Total Pageviews

Saturday, November 19, 2011

শ্বাসনালীতে কফ ও কাশির কারণ


সর্দি-জ্বর কমন কোল্ড বাংলাদেশের অত্যন্ত পরিচিত রোগ। আমাদের দেশে সম্ভবত এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যার বছরে অন্তত দু’একবার সর্দি জ্বর হয়নি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসপাড়ায় প্রায়ই হাঁচি দিতে থাকা অথবা নাকের পানি মুছতে থাকা লোকজন নজরে পড়ে। ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চিকিৎসক-প্রকৌশলী আমরা কেউ এ রোগ থেকে মুক্ত নই। ফ্লু ভাইরাস প্রধানত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাতাসের সাহায্যে ছড়ায়। অর্থাৎ ফ্লু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যদি উন্মুক্ত স্থানে হাঁচি দেয় তাহলে এক মিটার বা এক হাতের মধ্যে থাকা সুস্থ ব্যক্তিটিও আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি বাতাসে হাঁচি-কাশি না দেয় তাহলে তার থেকে ভাইরাস ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এ ভাইরাস সুস্থ মানুষের নাক দিয়ে ঢুকে শ্বাসনালীর উপরের অংশে অবস্থান করে এবং এক-পাঁচ দিন কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই এখানে অবস্থান করে। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি শ্বাসতন্ত্রের নিচের অংশে গিয়ে মারাত্মক লক্ষণ যেমন মিউমোনিয়া প্রকাশ করে।
সাধারণত সর্দিজ্বর বা ঠাণ্ডা লাগলে সবারই কমবেশি কিছুটা কাশি হয়। কখনো শুকনো, কখনো সামান্য কফও বের হয়। ফ্লু-জনিত বা গলায় সামান্য প্রদাহের কারণে কাশি তেমন অসুবিধার সৃষ্টি করে না, দু-চার দিন পর উপশম হয় এবং কাশির জন্য খুব বেশি ওষুধের দরকারও হয় না। কিন্তু কিছু রোগে কাশি একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দেখা দেয় এবং বেশ কয়েক দিন কাশি থাকে। কাশি রোগ নয়, কিন্তু রোগের উপসর্গ। এ জন্য সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ খেলে দীর্ঘমেয়াদী ভালো হয়ে যায়। শ্বাসনালীতে কফ ও কাশির কারণ সম্পর্কে সাপ্তাহিক-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত আলোচনা করছেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট ডা. মকছুদ আহমদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আরিফুর রহমান
সাপ্তাহিক : কফ কী?
ডা. মকছুদ আহমদ : কফ মানে Sputum। এটা শ্বাস নালীতে তৈরি এবং সেখান থেকে নিঃসৃত রস যা কাশির মাধ্যমে শ্বাসনালী থেকে বের হয়ে আসে তাকেই কফ বলা হয়।
কাশি হচ্ছে যে কোনো বাইরের জিনিস শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে শরীরের Protective mechanism এর ফলে শ্বাসনালী তা কফের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়- এই প্রক্রিয়াকে কাশি বলা হয়।
সাপ্তাহিক : কফ সাধারণত কেন হয়?
ডা. মকছুদ আহমদ : যে কোনো কারণে শ্বাসনালীতে ইনফেকশন বা Stimulation হলে কফের সৃষ্টি হয়। যেমন- Viral Infection, Bacterial infection ইত্যাদি।
সাপ্তহিক : কফ কত প্রকারের হতে পারে?
ডা. মকছুদ আহমদ : কফ সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে। যেমন ১. Dry Cough বা শ্লেষাহীন কফ  ২. Productive Cough বা শ্লেষযুক্ত কফ।
সাপ্তাহিক : বিভিন্ন প্রকারের কাশির লক্ষণগুলো কী কী?
ডা. মকছুদ আহমদ : ১. হাঁপানি বা  অ্যাজমার কাশির লক্ষণসমূহ হচ্ছে শেষ রাতে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বাড়ে।
সাধারণত শুকনা কাশি বা Dry Cough হয়।
মাঝে মাঝে জমাট বাঁধা শ্লেষ বের হয়ে আসে।
২. COPD বা শ্বাসনালীর স্থায়ী বাধাজনিত কাশিÑ
Pulmonary Emphysema- সাধারণত : শুকনা কাশি বা Dry Cough- শ্বাসকষ্ট-
ব্রংকার্স্টিস Productive বা শ্লেষযুক্ত কফ কাশি হতে পারে।
তাছাড়া এই প্রকারের কাশি সকাল বেলায় বেশি হয় ।
ব্রক্লিএকটেটিস এর ক্ষেত্রে হলুদ হলুদ- পরিমাণে অনেক বেশি দুর্গন্ধ কাশি বের হয়ে আসে
সাপ্তাহিক : কফ ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে কি কি জটিলতা তৈরি করতে পারে?
ডা. মকছুদ আহমদ : কফ ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হলে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. নিউমোনিয়া
২. ব্রক্লিএকটেটিস
৩. টিবি
ইত্যাদি শ্বাসনালীর রোগ হতে পারে ।
সাপ্তাহিক : Respiratory Tract infection কি কাশি তৈরি করে।
ডা. মকছুদ আহমদ : Respiratory Tract infection দুই ধরনের-
Upper respiratory tract infection & Lower respiratory tract infection
উভয় ধরনের ওহভবপঃরড়হ ই-কাশি তৈরি করে তবে নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা খজঞও বেশি কাশি ও কফ তৈরি করে।
সাপ্তাহিক : বিভিন্ন ধরনের কফের চিকিৎসাগুলো কী কী?
ডা. মকছুদ আহমদ : ১. বেশি বেশি কাশি কিন্তু কফ কম এই ক্ষেত্রে Cough suppressant বা Cough নিবারণ ওষুধ কার্যকরী।
২. কম কম কাশি কিন্তু বেশি বেশি কফ হলে Cough expectorant বা কফ উত্তেজনক ওষুধ কার্যকরী-
সাপ্তাহিক : নির্দিষ্ট ধরনের কফের জন্য নির্দিষ্ট ধরনের কফ সিরাপ সেবন করা কতটা জরুরি।
ডা. মকছুদ আহমদ : কফের চিকিৎসায় কফ সিরাপ জরুরি নয়- কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করাই শ্রেয়।
সাপ্তাহিক : কাশি বা কফ কি ছোয়াছে রোগ?
ডা. মকছুদ আহমদ : হ্যাঁ, কিছু কিছু কফ কাশি ছোয়াছে যেমন- Emphysema, Tuberculosis.
কিছু কিছু কাশি ছোয়াছে নয় যেমন-Asthma, COPD-র কাশি।
সাপ্তাহিক : কফের মাধ্যমে যাতে Infection ছড়াতে না পারে সে জন্য কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
ডা. মকছুদ আহমদ : কাশির সময় মুখে রুমাল, মাকস্ বা হাত ব্যবহার করুন।
* যেখানে সেখানে থুথু ফেলবেন না
* ব্যবহারের পর রুমাল কাপড় ও হাত পরিষ্কার করুন।
ছবি : কাজী তাইফুর
ডা. মকছুদ আহমদ
এমবিবিএস ডিটিসিডি (ডিইউ)
এফসিপিপি (ইউএসএ)
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী ঢাকা।
(হৃদরোগে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত-এনআইসিভিডি, ঢাকা)
চেম্বার :
বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা.) লি.
চ-১০৭/২, উত্তর বাড্ডা (প্রগতি সরণী)
ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮৫৭৮২৮-৩০
মোবাইল : ০১৭৩১-৩৯৮৯৯২
রোগি দেখার সময় :
বিকেল ৫টা-৮টা

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes