Total Pageviews

Saturday, September 17, 2011

কোলোরেকটাল ক্যানসার

খাদ্যনালির নিচের দিকের অংশ বৃহদান্ত্র ও মলাশয়। এ অংশটুকুর ক্যানসারকে ইংরেজি পরিভাষায় কোলোরেকটাল ক্যানসার বলা হয়। এই ক্যানসার পৃথিবীতে পুরুষদের যত ধরনের ক্যানসার হয় তার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান এবং নারীদের যত ধরনের ক্যানসার হয় তার মধ্যে তৃতীয় স্থানের অধিকারী। আমাদের দেশে এই ক্যানসারের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান যত দূর সম্ভব জানা যায়নি।
কোলোরেকটাল ক্যানসার কেন হয়
বহুবিধ কারণে মানুষের শরীরে এই ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব হয়। কোলোনের এডিনোমেটাস পলিপ, আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রনস ডিজিজ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ভুগলে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। কিছু ক্রোমোসোমাল জিনের মিউটেশন জন্মগতভাবে প্রাপ্ত হয়। যেমন, বংশগত পলিপোসিস কোলাই, লিংক সিনড্রোম, বংশগত নন-পলিপোসিস কোলন ক্যানসার সিনড্রোম। পারিপার্শ্বিক কিছু উপাদানও এই কোলোরেকটাল ক্যানসার প্রাদুর্ভাবে সহযোগিতা করে। যেমন, লাল মাংস (গরু ও খাসি), ঝলসানো মাংস ও প্রসেস করা মাংস বেশি খেলে কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাদের ডায়াবেটিস আছে ও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি আছে, তাদেরও কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এই ক্যানসারের উপসর্গ কী কী
এই ক্যানসারের উপসর্গ আক্রান্ত স্থানের ওপরে নির্ভর করে। ডান দিকের কোলন ক্যানসার হলে সে রোগী রক্তস্বল্পতার বিভিন্ন উপসর্গ—যেমন ক্ষুধামান্দ্য, বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, মাথা ঘোরানো, কানে শব্দ হওয়া ও ওজন কমে যাবে। বাঁ দিকের কোলন ও রেকটামে ক্যানসার হলে মলের সঙ্গে তাজা রক্ত পড়বে, মলের আকৃতিতে পরিবর্তন হবে, অনেক সময় কোলনে অবস্ট্রাকশন হবে।
এই ক্যানসারের চিকিৎসা কী
যেকোনো ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে সে ক্যানসার আরোগ্য করা যায়। কোলন ক্যানসার যদি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে, তবে ক্যানসারকে কিউরেটিভ সার্জারি করে দিলে রোগী আরোগ্য হয়ে যাবে। আর যদি ক্যানসার শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে থাকে, তবে প্রাথমিক টিউমারকে পালেয়োটিভ সার্জারি করে দিতে হবে। পরে কেমোথেরাপি নিতে হবে। কেমোথেরাপির সাহায্যে ক্যানসার রোগীর আয়ু বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন কিছু দামি কেমোথেরাপি ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে, যেমন—মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এই ওষুধগুলো অন্য কেমোথেরাপির সঙ্গে ব্যবহার করলে রোগীর আয়ুষ্কাল অনেক বেড়ে যায়।
পরিশেষে কোলোরেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করার জন্য যেমন লাল মাংস না খাওয়ার জন্য, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কোলেস্টেরল কম রাখার জন্য চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার, শাকসবজি, তাজা ফলমূল বেশি পরিমাণে খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগ প্রতিরোধ রোগ পরিচর্যার চেয়ে ভালো। তাই মলে তাজা রক্ত দেখা দিলে গ্যাস্ট্রো-অ্যান্টারোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
সুসেন কুমার সাহা
অধ্যাপক, গ্যাস্ট্রো এন্টারোলজি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো

0 মন্তব্য(সমূহ):

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by Free WordPress Themes | Bloggerized by Lasantha - Premium Blogger Themes | Facebook Themes