Total Pageviews

Saturday, October 8, 2011

পায়ের জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম

ছবি ১ ছবি ২
প্রিয় পাঠক, সালাম ও শুভেচ্ছা|কেমন আছেন সবাই? যেমনি থাকুন,নিজের দিকে নজর দিন|নিয়মিত ব্যায়াম করুন|নিয়মিত ব্যায়ামই আপনাকে দিবে ভালো থাকার নিশ্চয়তা| আগের পোস্ট গুলোতে কার্ডিও ব্যায়াম, হাঁটার নিয়ম, ওয়েট ট্রেইনিং, অফিসের ব্যায়াম, পেটের ব্যয়াম, স্ট্রেচিং,পুশ আপ, ইত্যাদি ব্যায়ামের কথা বলা হয়েছে|আজকে পায়ের একটি জনপ্রিয় ও অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম-স্কোয়াট(Squat) সম্পর্কে লিখছি|
স্কোয়াট কি?
স্কোয়াট পায়ের একটি অন্যতম ভালো ব্যায়াম|শুধু কার্ডিও করলে ওজন কমে, ঠিক থাকে বা বাড়ে সত্য|কিন্তু আপনি যদি পায়ের নির্দিষ্ট মাসেল গুলোকে সুন্দর সেপ দিতে চান, তবে, এই ধরনের(স্কোয়াট এর মতো)ব্যায়াম গুলো করতে হবে| এটি একটি compound exercise, যা একের বেশি মাসেলের জন্য কাজ করে| পায়ের glutes(পায়ের উপরিভাগে পেছনের দিকের মাসেল), quads(থাই এর সামনের মাসেল) , hamstrings( থাইয়ের পেছনের মাসেল)এবং calves(হাঁটুর নিচে পেছনের মাসেল), লো ব্যাক(মেরুদন্ডের নিচের দিকে ) —এই সব মাসেলে এক সাথে কাজ করে, তাই এটি এত ভালো ব্যায়াম |
এটি একটি স্ট্রেন্থ ট্রেইনিং ব্যায়াম|কারণ এটি করার সময় শরীরের ওজনকে ওপরে ওঠাতে বা নামাতে শরীরের শক্তি ব্যবহার করা হয়|স্কোয়াট করতে হাঁটু ভেঙ্গে সামনের দিকে হাঁটু থেকে হিপ পর্যন্ত আনা হয়|এটি ওয়েট নিয়ে বা ওয়েট ছাড়া করা যায়|
স্কোয়াট ব্যায়ামে পায়ের মাসেলগুলোকে ব্যবহার করার পাশাপাশি কোমর, পেট, ব্যাক, ঘাড়, হাত ইত্যাদির জন্যও কিছু ব্যায়াম হয়|কারণ, এই গুলোকেও স্কোয়াট এর সময় কাজে লাগানো হয়| তাই স্কোয়াটকে বলা হয় পুরা বডির ব্যায়াম|
কি ভাবে স্কোয়াট করবেন?
  • প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান|কাঁধ,মাথা সোজা,হাত কাঁধ বরাবর সোজা রাখুন|
  • পা হিপের দুই পাশে রেখে, পা দুটো ফাঁকা করুন| খুব বেশিও না বা খুব কম না, আপনার সুবিধা মতো ফাঁক করুন(ছবি ১ এর মতো)|
  • পায়ের পাতা সোজা সামনের দিকে রাখুন| বা শরীরের বাইরের দিকে (সর্বোচ্চ ৩০ ডিগ্রী)সামান্য বাঁকানো থাকতে পারে (ছবি ১ এর মতো)|
  • এবং মাথা সোজা সামনের দিকে, দৃষ্টি সামনের দিকে থাকবে|
  • পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখবেন|
  • হাঁটু পায়ের পাতা বরাবর একদম সোজা থাকবে|
  • জোরে নিঃশ্বাস নিন|
  • ধীরে ধীরে হাঁটু সামনের দিকে হিপ সহ ভাঙ্গতে থাকুন ও মেঝের দিকে নামতে থাকুন| মনে করুন আপনি পা ফাঁক করে চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন(ছবি ২ এর মতো)|
  • এই সময়ে শরীর থাকবে উপরের দিকে একদম সোজা, বিশেষ করে মেরুদন্ড(ব্যাক) একদম সোজা থাকতেই হবে|
  • হাঁটু নামার সময় পায়ের পাতার বাইরে সামনের দিকে যাবে|
  • শরীর নামবে সর্বোচ্চ ৯০ কোন পর্যন্ত| শরীরের ও পায়ের মাঝের কোন হিসাব করুন|অথবা হিপ ও থাই থাকবে মেঝের সাথে সমান্তরাল|
  • শরীরের ব্যালান্স ঠিক রাখতে হাত দুটো সামনে শরীর থেকে বাইরের দিকে কাঁধ বরাবর রাখতে পারেন|(ছবি ২ এর মতো)|
  • এখন আপনার আপার বডি খুব সামান্য সামনের দিকে ঝুঁকে থাকবে(ছবি ২ এর মতো)এবং হিপ পেছনের দিকে নামবে|
  • এই অবস্থায় ১২-১৬ গুনুন|
  • এখন আপনি আপনার হাঁটু থেকে হিপ পর্যন্ত স্ট্রেচ অনুভব করবেন|
  • শ্বাস থাকবে স্বাভাবিক
  • এইবার আবার উপরে উঠুন বা আগের অবস্থায় আসুন|মনে করুন আপনি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছেন|
  • পুরো স্কোয়াট প্রক্রিয়াটি দেখুন ছবি ৩ এ|
    ছবি ৩
  • উঠার সময় জোরে দম ছাড়ুন|
  • উঠার সময়ও থাই এর মাসেলে চাপ অনুভব করবেন, বা থাই ব্যবহার করতে হবে, চেস্ট দিয়ে উঠবেন না|পায়ের পাতা, কাফ মাসেলেও সামান্য চাপ অনুভব হবে|পেট ভেতরের দিকে টানা থাকবে ও ব্যাক সোজা থাকবে|
  • সুবিধার জন্য পেছনে একটি চেয়ার দিয়ে নিতে পারেন,কিন্তু চেয়ারে বসবেন না|
  • হাঁটুতে বেশি চাপ দিবেন না,হাঁটু পায়ের পাতার চাইতে বাইরের দিকে যাবে না বা নিচের দিকে ঝুকবে না|
  • নামার বা উঠার সময় দুই পায়ের উপর সমান ভাবে চাপ পড়বে|
  • নামার বা উঠার সময় দুই হাঁটুই একই ভাবে থাকবে|
  • বেশি দ্রুত করতে যাবেন না, তাহলে মাসেল পুল হতে পারে|
  • স্কোয়াট শেষে hamstrings ও quadriceps মাসেল গুলোর জন্য হালকা ভাবে স্ট্রেচিং করুন |
নিচের ভিডিওটি দেখুন জানুন কিভাবে স্কোয়াট করবেন 

কিভাবে ও সপ্তাহে কতদিন স্কোয়াট করবেন?
  • এই ব্যায়াম করতে পারেন সপ্তাহে ২/৩ দিন|এক দিন পর পর|কারণ ওই মাসেল গুলোকে পরদিন রেস্ট দিলে ব্যায়াম ভালো ভাবে কাজ করে|
  • ১০-১৬ বার করবেন ১-৩ সেট বা ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ মতো ও আপনার জন্য যেমন দরকার তেমন করে|
  • সবচেয়ে ভালো ফল পেতে কমপক্ষে ৩ সেট করুন|
সাবধানতা:
  • হাঁটু পায়ের পাতা বরাবর থাকবে,হাঁটু উল্টা পাল্টা ভাবে ঘুরিয়ে করতে গেলে ইনজুরি হতে পারে|
  • স্কোয়াট অবস্থায় হিপ হাঁটুর নিচে যাবে না বা হাঁটু নিচের দিকে ঝুঁকবে না|
  • হাঁটু যেনো পায়ের পাতার পেছনে কখনই না যায়|
  • শরীর(বা মেরুদন্ড) সব সময় একদম সোজা থাকবে|
  • পায়ের পাতা মেঝের থেকে উপরে যাবে না|হিল মেঝেতে থাকবে|
  • প্রতিটি ব্যায়ামই করবেন আপনার ফিটনেস লেভেল,বয়স, শারীরিক সমস্যা(যেমন:হাঁটুর সমস্যা, ব্যাক পেইন, অতিরিক্ত ওজন)ইত্তাদির কথা বিবেচনা করে|
  • প্রথম প্রথম আপনি যতটুকু নামাতে পারেন, ততটুকু নামুন| তার বেশি করতে যাবেন না, ধীরে ধীরে বেশি নিচে নামতে চেষ্টা করুন|
  • যে কোনো নতুন ব্যায়াম শুরুর আগে ফিটনেস ট্রেইনার বা ডাক্তারের পরামর্শ মতো করবেন|
  • নিচে নামার ও উপরে উঠার সময় শরীরের ব্যালান্স যেনো ঠিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন|
  • আপনার ব্যায়াম যেনো সঠিক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন| সঠিক নিয়মে ব্যায়াম না করলে, মাসেল পুল হতে পারে এবং ব্যায়াম কাজ করবে না |
  • স্কোয়াট করার আগে অবশ্যই ভালো মতো শরীর ওয়ার্ম আপ করে নিতে হবে|
  • স্কোয়াট করার সময় ব্যায়াম ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, আপনার পশ্চার ঠিক আছে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন|
স্কোয়াট কেন করবেন?
  • পায়ের শক্তি বাড়ায়:পা আমাদের শরীরের সবচাইতে শক্তিশালী অঙ্গ, তাই এই ব্যায়াম করলে পায়ের শক্তি বাড়ে|
  • এই ব্যায়ামে হাঁটু ব্যবহার করায়, হাঁটুর শক্তি বাড়ে ও হাঁটুর ব্যথা কমায়
  • এতে পুরা শরীরের ব্যায়াম হয় ও পুরা শরীরের শক্তি বাড়ে বা ফিটনেস বাড়ে
  • এটি মাসেল সেপ করে, inner ও outer thighs, quads, hamstrings, calves, abs ও buttocks– এই সব মাসেলের শেপ সুন্দর হয়
  • পায়ের মাসেলের শক্তি বাড়ায়
  • পায়ের মাসেল বিল্ড করে:স্কোয়াট মাসেল বিল্ডিং বা বডি বিল্ডিংয়ের জন্যে ও পাওয়ার লিফটিং এর জন্যে করা যায়|বডি বিল্ডিঙে মাসেল তৈরিতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে|
  • শরীরের ব্যালান্স বাড়ে
  • হাঁড়ের শক্তিও বাড়ে|
  • হাঁড়ের ঘনত্ব বাড়ে ও হাঁড়ের ঘনত্ব সঠিক ভাবে ধরে রাখে
  • ফ্যাট বার্ন করে
  • ফ্রি হ্যান্ড স্কোয়াটে কোনো যন্ত্রপাতি লাগে না, তাই মেশিন ছাড়াও স্কোয়াট করার সুবিধা পাওয়া যায়|
  • Posture ঠিক করে
  • শরীরের flexibility বাড়ায়
  • ব্যাক পেইন কমায়|
  • পায়ের মাসেলের শক্তি, ব্যালান্স ও  flexibility বাড়ে| সর্বপরি পায়ের শক্তি বাড়ে|তাই দৈনন্দিন কাজ কর্মে, যেমন: নিচু হয়ে কিছু তুলতে সহজ হয়|
  • এটি পায়ের বা লোয়ার বডির জয়েন্টের টিস্যু গুলোকে বা লিগামেন্ট শক্তিশালী করে|
স্কোয়াটের প্রকারভেদ
স্কোয়াট অনেক রকম হতে পারে, যেমন: ফ্রি হ্যান্ড স্কোয়াট, বারবেল স্কোয়াট, ডাম্বেল স্কোয়াট, ওয়েট মেশিনের সাহায্যে স্কোয়াট(স্মিথ মেশিন, পাওয়ার কেজ ইত্যাদি),জাম্প স্কোয়াট,বল স্কোয়াট, চেয়ার স্কোয়াট ইত্যাদি|জনপ্রিয় কিছু স্কোয়াট হচ্ছে: অলিম্পিক স্কোয়াট, ফ্রন্ট স্কোয়াট, ওভারহেড স্কোয়াট ইত্যাদি|
স্কোয়াটকে বলা হয়—“The ultimate exercise for the lower body” বা “King of leg exercises”.
আপনি যদি শক্তিশালী lower body চান, বা পায়ের মাসেল গুলোকে শক্তিশালী ও ভালো শেপে আনতে চান, তবে এটি অবশ্যই আপনার ব্যায়ামের রুটিনে রাখুন| এটি একটি কষ্টকর ব্যায়াম,কিন্তু আপনি যদি এটি একটু কষ্ট করে চেষ্টা করেন, তবে কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাবেন|
এই পোস্টে শুধুই সাধারণ বা ফ্রি হ্যান্ড স্কোয়াট এর সম্পর্কে বলা হয়েছে|পরবর্তী পোস্টগুলোতে আরো অনেক রকম স্কোয়াট সম্পর্কে দেয়া হবে|
স্কোয়াট সম্পর্কে আপনার আরো কোনো অভিজ্ঞতা, বা মন্তব্য থাকলে তা লিখুন|
এই পোস্টটি ভালো লাগলে, সবার সাথে শেয়ার করুন এবং পোস্টটির রেটিং দিন |
ব্যায়ামের কিছু ভুল ধারণা জানতে ক্লিক করুন |
ব্যায়ামের কিছু  সাধারণ নিয়মাবলী জানতে ক্লিক করুন

উৎস: ফিটনেসবিডি

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes