করে আঙ্গুর, কলা, ডাবের পানি। অল্প পরিমাণে আপেল এবং পেয়ারা তুলনামূলক নিরাপদ।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক,

শিশুর চোখের সমস্যা

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। ভবিষ্যত এই প্রজন্মের সুস্থতার উপর দেশ ও দশের এগিয়ে যাওয়া অনেকাংশে নির্ভরশীল। শারীরিক ও মানষিক সুস্থতার পাশাপাশি চোখের সুস্থতাও সমান গুরুত্ব বহন করে।
গুরুত্বঃ দৃষ্টিহীন শিশুকে অন্যের উপর নির্ভর করে সারাজীবন কাটাতে হয়। এতে দেশ দুই জন মানুষের পূর্ণাঙ্গ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও পর নির্ভরশীলতার কারণে শিশু মানষিকভাবেও বির্পযস্ত হয়ে পড়ে।
দৃষ্টিস্বল্পতার কারণ: জন্মগত ছানি পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা কর্ণিয়ার ঘা চোখে আঘাত চোখের ক্যান্সার (রেটিনোব্লাস্টমা) চোখের প্রদাহ (ইউভাইটিস) শিশুর চোখের অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের চুলকানী বা অ্যালার্জী এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া অন্যতম।
ছানিঃ জন্মের পর পর বা কিছুদিন পর এক বা উভয় চোখে সাদা আস্তর দেখা যাওয়া ছানিরোগের লক্ষণ। ডেলিভারীর সময় চোখে আঘাতের কারণে, গর্ভকালীন মায়ের রুবেলা জ্বর, বিভিন্ন ওষুধ সেবন এবং বংশগত কারণে শিশুর চোখের ছানি পড়তে পারে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশনের মাধ্যমে ছানি অপসারণ করে পরবর্তীতে সময়মত কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। অপারেশনের বিলম্বের কারণে চিরতরে শিশু দৃষ্টি হারাতে পারে।
পাওয়ার জনিত দৃষ্টিস্বল্পতা: ঘনঘন চোখ নড়াচড়া করা, চোখ বেঁকে যাওয়া, বস্তু অনুসরণ না করতে পারা, ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, কাছে গিয়ে টেলিভিশন দেখা, মাথাব্যাথা করা ইত্যাদি দৃষ্টিস্বল্পতা লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চশমা ব্যবহারের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
কর্ণিয়ার ঘা: অপুষ্টি জনিত কারণে ভিটামিন এর অভাবে দুই চোখে ঘা হতে পারে। এছাড়াও ডেলিভারীর সময়ে চোখে আঘাতের কারণে এবং জন্মের পরে যে কোন সময়ে জীবানু সংক্রমনের কারণে চোখে ঘা হতে পারে। চোখে ব্যথা, আলোতে চোখ খুলতে না পারা, চোখ লাল হওয়া, কালোমনিতে সাদা দাগ পড়া এ রোগের লক্ষণ। ডাক্তারের পরামর্শে চোখের জীবানু পরীক্ষা করে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব।
চোখের ক্যান্সারঃ বিড়ালের চোখের মত চোখ জ্বল জ্বল করা, চোখ লাল হওয়া এই রোগের লক্ষণ, চোখে ব্যথা হওয়া, চোখ বেঁকে যাওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া ইত্যাদি চোখের ক্যান্সার বা রেটিনোব্লাসটোয়ার লক্ষণ। এই সব লক্ষণ দেখামাত্র দেরী না করে চক্ষু বিশেজ্ঞের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। চোখের ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়লে জীবন রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
চোখের এলার্জী :ঘনঘন চোখে হাত দেয়া, চোখ কচলানো, চোখ লাল হওয়া, শুষ্ক মৌসুমে এই রোগ রোগ বেশী দেখা যায়। বছরে ২/৩ বার চোখে অযালার্জী হতে পারে। ধুলাবালি, ধুঁয়া, বিভিন্ন খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থে শরীরে এবং চোখে অযালার্জী হতে পারে।
চোখ দিয়ে পানি পড়া: জন্মগতভাবে চোখের পানি সরে যাবার নেত্রনালী বন্ধ থাকলে চোখের পানি উপচে পড়ে। এতে চিন্তিত হবার কিছু নাই। ১-২ বছরের মধ্যে বন্ধনালী আপনাতেই খুলে গেলে চোখের পানি পড়া অনেকাংশে কমে যায়। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চোখের কোণায় মালিশ করা এবং চোখে ড্রপ ব্যবহারে এই রোগের চিকিত্সা সম্ভব। পরিশেষে বলতে হয়, শিশুরা অনেক কিছু বলে বোঝাতে পারেনা। ফলে তাদের সমস্যাগুলো অপ্রকাশ্যই থেকে যায়। এ সকল সমস্যা শেষ পর্যন্ত শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং শিশুর দৃষ্টি অধিকার রক্ষায় আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
ডাঃ শামস মোহাম্মদ নোমান
চক্ষু বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

কমলার গুণ

কমলা জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য একটি ফল। সহজলভ্যতার কারণে এটি সারা বছরই পাওয়া যায় এবং দামেও সস্তা। তাই এটি আর এখন বিদেশী কোন ফল নয়। জনপ্রিয় এই ফলটির পুষ্টিগুণ কি আমরা সবাই কি জানি। এবারে কমলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
০ দৈনিক আমাদের যতটুকু ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন তার প্রায় সবটাই ১টি কমলা থেকে সরবরাহ হতে পারে।
০ কমলাতে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেল ড্যামেজ করে ফলে ত্বকে সজীবতা বজায় থাকে। এতে উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
০ কমলাতে উপস্থিত বিটা ক্যারোটিন সেল ড্যামেজ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
০ এতে উপস্থিত ক্যালসিয়াম, যা দাঁত ও হাঁড়ের গঠনে সাহায্য করে।
০ এতে ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
০ এতে উপস্থিত পটাশিয়াম ইকেট্রোলাইট ব্যালেন্স বজায় রাখে এবং কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ভালো রাখতে সহায়তা করে।
০ গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, কমলাতে উপস্থিত লিমিণয়েড, মুখ,ত্বক, ফুসফুস, পাকস্থলী কোমল ও স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে।
০ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। ০ এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ওজন কমাতেও সহায়তা করে।
০ ১০০ গ্রাম কমলাতে আছে: ভিটামিনি বি-০.৮ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি-৪৯ মি:গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৩৩ মি:গ্রাম, পটাসিয়াম-৩০০ মি:গ্রাম, ফসফরাস-২৩ মি:গ্রাম।
তায়েবা সুলতানা
নিউট্রিশনিস্ট এন্ড ওয়েটি ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট ডার্মালেজার সেন্টার
৫৭/ই, পান্থপথ, ঢাকা-১২০৫
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক,

আপেল কিডনি ক্যান্সার রোধ করে

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে একটা প্রবাদ বেশ প্রচলিত। ‘প্রতিদিন একটি করে আপেল একজন ডাক্তারকে দূরে সরিয়ে দেয়’। প্রকৃত অবস্থাটা তা-ই। কারণ আপেল কিডনির ক্যান্সার রোধ করে। সুইডেনের মানুষদের মধ্যে কিডনির ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার হার সবচেয়ে বেশি। তাই সুইডেনের মানুষদের ওপর আপেলের এই গুণটি নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়েছিল। গবেষকগণ কয়েকজনকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খাইয়ে দেখেন যে, যারা প্রতিদিন একটি করে আপেল খেয়েছে তাদের কিডনির ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় অনেক কমে গেছে। তবে কমলা, গাঢ় সবুজ শাকসবজি, গাজর একই উপকারিতা পাওয়া যায় ।
ডা:সাদিয়া তাবাস্সুম
শুক্র, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১, ১ আশ্বিন ১৪১৮
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

এটি একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখা

প্রিয় পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই শিরোনামটি দেখে ভাববেন, প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ পাতা থাকা সত্ত্বেও এই পাতায় কেন স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখা? যে বিষয়টি আলোকপাত করছি তা হলো, ‘হূদেরাগ, এর ঝুঁকি এবং প্রতিকার’। অনেকেই হয়তো এই কথাগুলো জানেন, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে হূদেরাগের অনেক বড় বড় উদ্ভাবনী তথ্য, চিকি ৎ সা ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান অর্জন করাটা আজ হাতের মুঠোয়; কিন্তু বেসিক যে কথাগুলো জানা দরকার, সে জন্যই চিকি ৎ সক হিসেবে আমার দায়বদ্ধতা থেকে এই লেখাটির ভাবনা।
আমরা জানি হূদ্যন্ত্র সম্পর্কে—‘হার্ট’ বা হূ ৎ পিণ্ড দেহের সবচেয়ে শক্তিশালী একটি মাংসপিণ্ড, যা প্রতি মিনিটে চার থেকে পাঁচ লিটার রক্ত পাম্প করে সারা শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা মিটিয়ে চলছে আমৃত্যু। বলা যেতে পারে, হার্ট হচ্ছে আমাদের দেহের জন্য ‘মহান পুষ্টিদাতা’। তাই এর যত্ন নেওয়া অতীব জরুরি। বিশ্বব্যাপী এক নম্বর ঝুঁকিপূর্ণ এই হূদেরাগে বছরে প্রায় ১৭ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। উদ্বেগজনক হলো, তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই রোগ দ্রুত বাড়ছে এবং বাংলাদেশের জনগণ এই ঝুঁকির শীর্ষে, যা চীনের জনগণের ছয় গুণ এবং জাপানিদের প্রায় ২০ গুণ। সুতরাং এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতার বিষয়টি সহজেই অনুমেয়; ‘সাডেন ডেথ’-এর অন্যতম প্রধান কারণ হূদেরাগ, বিশেষ করে ‘হার্ট অ্যাটাক’। কারা এই রোগের বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন? যাঁদের বয়স চল্লিশোর্ধ্ব, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে। অতিরিক্ত স্থূলতা, ওই রোগগুলোর পারিবারিক ইতিহাস এবং যাঁদের ধূমপানসহ অন্যান্য বদ-অভ্যাস রয়েছে, তবে কিছু ঝুঁকি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, যেমন—পুরুষের বয়স ৪৫ বছর কিংবা বেশি এবং নারীদের বয়স ৫৫ বছর কিংবা বেশি। এ ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের চেয়ে সৌভাগ্যবতী। পুরুষের হূদেরাগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আবার কিছু ঝুঁকি আছে, যা আমরা চাইলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি; যেমন—হাই কোলেস্টেরল! তার আগে একটু বলে নেওয়া প্রয়োজন এই যে কোলেস্টেরল নিয়ে এত হইচই! কোলেস্টেরলকে এত অপবাদ দিচ্ছি আমরা, এটা কি বিজ্ঞানসম্মত? উত্তর, না। কারণ, আমাদের শরীরের জন্য কোলেস্টেরল অত্যাবশ্যকীয়, যা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে প্রবাহিত হয়। তবে এর মাত্রা যদি বেশি হয়, তা অবশ্যই ক্ষতিকর কারণ; তা রক্তনালির ভেতরে পলি জমায় এবং করোনারি ধমনির ভেতরে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং জন্ম হয় হার্ট অ্যাটাক নামের একটি আতঙ্কিত রোগের, যার পরিণাম নিশ্চিত মৃত্যু; যদি একে সঠিক সময়ে চিকি ৎ সা করা না যায়। বলা হয়ে থাকে, বুকে ব্যথা হলে রোগীকে সরাসরি ‘ক্যাথল্যাবে’ নিতে হবে এবং এনজিওগ্রাম করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একজন বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টের মাধ্যমে চিকি ৎ সা সম্পন্ন করাতে হবে। কিন্তু ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো আর সেই সুযোগ নেই।
তাই প্রয়োজন অধিক সচেতনতা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং বছরে কমপক্ষে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। তবে ঢাকায়ও যে অঘটন ঘটছে না, তা কিন্তু নয়! একটা ঘটনা বলছি, চার-পাঁচ দিন আগে, রাত দুইটা বাজে। ঝড়ের বেগে একটি অ্যাম্বুলেন্স ঢুকল। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনেরা উদ্বিগ্ন ও উ ৎ কণ্ঠায়! ট্রলিতে ওঠানোর সময় রোগীর গায়ে আমার হাতের স্পর্শেই শীতল নিথর দেহের অনুভূতি পেলাম। বুঝলাম, সব শেষ হয়ে গেছে! তবু জরুরি বিভাগে সব ভাইটাল সাইন পরীক্ষা করে জানালাম যে চল্লিশোর্ধ্ব এই ভদ্রলোক অনেকক্ষণ আগেই মারা গেছেন। কী হয়েছিল—জানতে চাইলে স্বজনেরা বললেন, সন্ধ্যা থেকে বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন। তারপর নিজেই দোকানে গিয়ে রেনিটিডিন ওষুধ কিনে খেয়েছিলেন। পরে তাঁর নিজের রুমে কখন যে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে গেছেন, কেউ জানে না! জিজ্ঞেস করলাম, তাঁর কি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হার্টের কোনো অসুখ ছিল? উত্তরে জানা গেল, না, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। কিন্তু চিকি ৎ সক হিসেবে বলব, তিনি অবশ্যই সুস্থ ছিলেন না। তাঁর হার্টের রক্তনালিতে হয়তো অজানা ব্লক ছিল, যার কোনো উপসর্গ এত দিন অনুভূত হয়নি বলে তিনি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাননি। আমি যে বিষয়টি বোঝাতে চাইছি তা হলো, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, নিয়মিত চিকি ৎ সকের কাছে যাওয়া এবং হেলথ চেকআপ করা আর না-করার পার্থক্য বোঝানোর জন্য বোধ করি উপরিউক্ত ঘটনাটি একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত! কীভাবে ভালো থাকবেন?
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় প্রচুর রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল থাকতে হবে। অলিভ অয়েল, বাদামতেল, সয়াবিন তেল, চীনাবাদাম, সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশ মাছ শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কারণ, এতে ‘ওমেগা ত্রি ফ্যাটি এসিড’ নামের একধরনের ভালো চর্বি থাকে।
শরীরটাকে সুস্থ রাখতে হলে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট বা আড়াই ঘণ্টা কায়িক পরিশ্রম করতে হবে এবং তা ক্রমাগত বাড়াতে হবে। শিশুদের ভিডিও গেম, কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে না দিয়ে বাইরে খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে, অন্যথায় মোটা শিশু বা ‘চাইল্ড হুড ওবেসিটি’ এক ভয়াবহ ব্যাধিতে রূপ নেবে।
এবার জানুন কী কী খাবেন না—কাঁচা লবণ, গরু ও খাসির মাংস (রেড মিট), ডিমের কুসুম, গলদা চিংড়ি, ঘি, মাখন, পনির, মালাই, আইসক্রিম, ফুলক্রিম, বেকারি বিস্কুট, কেক পেস্ট্রি যত কম খাওয়া যায় ততই মঙ্গল। কারণ, এগুলো মুখরোচক খাবার ছাড়া কিছুই নয়।
যেসব ধূমপায়ী হূদেরাগ, ফুসফুসে ক্যানসার হবে জেনেও এখনো এই অভ্যাসটি ছাড়েননি, তাঁদের জন্য একটা দুঃসংবাদ—সেটা হলো, সিগারেট থেকে ‘পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ’ বা ‘বার্জার্স ডিজিজ’ নামে পায়ের এক অসুখ হয়, যার চিকি ৎ সা ওই পা কেটে ফেলে দেওয়া! সুতরাং ধূমপান ছাড়ার জন্য আপনার ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।
যাঁদের ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অসুখ রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই মনোবল অটুট রেখে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে এবং তা যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেকে যখন-তখন প্রেশারের ওষুধ বন্ধ করে দেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, এসব ক্ষেত্রে স্ট্রোকের মতো দুর্ঘটনা ঘটে। তাই আপনার চিকি ৎ সকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বন্ধ করবেন না। পরিশেষে বলছি, সামান্য কটি অর্থের জন্য নিজের শরীরকে ঝুঁকিতে রাখবেন না। যেকোনো উপসর্গকে গুরুত্ব দিন, আপনার চিকি ৎ সকের পরামর্শ নিন, কমপক্ষে বছরে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং মুক্ত থাকুন আকস্মিক মৃত্যুর হাত থেকে। কারণ, আপনি একা নন, আপনার দিকে তাকিয়ে আছে পরিবার-পরিজন। তাই হাসিমুখ চাই সবার।
আশীষ কুমার চক্রবর্তী
পরিচালক,
আয়েশা মেমোরিয়াল স্পেশালাইজ্ড হসপিটাল,
ঢাকা।
সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো

শিশুর কানের সমস্যা লাঘবে

children-ears-problem
এক. বহিঃকর্ণের প্রদাহ
নদীমাতৃক বাংলাদেশ। এ দেশের খাল-বিল, পুকুর-নদী পানিতে টইটম্বুর হয়ে থাকে বছরের অধিকাংশ সময়। আর তাতে কলাগাছের ভেলা বানিয়ে হোক বা এমনিতে ঘোর বর্ষণের সঙ্গে তাল রেখে ঝাঁপ দেবে দামাল শৈশব। এতক্ষণ ধরে পানিতে থাকলে কানে কিছু সমস্যা তো হতেই পারে।
ওটাইটিস এক্সটারনাকে বলা হয় সাঁতারুদের কান। বাইরের কর্ণের ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙাশ জীবাণুঘটিত সংক্রমণ। কর্ণপথের বাইরের অংশ বাইরের ভুবনের শব্দ নাক-কানের ড্রামে পৌঁছে দেয়। এর ত্বক ছিঁড়ে শুকনো হয়ে একজিমাও হতে পারে। আবার মধ্যকর্ণ প্রদাহ হলে সৃষ্ট পুঁজ কর্ণ পর্দা ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে এসে এখানে ঘা তৈরি করতে পারে।
রোগলক্ষণাদি: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের তেমন জ্বর থাকে না। তবে কর্ণের বাইরের অংশ বেশ ফোলা, লালচে ও তপ্তভাব থাকে। শিশু বেশ অস্বস্তিতে থাকে। প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসা: চিকিৎসক অসুখের ধরন অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দেবেন। সাধারণ মাত্রায় কানের ড্রপস ও ব্যথানিরোধক প্যারাসিটামলে কাজ হয়। কখনো বা মুখে খাবার অ্যান্টিবায়োটিকস লাগে।
প্রতিরোধ
 স্নানের পর পর বাচ্চার মাথার পানি সাততাড়াতাড়ি শুকনো তোয়ালে দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া এবং তারও আগে মাথার পানি যেন কানের ভেতরে না ঢুকে পাশ দিয়ে ঝরে যায়, সে ব্যবস্থা অবলম্বন করা।
 কান থেকে ১২ ইঞ্চি দূরে রেখে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করে কান ও পাশের চুল শুকিয়ে নিতে হবে।
 কখনো যেন কানে কোনো বস্তু ঢোকানো না হয়। কখনো এ কাজে কটন বাড যেন ব্যবহূত করা না হয়।
দুই. শিশু কানের মোম
ইয়ার ওয়াক্স। বলা হয় কানের খৈল। মধ্যকর্ণের বাইরে এটি তৈরি হয়। মেডিকেল নাম সেরুমেন। অনেক দরকারি কাজ সম্পাদন করে। কানের ড্রাম ও কর্ণনালি শুকনো রাখতে, তাতে যেন জীবাণু প্রবেশ অবাধ না হয়, ময়লা, ধুলাবালু ভেতরে ঢুকে কর্ণপর্দায় যেন আঘাত না করে, তাই এ ব্যবস্থা। গোসলের সময় কার্য সমাধা শেষে এই কানের খৈল আপনাআপনি ঝরে বেরিয়ে যায়। এটা বের করে আনার জন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় না। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর স্নান এর জন্য যথেষ্ট।
 কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি মোম ভেতরে আটকে গেলে শিশু কানে ব্যথা, কানে শোনার সমস্যা—এসব নিয়ে আসতে পারে। এ অবস্থায় তার চিকিৎসা করাতে হবে। কিউরিটি ও অটোসকোপসংবলিত ব্যবস্থাপনায় এর সহজ সুরাহা হয়ে যায় কয়েক মিনিটে।
 তবে আপনার শিশু যদি কানে ব্যথার কথা জানায় এবং কানের মোম বাইরে থেকে দেখা যায়, তবে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে আলতোভাবে তা আপনি বের করে নিয়ে আসতে পারেন। কখনো কটন সোয়াব, আঙুল বা কিছু ঢুকিয়ে তা বের করে আনার চেষ্টা চালাবেন না। এতে করে কানের পর্দা ছিঁড়ে যেতে পারে। শিশু বধির হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হয়। তা ছাড়া কানের খৈল ভেতরে ঢুকে গিয়ে ইনফেকশন তৈরি করে। অল্প বয়সী শিশু যখন কানে সব সময় হাত রাখে, তখন তা কানের ব্যথা বা এ রকম কোনো সমস্যা নির্দেশ করে। মা-বাবা অনেক সময় এ থেকে লাঘবের জন্য বাইরের প্রচলিত ব্যবস্থা মেনে নেন। কিন্তু সোজাসাপ্টা পরামর্শ হলো, এসব ব্যবস্থা শিশুর কানের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসক ছাড়া শিশুর কানের জন্য যাতে অন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো,

ঘাড়ে ও হাতে ব্যথা

‘দোস্ত, আমাকে বাঁচাও’ বলে হাত উঁচু করে, ঘাড় কাত করে দশাশই চেহারার মিরাজ ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকে। তার এ অবস্থা দেখে ডাক্তার প্রথমে বিচলিত বোধ করলেও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শেষে চিকিৎসা শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টা পর রোগী একটু স্বস্তি অনুভব করে। পরের দিন এমআরআই পরীক্ষা শেষে ঠিক হয়, আপাতত অপারেশন লাগছে না। বন্ধু মিরাজের স্ত্রী চেম্বারে এসে ছলছল নয়নে জানতে চায়, মিরাজের কী হয়েছে? উত্তরে তাকে ডাক্তার বুঝিয়ে বলেন, মাথার খুলি থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত স্পাইনাল কলাম বা মেরুদণ্ড ৩২টি ভার্টিব্রার সমন্বয়ে গঠিত, এর মধ্যে ঘাড়ের অংশ সাতটি স্রাভাইকাল ভার্টিব্রা। মেরুদণ্ডের ভেতর এক দীর্ঘ নলাকার জায়গা একে স্পাইনাল ক্যানাল বলে।
এই ক্যানালের ভেতরে স্পাইনালকর্ড থাকে, যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও শরীরের অন্যান্য অংশের ভেতরে তথ্যের আদান-প্রদান হয়ে থাকে। মেরুদণ্ডের ভার্টিব্রাগুলোর মাঝে ক্যারম বোর্ডের ঘুঁটির আকারের নরম ডিস্ক থাকে, যার জন্য মানুষ সামনে-পেছনে-পাশে বাঁকা হতে পারে। চলাফেরার সময় ডিস্ক স্প্রিংয়ের মতো কাজ করে। প্রতি জোড়া ভার্টিব্রার মধ্যে স্পাইনাল ফোরামেন নামের এক জোড়া ছিদ্র থাকে, এ পথ দিয়ে প্রতি লেভেলে এক জোড়া করে স্পাইনাল নার্ভ বাইরে বেরিয়ে আসে। হাত পায়ের অনুভূতি (ঠান্ডা-গরম, ব্যথা), নাড়াচাড়া—সবকিছু স্পাইনাল কর্ড ও নার্ভের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এক কথায় এটা শরীরের ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে। যদি কোনোভাবে এই নার্ভ কর্ডে চাপ পড়ে, তাহলে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে। ভাই, এটা কি ক্যানসার, ও বাঁচবে তো? ডাক্তারের উত্তর, ভাবি, একদম নিশ্চিন্ত থাকেন, এটা কোনো ক্যানসার নয়, তবে ক্যানসার রোগীদের এমন ব্যথা হতে পারে। ক্যানসার থেকে হাড় বসে গেলে এমআরআইতে দেখা যেত। আমি আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে সে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।
একটা ব্যাপার ভাই আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না! কী ব্যাপার, বলুন? আপনি বলছেন ঘাড়ে সমস্যা, কিন্তু ওর ব্যথা তো হাতে। স্মিত হেসে ডাক্তার বলেন, আচ্ছা একটা কথা চিন্তা করুন, বিদ্যুৎ তৈরি হলো ঘোড়াশালে, বাতি জ্বলছে এখানে। কিন্তু মাঝপথে তার ছিঁড়ে গেলে কি হবে? সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর আসে, কেন এ রুমের বাতি নিভে যাবে। এই তো ঠিক বলেছেন, ব্রেন মূল কেন্দ্র ঘাড় হয়ে হাতের ভেতরে আসা নার্ভ বিদু্যুতের লাইন, তাই লাইনে চাপ পড়লে হাত-পায়ের ভেতরে লক্ষণ প্রকাশ পায়। শুরুতে ঘাড়ে কিছু ব্যথা থাকে, ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ করলে সে ব্যথা শিরশির করে হাতের আঙুল বরাবর নামে, কখনো অবশ বা ঠান্ডা-গরম বা পিঁপড়া হাঁটার মতো অনুভূতি হতে পারে। এরপর আসে তীব্র ব্যথা, তখনো চিকিৎসা না হলে হাত দুর্বল হয়ে যাওয়া, এমনকি মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
এমন কি কোনো নিয়ম আছে, যাতে এ রোগ না হয়? অবশ্যই কিছু নিয়ম আছে, যেমন ভারী ওজন বহন করা যাবে না (হাতেও না, মাথায়ও না), পানি তোলা যাবে না, ঘাড় বাঁকা করে দীর্ঘ সময় কাজ করা যাবে না (ড্রাইভিং, ড্রিল মেশিনে কাজ করা, সেলাই করা, নিচু টেবিলে লেখা, ছবি আঁকা), বাটনা করা, কুলা দিয়ে ঝাড়া, দা-কোদাল-কুঠার-খন্তা প্রভৃতি দিয়ে কোপাকুপি করা, টিউবওয়েল চাপা নিষেধ। কম্পিউটারের মনিটর, টেলিভিশন প্রভৃতি চোখের লেভেলে নিয়ে আসতে হবে। মাথায় পাতলা বালিশ দিয়ে ঘুমাতে হবে। ম্যাসাজ করানো যাবে না, তবে গরম পানির সেঁক বেশ উপকারী। ব্যথা কমে গেলে ঘাড়ের ব্যায়ামে সুফল পাওয়া যায়। এসবের পাশাপাশি চলাফেরার সময়ে ঘাড়ে একটি কলার পরতে হবে ও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে। আর এ ধরনের চিকিৎসায় কাজ না হলে ঘাড়ে অপারেশন করে নার্ভের চাপ কমিয়ে দিলে অত্যন্ত সুফল পাওয়া যায়।
সুদীপ্ত কুমার মুখার্জি
জুনিয়র কনসালট্যান্ট (নিউরোসার্জারি)
শহীদ শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাতাল, খুলনা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

কোলোরেকটাল ক্যানসার

খাদ্যনালির নিচের দিকের অংশ বৃহদান্ত্র ও মলাশয়। এ অংশটুকুর ক্যানসারকে ইংরেজি পরিভাষায় কোলোরেকটাল ক্যানসার বলা হয়। এই ক্যানসার পৃথিবীতে পুরুষদের যত ধরনের ক্যানসার হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান এবং নারীদের যত ধরনের ক্যানসার হয় তার মধ্যে তৃতীয় স্থানের অধিকারী। আমাদের দেশে এই ক্যানসারের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান যত দূর সম্ভব জানা যায়নি।
কোলোরেকটাল ক্যানসার কেন হয়
বহুবিধ কারণে মানুষের শরীরে এই ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব হয়। কোলোনের এডিনোমেটাস পলিপ, আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ভুগলে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু ক্রোমোসোমাল জিনের মিউটেশন জন্মগতভাবে প্রাপ্ত হয়। যেমন, বংশগত পলিপোসিস কোলাই, লিংক সিনড্রোম, বংশগত নন-পলিপোসিস কোলন ক্যানসার সিনড্রোম। পারিপার্শ্বিক কিছু উপাদানও এই কোলোরেকটাল ক্যানসার প্রাদুর্ভাবে সহযোগিতা করে। যেমন, লাল মাংস (গরু ও খাসি), ঝলসানো মাংস ও প্রসেস করা মাংস বেশি খেলে কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিস আছে ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি আছে, তাদেরও কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই ক্যানসারের উপসর্গ কী কী
এই ক্যানসারের উপসর্গ আক্রান্ত স্থানের ওপরে নির্ভর করে। ডান দিকের কোলন ক্যানসার হলে সে রোগী রক্তস্বল্পতার বিভিন্ন উপসর্গ—যেমন ক্ষুধামান্দ্য, বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, মাথা ঘোরানো, কানে শব্দ হওয়া ও ওজন কমে যাবে। বাঁ দিকের কোলন ও রেকটামে ক্যানসার হলে মলের সঙ্গে তাজা রক্ত পড়বে, মলের আকৃতিতে পরিবর্তন হবে, অনেক সময় কোলনে অবস্ট্রাকশন হবে।
এই ক্যানসারের চিকিৎসা কী
যেকোনো ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সে ক্যানসার আরোগ্য করা যায়। কোলন ক্যানসার যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে, তবে ক্যানসারকে কিউরেটিভ সার্জারি করে দিলে রোগী আরোগ্য হয়ে যাবে। আর যদি ক্যানসার শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে থাকে, তবে প্রাথমিক টিউমারকে পালেয়োটিভ সার্জারি করে দিতে হবে। পরে কেমোথেরাপি নিতে হবে। কেমোথেরাপির সাহায্যে ক্যানসার রোগীর আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন কিছু দামি কেমোথেরাপি ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে, যেমন—মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এই ওষুধগুলো অন্য কেমোথেরাপির সঙ্গে ব্যবহার করলে রোগীর আয়ুষ্কাল অনেক বেড়ে যায়।
পরিশেষে কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করার জন্য যেমন লাল মাংস না খাওয়ার জন্য, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোলেস্টেরল কম রাখার জন্য চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার, শাকসবজি, তাজা ফলমূল বেশি পরিমাণে খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগ প্রতিরোধ রোগ পরিচর্যার চেয়ে ভালো। তাই মলে তাজা রক্ত দেখা দিলে গ্যাস্ট্রো-অ্যান্টারোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
সুসেন কুমার সাহা
অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

যেমন বাড়ছে ডায়াবেটিস, তেমনি বাড়ছে কিডনি রোগ, তাই…

সম্প্রতি আমেরিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ বাড়ছে।
ডায়াবেটিস আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ৪০ শতাংশের হচ্ছে কিডনি রোগ। এই জটিলতাটি গুরুতর তো বটেই, এর সঙ্গে হূদ্যন্ত্র ও রক্তনালি রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
ডায়াবেটিক কিডনি রোগ থেকে ক্রমে হয় প্রান্তিক ধাপের কিডনি রোগ, যখন রোগীকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস বা ক্ষেত্রভেদে ট্রান্সপ্লাট করে বাঁচাতে হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দেখলেন, ১৯৮৮ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ডায়াবেটিক কিডনি রোগ বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। আর যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীও বাড়ছে, তাই ডায়াবেটিক কিডনি রোগীও বাড়ছে। এমন একটি চিত্র অন্যান্য দেশেও পাওয়া সম্ভব। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের গবেষণার বিষয় এটি। ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার পরও এ চিত্রটির তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না। গত দুই দশকে এত উন্নত চিকিৎসার পরও এমন চিত্রটি আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না বিজ্ঞানীদের কাছে। অনেক বেশি ডায়াবেটিক রোগী রক্তের সুগার কমাতে এবং কোলস্টেরল কমাতে ওষুধ নিচ্ছেন এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমাতে রেনিন-এনজিওটেনসিন-এলডোস্টেরোন সিসটেমরোধক ওষুধ নিচ্ছেন, যা কিডনিরও সুরক্ষা করে বলে বিশ্বাস।
অন্তত বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভালো ফলও পাওয়া যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, রক্তের গ্লুকোজ, রক্তচাপ ও ক্ষতিকর কোলস্টেরল এলডিএলের গড় মান সবই কমেছে ডায়াবেটিক রোগীদের, এমন ওষুধ খাওয়ার পর। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে কিডনি রোগের প্রভাব যে কমেছে তা নয়। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক সহ-অধ্যাপক আযান এইচ ডি বোয়ের বলেন, ‘আমি আশা করেছিলাম, এমন পন্থা অবলম্বন করে ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে কিডনি রোগ কমবে, কিন্তু তা তো হলো না। তাই আমাদের অন্য উপায় খুঁজতে হবে। হয়তো ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে বা নতুন উপায়ে ডায়াবেটিক কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে।’
ডায়াবেটিস চিকিৎসা এবং
ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসার পরও ডায়াবেটিক কিডনি রোগের ঘটনা কেন দমানো যাচ্ছে না তা গবেষকদের ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হয়তো বা এমন হচ্ছে যে ডায়াবেটিসের সুচিকিৎসার জন্য কিডনির স্বাস্থ্য বজায় থাকছে আরও দীর্ঘকাল মাত্র, বিলম্বিত হচ্ছে কিডনি রোগ, জীবনের প্রান্তসীমা পর্যন্ত… বলেন পিটাসবার্গ গ্র্যাজুয়েট স্থল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ট্রেভর জে অর্চার্ড। আগে চিকিৎসকদের বিশ্বাস ছিল ডায়াবেটিস নিয়ে যে লোক ২৫ বছরের বেশি দিন বেঁচে কিডনি রোগে আক্রান্ত হননি, তাঁর আর কিডনি রোগ হবে না। কিন্তু সে ধারণা পালটেছে, হয়তো ২০-৩০ বছর পর্যন্ত এভাবে কিডনি রোগ ঠেকানো গেল, কিন্তু এরপর বাড়ছে কিডনি রোগ, মনে হতো আগে আর সে রোগ হবেই না।
তবে এত বছর কিডনি রোগ ঠেকানো গেল কীভাবে? রক্তের গ্লুকোজের সুনিয়ন্ত্রণ, রক্তচাপের সুনিয়ন্ত্রণ ও এসিই রোধ আরও ভালো হওয়ার জন্যই এমন হয়েছে, বলেন অধ্যাপক অর্চার্ড।
গবেষণার সময় বিজ্ঞানীরা কিডনি রোগের দুটো সূচক পরীক্ষা করে দেখেছেন, মূত্রে আছে এলবুমিন ও জিএফআর। জিএফআর দিয়ে বোঝা যায় রক্ত থেকে বর্জ্য কিডনি কত দ্রুত সরাতে পারে। এগুলো হলো কিডনি রোগের চিহ্ন ও সূচক।
দুই দশক কাল পর্যালোচনা করে ডি বোয়ের দেখলেন, মূত্রে প্রোটিন একটু কমেছে, কিন্তু জিএফআর বা কিডনি ফ্যাংশনের অবনতি হয়েছে।
হয়তো ডায়াবেটিসের উন্নত চিকিৎসায় মূত্রে প্রোটিনের পরিমাণ কমেছে কিন্তু জিএফআরের তেমন উন্নতি হয়নি।
জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন-এ সম্প্রতি প্রকাশিত এ নিবন্ধে যেসব ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তা আরও ব্যাপকভাবে গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস,
বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক,
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

ওজন কমাতে জেনে নিন

২০ কেজি ওজন কমাতে সফল হলেন অতি পরিচিত টিভি অভিনেত্রী, মডেল, নৃত্যশিল্পি সাদিয়া ইসলাম মৌ। স্বামী সফল অভিনেতা সবার প্রিয় জাহীদ হাসান। তাদের দুই সন্তান, পুষ্পিতা ও জারীফ। বগুড়ার মেয়ে মৌ, সিরাজগঞ্জের ছেলে জাহীদ হাসান। বিয়ের পর থেকে মৌ’র একটু একটু করে ওজন বাড়তে থাকে এবং ২ সন্তানের জননী হবার পর মৌ আর আদর্শ ওজনে থাকতে পারেনি। যেটা সব মায়ের-ই হয়ে থাকে। পূরো গর্ভকালীন সময়ে একজন মায়ের ১২-১৫ কেজি পর্যন্ত ওজন বেড়ে যায়। এবং প্রসবের পর থেকে সে যদি তার সঠিক খাদ্য তালিকা বেছে নিতে পারে, তবে সে তার সদ্যজাত সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানের পাশাপাশি নিজের অতিরিক্ত ওজনও কমাতে সক্ষম হবেন।
মৌ’র ২ সন্তান, পুষ্পিতা ও জায়িফ হবার পর থেকে ওজন বাড়তে থাকে। সে অনুভব করে তার পায়ে ব্যথা। তখনই সে বুঝেন অতিরিক্ত ওজন তার পায়ের ব্যথার অন্যতম কারণ। সে সিদ্ধান্ত নেয় ওজন কমাবার। অতিরিক্ত ওজনের কারণে শুধু পায়ের ব্যথা কেন?
ফুড রিলেটেড ক্রনিক ডিজিজ গুলো হলো:
(১) ডায়াবেটিস
(২) উচ্চরক্তচাপ
(৩) ডিসলিপেডিমিয়া:
(ক) রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য
(খ) রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইডের আধিক্য।
(৪) ফ্যাটি লিভার
(৫) হূদরোগের ঝুকি বেড়ে যাওয়া
(৬) পায়ের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা, কোমড়ের ব্যথা।
(৭) মহিলাদের মাসিকের সমস্যা
(৮) ক্যান্সার বিশেষ করে মহিলাদের ব্রেষ্ট ক্যান্সার এর জন্য ওবেসিটি একটি কারণ
(৯) দাম্পত্য সমস্যা
(১০) অতিরিক্ত ওজন মহিলাদের বন্ধ্যাত্ব ও শ্বাসকষ্টের অন্যতম কারণ
(১১) শরীরে ফাটা দাগ এবং অতিরিক্ত ওজন একজন নারী অথবা পুরুষের বাহ্যিক সৌন্দ্যকে নষ্ট করে। আত্ববিশ্বাস কমিয়ে, মানষিক চাপ বৃদ্ধি করে।
মৌ যেভাবে ওজন কমালেন:
(১) ওয়েট রিডিউসিং ডায়েট চার্ট
(২) হাঁটা।
এই দুই পদ্ধতি ছাড়া কোন কিছুই করতে হয়নি তাকে। তবে হ্যাঁ তার ছিলো অদম্য ইচ্ছা শক্তি, ইচ্ছা শক্তি ছাড়া যে কোন পদ্ধতি অকার্যকর। ওজন কমাতে গিয়ে তাকে যে ছকের মধ্যে পড়তে হয়েছে তা হলো:
(১) ১০০% ইচ্ছা শক্তি
(২) ধৈর্য্য
(৩) ১০০% ডায়েট চার্ট মেনে চলা
(৪) ডায়েট নির্দেশিকা মেনেচলা
(৫) প্রতিদিন নিয়ম করে ১ ঘন্টা হাঁটা।
(৬) নির্দিষ্ট সময় পর পর ফলো-আপ এ আসা।
এই চিকিত্সা সে সম্পন্ন করেছেন শমরিতা হাসপাতালের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগে। ওজন কমানোর জন্য প্রত্যেককে কিছু নিয়ম মানতে হবে:
(১) নিজের ইচ্ছা বা আগ্রহ
(২) রোগ প্রতিরোধের আগ্রহ
(৩) রোগের ভয়াবহ পরীনতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ
(৪) ওজন কমানোর সঠিক পদ্ধতি বেছে নেয়া
(৫) হাঁটার অভ্যাস আয়ত্ব করা
(৬) খাদ্যের পুষ্টিমূল্য সম্পর্কে সাধারণ ধারণা নেয়া
(৭) নিজের সৌন্দর্য বোধ সম্পর্কে সচেতন হওয়া, এসবগুলো আনুভূতি মৌ এর মধ্যে এসেছিল বলেই সে ওজন কমাতে পিছপা হননি।
প্রথম ৩ সপ্তাহে সে যে প্রাণপণ ভাবে ডায়েট চার্ট মেনে চলেছে তাতে তার ফল আসে, ৬ কেজি ওজন কমে যায়, এতে তার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায় এবং উত্সাহিত হন। অনেকে মনে করেন, প্রথম ১ মাসে ৫-৬ কেজি ওজন কমানো ক্ষতিকর। সঠিক ধারণাটি হলো শরীরে যখন কোন ব্যক্তির অতিরিক্ত ২০-৩০ কেজি ওজন থাকে তখন তাকে ভিএলসিডি এর মাধ্যমে প্রথম ১ মাসে ৫-৬ কেজি পর্যন্ত ওজন কমে যায়। এটি উক্ত ব্যক্তির জন্য মোটেই ক্ষতিকর নয়। তখন শরীরে সঞ্চিত শক্তি খরচ হয়ে তার স্বাভাবিক চলাফেরা, কাজকর্মে সাহায্যে করে।
মৌ’র ওজন কমানোর পিছনে যে শক্তি কাজ করেছে তা হলো:
(১) তার নিজস্ব ইচ্ছা শক্তি
(২) ওজন কমানোর খাদ্য তালিকা সে ১০০% মেনে চলেছে
(৩) তাকে বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ে সে নিয়মিত হেঁটেছে
(৪) আমার এড্যাভাইস এর বাইরে খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করেনি
(৫) লাঞ্চ ও ডিনার পার্টিতে উপস্থিত থেকেও পার্টি খাবার এড়িয়ে চলেছেন
(৬) নির্দিষ্ট খাদ্য তালিকা ও হাঁটার বাইরে তার ওজন কমানোর চিকিত্সার পিছনে অন্য কোন প্রোসিডিউর এর সাহায্য নিতে হয়নি
(৭) চিকিত্সা খরচ এত সহনীয় ছিলো যে, এটি যে কোন স্থূলো (অতিরিক্ত ওজন) ব্যক্তির জন্য সস্তিকর।
ওজন কমাতে সর্তকতা:প্রত্যেকের ওজন উচ্চতা, লিঙ্গ, বয়স, শারীরিক অবস্থা, পেশাগত অবস্থা, রক্তের বিভিন্ন উপাদানের তারতম্যের পার্থক্য, দির্ঘ মেয়াদী বিভিন্ন রোগ যেমন:
(১) ডায়াবেটিস
(২) উচ্চরক্তচাপ
(৩) হূদরোগ
(৪) কিডনি রোগ ইত্যাদি তারতম্যের ভিত্তিতে প্রত্যেকের খাদ্য তালিকা হবে ভিন্ন। একজনের খাদ্যতালিকা অন্যজনের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তানা হলে একটুখানি অসর্তকতা সারা জীবনের কান্না হতে পারে। ওজন কমাতে “ব্যালেন্স এবং ডায়েট” একথা ভূলে গেলে চলবে না।
আপনার খাদ্য তালিকায় ৬টি পুষ্টি উপাদানের সমন্বয় থাকতে হবে:
(১) প্রোটিন
(২) ফ্যাট
(৩) কার্বোহাইড্রেট
(৪) ভিটামিনস
(৫) মিরা রেনাস
(৬) পানি। এদের যে কোন একটি বাদ পড়ে গেলে শরীরে পুষ্টির অভাব হবে।
স্বল্প ব্যয়ে, কোন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া সর্বোচ্চ নিশ্চয়তায় ওজন কমানোর সূত্র হলো:
(১) নিজের ১০০% ইচ্ছা
(২) ধৈর্য্য
(৩) ওজন কমানোর খাদ্য পরিকল্পনা অর্থাত্ ডায়েট চার্ট
(৪) হাঁটা
(৫) খাদ্য নির্দেশনা।
উপরোক্ত ৫টি নিয়ম মেনে মৌ ২০ কেজি ওজন কমালেন, অন্য কোন কিছুই করেনি সে। মৌকে আমার অভিনন্দন। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। শুধু দরকার উপরোক্ত ৫টি পদক্ষেপ।
এস. এন শম্পা পুষ্টিবিদ শমরিতা হাসপাতাল পান্থপথ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes